Trending

কর্মসংস্থান বাড়াতে প্রতিশ্রুতি আছে পদক্ষেপ নেই

নানা সংকটে থাকা দেশের অর্থনীতির অন্যতম সমস্যা বেকারত্ব। এই বেকারত্ব কমাতে কর্মসংস্থান বাড়ানো জরুরি। কিন্তু প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে কর্মসংস্থান বাড়ানোর দিকনির্দেশনা নেই। এক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় কিছু বক্তব্য থাকলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেই, যা যুবকদের হতাশ করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কর্মসংস্থান বাড়াতে কয়েকটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো হলো-বিনিয়োগ বাড়াতে পদক্ষেপ, যুবকদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ, কর্মসংস্থানসংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর বরাদ্দ বাড়ানো, যুবকদের পুঁজির সহজলভ্যতা এবং কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করা। কিন্তু বাজেটে এসবের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। 

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বাজেট-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, কর্মসংস্থানের জন্য ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ। এটি অত্যন্ত কম। এছাড়া পরিকল্পিত কর্মসূচির মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য উদ্যোগ নিতে হয়। স্বাভাবিক হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়বে। কিন্তু সিপিডির হিসাবে দেখা যায়, আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হলেও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে কর্মসংস্থান বাড়াতে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বাড়ানোসহ আরও কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। 

অর্থনীতিবিদের মতে, নানা সংকটে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নড়বড়ে। বর্তমানে অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে ক্ষত রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রাজস্ব আহরণে নিুগতি, ব্যয় ব্যবস্থাপনায় সংকট, ব্যাংকিং খাতের দুরবস্থা, রপ্তানিতে নিু প্রবৃদ্ধি, আমদানি নেতিবাচক, বিনিয়োগ স্থবির এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংকট অন্যতম। এ অবস্থায় মানুষের কর্মসংস্থান বাড়িয়ে ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। কিন্তু কর্মসংস্থানের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রে বাজেটে বরাদ্দ পর্যাপ্ত নেই। এর মধ্যে শিল্প এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় অন্যতম। এসব মন্ত্রণালয়ে আরও বেশি বরাদ্দ বাড়ানো জরুরি ছিল। এসব মন্ত্রণালয়ে অনেক চলমান প্রকল্প রয়েছে। এসব মন্ত্রণালয়ের আওতায় অনেক চলমান প্রকল্প রয়েছে। প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করার উদ্যোগ নেই। 

কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়, ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে সরকারের একটি অন্যতম অঙ্গীকার ছিল ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। সরকার এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, রিজার্ভ বাড়ানোর পাশাপাশি বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে রেমিট্যান্স বা প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে দক্ষ কর্মী পাঠাতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এছাড়াও বিদেশফেরত প্রবাসীদের ঋণ দিতে ৫শ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দের দিক থেকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ মোট বাজেটের মাত্র শূন্য দশমিক ০৬ শতাংশ এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ে শূন্য দশমিক ৩১ শতাংশ। এছাড়াও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ কিছুটা বাড়লেও শিল্প মন্ত্রণালয়ে কমেছে। 

ড. ফাহমিদা খাতুনের মতে, দেশে জনসংখ্যার বড় একটি অংশই যুবক। এসব যুবকের দক্ষতা উন্নয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, যুব বেকারত্ব বাড়ছে। তিনি বলেন, দেশের মোট বেকারের হার ৩ দশমিক ২ শতাংশ। কিন্তু যুব বেকারত্ব ১০ দশমিক ৬ শতাংশ। অর্থাৎ মোট বেকারের ৮০ শতাংশই যুবক। এসব যুবকের কর্মসংস্থান বা স্বনির্ভর করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া, শিক্ষার মান বাড়ানো এবং তাদের জন্য সহজে পুঁজির ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু বাজেটে সে ধরনের কোনো উদ্যোগ নেই। এসব বিবেচনায় বাজেটটি গতানুগতিক দেখতে পাচ্ছি। পরিচালন বাজেটের ক্ষেত্রে কিছু টেকনোলজি এবং যন্ত্রপাতি কেনার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এসব ব্যবহারের ক্ষেত্রে যুবকদের দক্ষতা বাড়ানো জরুরি।

তার মতে, শিক্ষার সঙ্গে বেকারত্বের অদ্ভুত একটা মিল রয়েছে। শিক্ষা বাড়লেই যে তারা চাকরি পাচ্ছে, তা নয়। দেশে বেকার যুবকদের মধ্যে যারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় বেশি সময় ব্যয় করেছে, তারাই বেকারত্বের শীর্ষে। এসব শিক্ষিত যুবক প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার সঙ্গে সমন্বয় করে চাকরি খুঁজতে গিয়ে দীর্ঘসময় বেকারত্বে থাকেন। যারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় ১১ বছর বা এর বেশি সময় কাটিয়েছেন, সেসব যুবক শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্ব বেশি। নারীদের মধ্যে যারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় ৯ বছরের বেশি কাটিয়েছেন, তাদের মধ্যেও বেকারত্বের হার উচ্চ। অপরদিকে যারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় ৭ বছরের কম সময় কাটিয়েছেন, তাদের মধ্যে বেকারত্ব খুবই কম। তারা যে কোনো ধরনের কর্মসংস্থানে ঢুকে পড়েছেন। এটা ভয়াবহ দিক। 

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নীতিমালা অনুযায়ী যারা সপ্তাহে কম হলেও এক ঘণ্টা কাজ করেন, তাদের কর্মে নিয়োজিত বলা হয়। সে অনুযায়ী বিআইডিএসের তথ্য বলছে, দেশে বেকারত্বের হার ৪ শতাংশের নিচে। তবে এটি দেশের প্রকৃত বেকারত্বের চিত্র নয়। শ্রম আইন ২০০৬ সালের ২(৬৫) ধারায় বলা হয়েছে, শ্রমিক হলো ওই ব্যক্তি, যিনি তার চাকরির শর্ত পালন করে কোনো প্রতিষ্ঠানে বা শিল্পে সরাসরি কাজে নিযুক্ত। মূলত শ্রমিকদের দুইভাগে ভাগ করা হয়। 

এগুলো হলো অনানুষ্ঠানিক (ইনফরমাল) যেমন: দোকানপাট, ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কৃষিকাজ ইত্যাদিকে বিবিএস চিহ্নিত করেছে। আর আনুষ্ঠানিক (ফরমাল) ক্ষেত্র হলো সরকারি অফিস-আদালত, বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান, সেবা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি। আবার মোট শ্রমিকের মধ্যে ৮৭ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বেকারত্ব বাড়ছে। আইএলওর তথ্য অনুসারেই বিশ্বের অন্যান্য দেশেও বেকারত্ব বাড়ছে। 
করোনাসহ বিভিন্ন কারণে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। জানতে চাইলে উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস-এর সাবেক মহাপরিচালক মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, আমরা জনশক্তি বোনাস পেয়েছি। এটি ইতিবাচক দিক। কিন্তু মূলকথা হলো, জনশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। ফলে নতুন কর্মসংস্থান দরকার। তিনি বলেন, জনশক্তিকে দক্ষ করে তুলতে হবে। এজন্য বাজেটে পদক্ষেপ থাকা জরুরি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto