USA

কলাম্বিয়া ভার্সিটির স্নাতক সমাপনীর মূল অনুষ্ঠান বাতিল, নতুন নতুন দেশে ছড়াচ্ছে ইসরাইল বিরোধী বিক্ষোভ

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধ ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভ চলছেই। প্রতিদিনই বিক্ষোভ নতুন নতুন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। বিক্ষোভের জেরে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সমাপনীর মূল অনুষ্ঠান বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র বেন চ্যাং সোমবার বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসে বড় পরিসরে সমাপনী অনুষ্ঠান আয়োজনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো, এমন আশঙ্কা অমূলক নয়। এমন পরিস্থিতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মতো আমরাও গভীরভাবে হতাশ।
চ্যাং আরও বলেন, অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি বিকল্প জায়গা খুঁজছিল। তবে শিক্ষার্থী, তাদের পরিবারের সদস্য, অতিথিরাসহ ৫০ হাজারের বেশি মানুষকে ধারণ করার মতো কোনো জায়গার ব্যবস্থা করা যায়নি। ফলে ১৫ মের স্নাতক সমাপনীর মূল অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি  ফ্রান্স, ব্রিটেন, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, ভারত, ইরাক, দক্ষিণ কোরিয়া, লেবানন, জর্ডান, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস,  বেলজিয়াম, পোলা- আয়ারল্যান্ড ও মেক্সিকোর শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও গাজায় ইসরাইলি হামলা বন্ধের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন। খবর আলজাজিরা, বিবিসি ও এএফপির।  
শিক্ষার্থীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন ইসরাইলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে বর্জন করে। গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকরের জন্যও ইসরাইলকে চাপ দেওয়ারও দাবি জানাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। 
ক্যাম্পাসগুলোতে ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানের ব্যাপারে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। কেউ স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানের জায়গা পরিবর্তন করছে, কেউ আয়োজনে পরিবর্তন আনছে, আবার কেউ কেউ অনুষ্ঠানই বাতিল করছে। সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ও তাদের প্রধান অনুষ্ঠান বাতিল করেছে।
সোমবার কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, কীভাবে স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা করা হবে, তা নিয়ে তারা ছাত্রনেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। ছোট পরিসরের অনুষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগই ম্যানহাটানের ক্যাম্পাসে আয়োজন করা হবে।
নিউইয়র্ক সিটির মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্টের সামনে বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনপন্থিরা। সোমবার হাই-প্রোফাইল ফ্যাশন ইভেন্ট মেট গালার অনুষ্ঠান চলাকালীন ফিলিস্তিনিদের পক্ষে র‌্যালি করেন বিক্ষুব্ধ জনতা।

এতে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে প্রেপ্তারও করেছে নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ। লাল কার্পেটে প্রিয় তারকাদের শো দেখতে শত শত দর্শক জড়ো হন মেট গালার প্রাঙ্গণে। সেসময় তাদের ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে স্লোগান দিতে শোনা যায়। পরে নিরাপত্তা ইস্যুতে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ।
শয়ে শয়ে আটকের পরও দাবি আদায়ে অনড় ছাত্ররা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সবকটি অঙ্গরাজ্যেই শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছেন। পুলিশি হামলা, ধড়পাকড় ও ছাত্রত্ব বাতিলের হুমকির পরও তারা ঘরে ফেরেননি। সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভকারীদের তাঁবুগুলো ভেঙে দেয় পুলিশ। তবে এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁবু ভেঙে দেওয়া এবং কমপক্ষে ২৫ জন ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করার এক দিনের মাথায় এমন ঘটনা ঘটল। সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুরোধে লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ ক্যাম্পাসে ঢোকে। এর পর ক্যাম্পাসে পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে বিক্ষোভকারীদের তাঁবুগুলো ভেঙে ফেলে তারা।
যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের বছরটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান বিক্ষোভের ঘটনা রাজনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। পুলিশ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে এখন পর্যন্ত ২ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে। রাজনৈতিক চাপের মুখে বাইডেন ক্যাম্পাসের বিক্ষোভ নিয়ে নীরবতা ভাঙেন। তিনি বলেন, মার্কিন নাগরিকদের বিক্ষোভ করার অধিকার আছে, তবে সহিংসতা ছড়ানোর অধিকার নেই।
ইতোমধ্যে বিক্ষোভ ঠেকাতে নিউইয়র্ক সিটির কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ ডাকা হয়। 
রবিবার অস্টিনের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২০০ জন ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারী বিক্ষোভ করেন। পুলিশের মোতায়েন করা ড্রোন বিক্ষোভকারীদের মাথার ওপর দিয়ে উড়ছিল। বক্তারা বিক্ষোভকারীদের শান্ত থাকার এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে না জড়ানোর পরামর্শ দেন। টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের আয়োজন করেছে প্যালেস্টাইন সলিডারিটি কমিটি নামের একটি সংগঠন। অ্যাডাম নামে এর এক সংগঠক বলেন, ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারছে যে আমেরিকান শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনকে সমর্থন করে।

তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের রক্তের বিনিময়ে কোনো চুক্তি আমরা আর মেনে নেব না। ইরভিনে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আল-জাজিরার প্রতিনিধি ফিল ল্যাভেল জানান, সেখানকার পরিস্থিতি অপেক্ষাকৃত শান্ত। বিক্ষোভকারী এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মধ্যে আলোচনা চলছে। পুলিশ বলেছে সপ্তাহান্তে নিউইয়র্ক এলাকায় ইহুদি উপাসনালয়গুলোতে অন্তত চারটি বোমা হামলার হুমকি এসেছে। তবে এসব হুমকির কোনোটিই বিশ্বাসযোগ্য বলে প্রমাণ মেলেনি।
এক্সে দেওয়া এক পোস্টে নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোচুল বলেন, ‘যারা আতঙ্ক আর ইহুদিবিদ্বেষের বীজ বপন করছে, তাদের আমরা সহ্য করব না। ঘৃণ্য কর্মকা-ের জন্য যারা দায়ী, তাদের জবাবদিহির মুখোমুখি করতে হবে। বিক্ষোভ চলছে এমন চারটি ক্যাম্পাসে চলতি সপ্তাহান্তে স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। এ ছাড়া নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কয়েকটি ক্যাম্পাসে চলতি মাসে ও জুনে এই আয়োজন হওয়ার কথা রয়েছে।

স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করার চেষ্টায় রয়েছে ক্যাম্পাসগুলো। অন্যদিকে বিক্ষোভকারীরাও এসব আয়োজন বর্জন করা, অনুষ্ঠানস্থল থেকে বেরিয়ে আসা বা ওয়াকআউট করাসহ বিভিন্ন বিকল্প কর্মসূচি নিয়ে ভাবছেন। কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তাল রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকরে ক্যাম্পাসে তাবু খাটিয়ে চলছে টানা বিক্ষোভ। অনেক ক্যাম্পাসে পুলিশি অভিযান চলছে। আটক করা হয়েছে বাংলাদেশিসহ প্রায় আড়াই হাজার বিক্ষোভকারীকে। গত মাসে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভের সূচনা।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে গুলির ঘটনাও। বিক্ষোভ চলাকালে এক অধ্যাপককে গ্রেপ্তার করার সময় তার পাঁজরের ৯টি হাড় ও একটি হাত ভেঙে দিয়েছে পুলিশ। ভুক্তভোগী শিক্ষক এক বিবৃতিতে এ কথা জানান। মিজৌরি অঙ্গরাজ্যের সেন্ট লুইসে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী শিক্ষক স্টিভ তামারি সাউদার্ন ইলিনয়েস ইউনিভার্সিটি এডওয়ার্ডসভিলের ইতিহাসের অধ্যাপক। আবার মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞও তিনি।

কলাম্বিয়া স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন নামের ছাত্রদের একটি গ্রুপ কলাম্বিয়া ভার্সিটির হ্যামিলটন হলের দখল নেয়। হলটি ১৯৬৮ সালের ছাত্র বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। ১৯৬০ এর দশকে ভিয়েতনাম যুদ্ধ ও নাগরিক অধিকার আন্দোলনের পর যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ইসরাইলবিরোধী এই আন্দোলন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d