Bangladesh

কর্মী পাঠায় অন্যরা, শত কোটি কামায় এমপিরা

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সিন্ডিকেটে নাম লিখিয়ে শত শত কোটি টাকার ব্যবসা করেছে কয়েকজন এমপির রিক্রুটিং এজেন্সি। অন্য ব্যবসায়ীর ‘কেনা’ কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র ফরেন ওয়ার্কার্স সেন্ট্রাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে (এফডব্লিউসিএমএস) অটো রোটেশনে আসে সিন্ডিকেটে থাকা রিক্রুটিং এজেন্সির নামে। তাদের মাধ্যমে ছাড়পত্র এবং ই-ভিসা করার বাধ্যবাধকতার সুযোগে এজেন্সিগুলো কর্মীপ্রতি লাখ দেড়েক টাকা নেয়।

এমপিদের রিক্রুটিং এজেন্সিও একই কায়দায় টাকা নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের নামে পাঠানো প্রতি কর্মীর জন্য ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা দিতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন চাহিদাপত্র আনা জনশক্তি ব্যবসায়ীরা।

এজেন্সিগুলো ফেনী-২ আসনের এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারীর স্নিগ্ধা ওভারসিজ লিমিটেড (আরএল-১৫৫১), ঢাকা-২০ আসনের এমপি বেনজীর আহমদের আহমদ ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-১১৪৬), ফেনী-৩ আসনের জাতীয় পার্টির এমপি লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড (আরএল-১৩২৭), কুমিল্লার আ হ ম মুস্তফা কামালের স্ত্রী কাশমেরী কামালের অরবিটালস এন্টারপ্রাইজ (আরএল-১১৩) এবং তাঁর মেয়ে নাফিজা কামালের অরবিটাল এন্টারপ্রাইজ (আরএল-১৪৫৭)।

বেনজীর আহমদের প্রতিষ্ঠানের নামে মালয়েশিয়া থেকে ৯ হাজার ৩৪৪ কর্মীর চাহিদাপত্র আসে। জনশক্তি কর্মসংস্থান এবং প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) ৮ হাজার ৫৯২ জনকে ছাড়পত্র দেয়। আহমদ ইন্টারন্যাশনালের নামে কর্মী গেছে ৮ হাজার ৩৩৬ জন।

নিজাম হাজারীর প্রতিষ্ঠানের নামে ৮ হাজার ৫৬৯ জন ও মাসুদ চৌধুরীর এজেন্সির নামে ৯ হাজার ৪৩১ কর্মীর নামে ছাড়পত্র হয়েছে। বিএমইটি সূত্র জানিয়েছে, অরবিটালস এন্টারপ্রাইজ ও অরবিটাল এন্টারপ্রাইজের নামে প্রায় ১১ হাজার কর্মীর ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। তবে এ প্রতিষ্ঠানগুলোর কত কর্মী যেতে পেরেছেন, তা জানতে পারেনি সমকাল।

নিজ নামে মালিকানা না থাকলেও ফেনী ও জামালপুরের দুই এমপির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো সিন্ডিকেটের রিক্রুটিং এজেন্সিতে। সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রকদের সমর্থন দিয়েছেন আরেক প্রভাবশালী এমপি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরসহ আওয়ামী লীগের আরও কয়েক নেতার এজেন্সি রয়েছে এ সিন্ডিকেটে।

প্রকাশ্য মালিকানা রয়েছে এমন চার এমপির এজেন্সির নামে প্রায় ৩২ হাজার কর্মী মালয়েশিয়া গেছেন। ব্যবসায়ীদের সূত্র জানিয়েছে, এসব কর্মীর কয়েকশ জনকে এজেন্সিগুলো পাঠিয়েছে। বাকিদের তাদের লাইসেন্স ব্যবহার করে অন্য ব্যবসায়ীরা পাঠিয়েছেন। স্বাস্থ্য পরীক্ষার নিবন্ধন, ছাড়পত্র, সরকারি বিভিন্ন ফি বাবদ কর্মীপ্রতি সাড়ে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে এজেন্সিগুলোর। বাকি ১ লাখ ৪২ হাজার হিসাবে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা নিয়েছে এজেন্সিগুলো। এর মধ্যে কত টাকা নিজেরা রেখেছে, কত সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রকদের দিয়েছে তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি জনশক্তি ব্যবসায়ীদের সূত্র।

তবে তাদের ভাষ্য, সিন্ডিকেটে ঢুকতে শুরুতে প্রতি দুই হাজার কর্মীর জন্য সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা দিতে হয়েছে। এতে ৩২ হাজার কর্মীর জন্য দিতে হয়েছে প্রায় ৯০ কোটি টাকা। বাকিটা পেয়েছে চার এমপির এজেন্সি।

গত ৩১ মে বন্ধ হয়েছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। ২০১৫ সালে ১০ বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সিকে কর্মী পাঠানোর কাজ দেয় মালয়েশিয়া। এসব এজেন্সি সিন্ডিকেট নামে পরিচিতি পায়। এতে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৮ সালে শ্রমবাজার বন্ধ হয়।

২০২১ সালের ডিসেম্বরে সমঝোতা স্মারক সইয়ের পর সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ছিল প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়। কিন্তু এজেন্সি বাছাইয়ের নামে মালয়েশিয়া সরকার চার বাংলাদেশি এমপির প্রতিষ্ঠানসহ ২৫ এজেন্সিকে কর্মী পাঠানোর কাজ দেয়। এগুলোও সিন্ডিকেট নামে পরিচিত। পরে যোগ হয় আরও ৭৫টি বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি। এগুলো সিন্ডিকেটে ঢুকতে তিন কোটি টাকা করে দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকার ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা খরচ নির্ধারণ করলেও এজেন্সিগুলো সাড়ে চার থেকে ছয় লাখ টাকা নিয়েছে কর্মীদের কাছ থেকে।

মালয়েশিয়া থেকে আসা ৫ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৩ চাহিদাপত্রের বিপরীতে গত ৩১ মে পর্যন্ত বিএমইটি ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৬৪২ জনকে ছাড়পত্র দেয়। তাদের মধ্যে ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৬৭২ জন মালয়েশিয়া গেছেন। জনশক্তি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বায়রার হিসাবে, এ কর্মীদের ৫ হাজার ৯৫৩ জন শুধু উড়োজাহাজের টিকিট না পাওয়ায় যেতে পারেননি। বাকিরা যেতে পারেননি নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান কালো তালিকাভুক্ত হওয়া, নিয়োগকারীর চূড়ান্ত সম্মতি না পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে।

ছাড়পত্র পেয়েও যেতে না পারা ১৭ হাজার কর্মীসহ বহু মানুষ এজেন্সি ও ‘আদম ব্যাপারী’দের টাকা দিয়েছেন। গত শুক্রবার তারা বিমানবন্দরে আহাজারি করেন। মানবাধিকার কমিশন গতকাল নির্দেশ দিয়েছে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। মন্ত্রিসভার বৈঠকেও উঠেছে মালয়েশিয়া প্রসঙ্গ।

শতাধিক কর্মী সমকালকে জানিয়েছেন, কেউ জমি বিক্রি করে, কেউ সুদে ঋণ নিয়ে টাকা দিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি করলেও তারা কীভাবে টাকা ফেরত পাবেন– নিশ্চিত নয়। কারণ, কর্মী ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত দিলেও চুক্তিপত্রে সর্বোচ্চ ৭৯ হাজার টাকা লেখা থাকে।
প্রবাসীকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘নিয়োগকারী দেশ চায় বলেই সিন্ডিকেট হয়েছে।’ সিন্ডিকেটে এমপির প্রতিষ্ঠান থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা জানি রিক্রুটিং এজেন্সি। এর মালিক এমপি, না কে– জানি না। এমপি চিনি না। তদন্তে দায়ী হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

১৪ দেশ থেকে কর্মী নেয় মালয়েশিয়া। তবে শুধু বাংলাদেশ থেকে এজেন্সি বাছাইয়ের নামে সিন্ডিকেট করে কর্মী নিয়োগ করে। এ প্রসঙ্গে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্মের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান সমকালকে বলেন, জনগণের স্বার্থ রক্ষা জনপ্রতিনিধির কাজ। তারাই যখন ক্ষমতার জোরে সিন্ডিকেটে জড়িয়ে পড়ে, তখন দায়ীদের বিচার করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।

জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলাম বলেন, সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রকরা কর্মীপ্রতি ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা নিয়েছে। মালয়েশিয়াতে চাহিদাপত্রের জন্য দেড় লাখ টাকা করে দিতে হয়েছে। এ কারণে কর্মীদের পাঁচ-ছয় লাখ টাকা খরচ হয়েছে।

জনশক্তি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র দেশটির এফডব্লিউসিএমএসের মাধ্যমে বাংলাদেশের এজেন্সির কাছে আসে। এফডব্লিউসিএমএস ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বেস্টিনেট নামে প্রতিষ্ঠানের। গত ৩১ মে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় মালয়েশিয়া বিদেশি কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে। বেস্টিনেটের প্রধান নির্বাহী দাতো আমিনুল ইসলাম বিন আবদুর নূর বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মালয়েশিয়ার নাগরিক। তিনি সিন্ডিকেটের মূল হোতা বলে পরিচিত। ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে মালয় সরকার চুক্তির মেয়াদ তিন বছর বৃদ্ধি করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
বেস্টিনেটের ঢাকা অফিস ক্যাথারসিস টাওয়ারে। রিক্রুটিং এজেন্সি ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের (আরএল-৫৪৯) মালিক রুহুল আমিন স্বপন সিন্ডিকেটের বাংলাদেশ অংশের নিয়ন্ত্রক বলে পরিচিতি। তবে তিনি বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।

মালয়েশিয়ার নিয়োগকারীরা বাংলাদেশ বাদে অন্য দেশ থেকে কর্মী নিয়োগে এফডব্লিউসিএমএস থেকে এজেন্সি বাছাই করতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অটো রোটেশনের মাধ্যমে এজেন্সি ঠিক করা হয় কোন এজেন্সি কর্মী পাঠাবে। ফলে যে ব্যবসায়ী চাহিদাপত্র আনেন, তিনি জিম্মি হয়ে যান সেই এজেন্সির কাছে। এই সুযোগই নিয়েছে এমপিদের এজেন্সিগুলো।

বায়রার সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, ভবিষ্যতে এ পদ্ধতি না থাকলে অভিবাসন ব্যয় ও অনিয়ম দুটোই কমবে।

মালয়েশিয়ায় থাকা এক রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক জানান, তিনি যেসব চাহিদাপত্র জোগাড় করেন, সেগুলো যায় সিন্ডিকেটে থাকা এজেন্সির নামে। এর কিছু চাহিদাপত্র নিজাম হাজারী, মাসুদ চৌধুরী ও বেনজীর আহমদের এজেন্সির নামেও যায়। তাদের প্রতিষ্ঠানের নামে কর্মীর ছাড়পত্র এবং শুরুর দিকে ই-ভিসা করতে হয়েছে। এ জন্য দেড় লাখ টাকা বাড়তি দিতে হয়েছে।

ব্যবসায়িক ক্ষতির শঙ্কায় এ ব্যবসায়ী নাম প্রকাশে রাজি হননি। আরও ১০ জন ব্যবসায়ী একই কথা জানিয়েছেন। মালয়েশিয়ায় থাকা আরেক জনশক্তি ব্যবসায়ী শফিক চৌধুরী, যার নিজের রিক্রুটিং এজেন্সি নেই, তিনি রাখঢাক ছাড়াই কথা বলেছেন। তিনি বলেন, মাসুদ চৌধুরী, বেনজীর আহমদ ও মুস্তফা কামালের এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী পাঠিয়েছি। প্রত্যেক কর্মীর জন্য দেড় লাখ টাকা গুনে দিয়েছি। টাকা কখনও তাদের হাতে দিয়েছি, কখনও ম্যানেজারের কাছে। তবে এর প্রমাণ কাগজ নেই।

এ অভিযোগ বিষয়ে মাসুদ চৌধুরীর বক্তব্য জানতে পারেনি। ব্যবসায়ীদের সূত্র জানিয়েছে, ছাড়পত্র নেওয়া সোয়া ৯ হাজার কর্মীর মধ্যে মাত্র শখানেককে পাঠিয়েছে এম ফাইভ। নিজাম হাজারীর বক্তব্যও জানতে পারেনি সমকাল।

টাকা নেওয়ার এ অভিযোগকে মিথ্যা আখ্যা দিয়েছেন বেনজীর আহমদ। তিনি বলেন, ‘অটো রোটেশনের কারণে অনেক চাহিদাপত্র আমার এজেন্সির নামে এসেছে। যাদের অথরাইজেশন ছিল, তারা আমার লাইসেন্সে কর্মী পাঠিয়েছে। এটাই নিয়ম। সবাই তা করেছে।’
অন্য ব্যবসায়ীর চাহিদাপত্রের কর্মীর ছাড়পত্র করে দিতে টাকা পাওয়ার প্রশ্নে বেনজীর আহমদ বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা নিয়েছি।’

রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য ৫০ হাজার টাকা সার্ভিস চার্জ ধরে সরকার ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করেছিল। তাহলে অন্যের কর্মীর ছাড়পত্র করে দিয়ে কী লাভ হলো– প্রশ্নে ঢাকার এই এমপি বলেন, সার্ভিস চার্জটুকুই পেয়েছি। কর্মীর কাছ থেকে কেউ বেশি নিয়ে থাকলে জানি না।

জাতিসংঘের চিঠির জবাব
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের দুর্দশা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম), ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও) এবং ইউনাইটেড নেশনস অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম (ইউএনওডিসি)। জাতিসংঘের চার বিশেষজ্ঞের চিঠির জবাবে জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন গত ২৯ মে জানিয়েছে, দুই দেশে লাইসেন্সহীন মধ্যস্বত্বভোগী জড়িত থাকায় অনেক সময় অভিবাসন ব্যয় বেড়েছে। প্রমাণিত অভিযোগের ভিত্তিতে বেশ কিছু প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ৫ হাজার ১৯০ বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট নিয়োগকর্তাদের প্রতিশ্রুত চাকরি পাননি। প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলাদেশ হাইকমিশন শ্রমিকদের চাহিদাপত্র সত্যায়নের আগে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন করত। মালয়েশিয়ার অনুরোধে তা আর করা হচ্ছে না।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor