কষ্টে স্বল্প আয়ের মানুষ, কাঁচা মরিচ-পেঁয়াজ-ডিম-সবজি সবই চড়া
একটু কম দামের আশায় পরপর তিন দোকান ঘুরলেন ফারুক হোসেন। কিন্তু সবখানেই বলতে গেলে একই দর। ১০০ টাকা কেজির নিচে পেঁয়াজ নেই। পরে অনেকটা বাধ্য হয়েই এই দরে হাফ কেজি পেঁয়াজ কিনলেন তিনি। একটি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের বেসরকারি চাকরিজীবী ফারুক নিয়মিত তুরাগ এলাকার নতুন বাজার থেকে বাজার করেন বলে জানালেন। জিগ্যেস করতেই বললেন, কয়েক দিন আগেও তো পেঁয়াজের দাম কম ছিল—একটু বলেই যোগ করলেন, কাঁচা মরিচ, সবজির দামও চড়া। কীভাবে যে সংসার চালাচ্ছি…।
আসলেই ভোক্তাদের জন্য বাজারে কোনো সুখবর নেই বললেই চলে। কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, ডিম, সবজির বাড়তি দরের সঙ্গে গত সপ্তাহের শেষে এসে যুক্ত হয়েছে সয়াবিন তেল। এতগুলো পণ্যের দাম একসঙ্গে বাড়ায় সংসার চালাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে স্বল্প আয়ের মানুষ। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, গত কয়েক দিনে টানা বৃষ্টির কারণে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কাঁচা মরিচ ও সবজির দাম বেড়েছে। এছাড়া, চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচের আমদানিও কম হচ্ছে। সবমিলিয়ে দাম বেড়েছে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর শান্তিনগর, তুরাগ এলাকার নতুন বাজার ও কাওরান বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজির মধ্যে করলা ৮০ থেকে ১২০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ থেকে ১০০ টাকা, আলু ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, বেগুন ১০০ থেকে ১২০ টাকা, পটোল, ঢ্যাঁড়শ ৬০ টাকা, বরবটি ৯০ থেকে ১০০ টাকা, ধুন্দল ও চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৫০ টাকা, গাজর ১০০ থেকে ১২০ টাকা ও টম্যাটো ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা এক সপ্তাহের ব্যবধানে সবজিভেদে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এছাড়া, গতকাল বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা, দেশি ও আমদানিকৃত পেঁয়াজ উভয়ই ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশে উৎপাদিত এসব কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচের ওপর ভিত্তি করে সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তর পণ্যগুলোর যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে। তাতে দেখা গেছে, যৌক্তিক মূল্য থেকে এসব পণ্য অনেক বেশি দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের যৌক্তিক মূল্য হওয়া উচিত ৬০ টাকা ২০ পয়সা। একইভাবে প্রতি কেজি বেগুনের যৌক্তিক মূল্য ৪৯ টাকা ৭৫ পয়সা, আলু ২৮ টাকা ৫৫ পয়সা, দেশি টমেটো ৪০ টকা ২০ পয়সা, দেশি পেঁয়াজ ৬৫ টাকা ৪০ পয়সা হওয়া উচিত। কিন্তু রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে এর কয়েক গুণ বেশি দামে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর বাজারে দাম বেড়েছে সয়াবিন তেলেরও। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলে দুই থেকে পাঁচ টাকা বেড়ে গতকাল তা ১৬৫ থেকে ১৬৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে খোলা সয়াবিন তেলে দুই টাকা বেড়ে তা ১৪৫ থেকে ১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে স্বল্প আয়ের মানুষের প্রোটিনের চাহিদা মেটানোর অন্যতম বড় উৎস ডিমের বাজারও গত কিছুদিন ধরে অস্থির। বর্তমানে বাজারে প্রতি হালি ফার্মের বাদামি রঙের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকায়। ডিমের বাজারের এই অস্থিরতার জন্য তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতিকে দায়ী করেছে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)।
এ প্রসঙ্গে সংগঠনের সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার বলেছেন, প্রান্তিক খামারিরা ডিম উৎপাদন করে, কিন্তু দাম নির্ধারণ করে ডিম ব্যবসায়ী সমিতিগুলো। তারা ক্রয়-বিক্রয় রসিদ ব্যবহার করে না, যার কারণে প্রতিদিন ডিমের দাম ওঠানামা করে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খামারি থেকে চার দিন পরপর ডিম ক্রয় করা হয়। খামারি চাইলে অন্য কারো কাছে ডিম বিক্রি করতে পারে না। একই পাইকারের কাছে ডিম বিক্রি করতে হয়। ফলে খামারিরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। বাজার অব্যবস্থাপনার এ সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার দাবি জানান তিনি। ডিমের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে সম্প্রতি ডিম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী, ডিম ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেছেন, ডিমের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে বিপণন সংশ্লিষ্ট লোকজন জড়িত। তারা একই ট্রাকে ডিম রেখে তিন বার হাত বদলের মাধ্যমে বিক্রি করে প্রতিটি ডিমের মূল্য গড়ে প্রায় ১ টাকা বাড়িয়ে দেয়। তিনি বলেন, পাকা ভাউচার ছাড়া ডিমের কোনো লেনদেন হবে না। এখন থেকে অভিযান পরিচালনাকালে পাকা ভাউচার না পাওয়া গেলে আইনানুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।