Bangladesh

কাজই হয়নি ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণ

প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর আগে প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়। তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৯৫ কোটি টাকা। প্রকল্পের জন্য কেনাকাটা হয়েছে। কর্মকর্তারা বিদেশ ভ্রমণও করেছেন। এরই মধ্যে সময় বাড়নো হয়েছে দুই দফা। ব্যয়ও বেড়ে হয়ে গেছে দ্বিগুণ। কিন্তু এখনো কাজই শুরু হয়নি। এমন অচলাবস্থা খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কেডিএ) নেওয়া তিনটি সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের।

জানতে চাইলে কেডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মোরতোজা আল মামুন বলেন, ‘করোনায় কাজ বন্ধ ছিল। সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়াতে নির্মাণসামগ্রীর দামও বেড়েছে। জমি অধিগ্রহণে খরচ তিনগুণ হয়েছে। এ কাজেই বড় একটা সময় গেছে। এসব কারণেই প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব ও খরচ বেড়েছে।’

কেডিএ সূত্রে জানা গেছে, তিনটি সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয় ২০১৬ সালে। প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ২২ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন হয়। প্রশাসনিক অনুমোদন পায় ওই বছরই ৮ নভেম্বর। উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৯৫ কোটি টাকা। মেয়াদ ছিল ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্ব হওয়ায় ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়নো হয়। কিন্তু তার আগেই প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়, যা ওই বছরের ১৬ নভেম্বর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সভায় অনুমোদন করা হয়। সুপারিশসহ সংশোধনের প্রস্তাবটি পাঠানো হয় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে।

অনুমোদনের পর সংশোধিত প্রকল্পে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭১৭ কোটি টাকা। মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর আগে প্রথম যখন প্রকল্পটি অনুমোদন পায় তখন প্রকল্পের কাজ দেখাশোনায় কেনা হয় ৫০ লাখ টাকার পিকআপ গাড়ি, রড পরীক্ষায় ১ কোটি ৩০ লাখ টাকায় কেনা হয় দুই হাজার কেএন ক্ষমতার ইউনিভার্সাল টেস্টিং মেশিন (ইউটিএম)। অভিজ্ঞতা অর্জনে কর্মকর্তারা ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন।

কেডিএ সূত্রে জানা গেছে, নগর ভবনের পেছনে একটি কক্ষে ইউটিএম বাক্সবন্দি রয়েছে। গাড়িটি ব্যবহৃত হচ্ছে অফিসের কাজে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রথম সড়কটি নিরালা আবাসিক এলাকার ১ নম্বর সড়ক থেকে কবরখানার ওপর দিয়ে সরাসরি রূপসা সিটি বাইপাসের লবণচরা থানার সামনের সড়কে যুক্ত হবে। এ সড়কটি ২ দশমিক ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ। হবে চার লেনের। দ্বিতীয় সড়কটি গল্লামারী মোড় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের লিনিয়ার পার্কের সামনে দিয়ে ময়ূরী সেতু অতিক্রম করে রায়েরমহল পর্যন্ত যাবে। সড়কটি ৪ দশমিক ৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ও দুই লেনের হবে। এ ছাড়া নগরীর দৌলতপুর কৃষি কলেজ (পুরাতন সাতক্ষীরা রোড) থেকে বাস্তুহারা কলোনি পর্যন্ত হবে আরেকটি সড়ক। এর দৈর্ঘ্য হবে ২ দশমিক ৫ কিলোমিটার এবং লেন হবে দুটি। তিনটি সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে হচ্ছে। এর মধ্যে নিরালা সড়কের জন্য ৭ দশমিক ৫৪ একর, গল্লামারী থেকে রায়েরমহলের জন্য ১৩ দশমিক ৮৮ একর, বাস্তুহারা থেকে বাইপাস সড়কের জন্য ১২ দশমিক ৫৭ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে।

সরেজমিনে প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কোথাও দৃশ্যমান কাজ শুরু হয়নি। লাল পতাকা উড়িয়ে অ্যালাইনমেন্ট দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন সেগুলোও নেই।

স্থানীয় বাসিন্দা এসএম কামাল হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, শহর সম্প্রসারিত হয়েছে। তাই সহজে কম সময়ে শহরে প্রবেশের জন্য সংযোগ সড়ক বাস্তবায়ন জরুরি। শোনা যায়, সংযোগ সড়ক হবে কিন্তু কাজই তো শুরু হয় না।’

কেডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মোরতোজা আল মামুন বলেন, জমি অধিগ্রহণ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। জমি বুঝে পেতে আর মাত্র তিন মাস সময় লাগতে পারে। তবে ইতিমধ্যে একটি সেতু নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।

গাড়ি ও ইউটিএম কেনা এবং ইউরোপ-আমেরিকা ভ্রমণ সম্পর্কে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ২০১৯ সালে মেশিনটি কেনা হয়েছে। সেটি সংরক্ষণে রয়েছে। এ ছাড়া ওই সময় তিনি প্রকল্প পরিচালকের (পিডি) দায়িত্বে ছিলেন না। সুতরাং বিদেশ সফর নিয়ে কিছু বলতে রাজি হননি।

খুলনার সুজন সম্পাদক কুদরত-ই-খুদা বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়নে দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা একদম নেই। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের গাফিলতি ও দুর্নীতি করার মানসিকতা কাজ করে। যার কারণে কেনাকাটা, বিদেশ সফরে অতি আগ্রহ দেখান কর্মকর্তারা। ফলে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হলে ব্যয় বেড়ে যায়, অর্থের অপচয় হয় ও জনগণের ভোগান্তি বাড়ে। ফলে এটি দুর্নীতি। তাই জনস্বার্থে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক হওয়া ও কাজে মনোযোগী হওয়া উচিত। সরকারের উচিত তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button