Hot

কাটবে কি দুর্যোগের কালো মেঘ

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ‘পদত্যাগ চিন্তা’কে ঘিরে রাজনীতির আকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা। কালো ঘন মেঘ জমতে থাকে চারদিকে। আশার কথা, শনিবার দুপুরে সে মেঘ হঠাৎ কাটতেও শুরু করে, যখন উপদেষ্টা পরিষদের অনির্ধারিত জরুরি বৈঠক শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের জানালেন, প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করছেন না। তিনি আমাদের সঙ্গে থাকছেন, থাকছেন অন্য উপদেষ্টারাও। অতঃপর চারদিকে যেন হঠাৎ স্বস্তির নিঃশ্বাস।

এরপর সবার নজর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার দিকে। কারণ সেখানে সন্ধ্যার পর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বসবে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি প্রতিনিধিদল। যথারীতি বড় প্রত্যাশার বৈঠকগুলো একে একে শেষ হয়। প্রতিটি দলের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের কাছে আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরা হয়। প্রতিটি দল থেকেই সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা দেওয়া হয় প্রধান উপদেষ্টার কাছে। বিএনপির পক্ষ থেকে দীর্ঘ লিখিত বক্তব্যের মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে দুটি দাবির কথা সুস্পষ্টভাবে বলা হয়। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাসহ তিন উপদেষ্টার পদত্যাগ।

জামায়াতে ইসলামী নির্বাচন ও সংস্কার প্রশ্নে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছে। এছাড়া তারা এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি জোর দিতে চায় জাতীয় ঐক্য ধরে রাখার ওপর। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) লিখিতভাবে পাঁচ দফা দাবির কথা তুলে ধরে। এর মধ্যে নির্বাচনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত সময়সীমা সমর্থন করলেও তারা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা জানতে চেয়েছে। এছাড়া নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে অবিলম্বে স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং যথাসময়ে জুলাই ঘোষণাপত্রের বাস্তবায়ন দেখতে চায় দলটি।

এদিকে সবশেষ রাত সাড়ে ১০টায় সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান উপদেষ্টা এক কথার মানুষ। তিনি তো ডিসেম্বর থেকে ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছেন। এটাই তো তার ঘোষণা। বিএনপির দাবির বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা কী বলেছেন জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, উনি উনাদের কথা শুনেছেন। যদিও এর আগে বিএনপির ব্রিফিংকালে সাংবাদিকদের বলা হয়, তাদের পেশ করা দাবির বিষয়ে সরকারের প্রেস সচিবের বক্তব্য শোনার পর তারা পরবর্তী সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন।

তবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন দলের বৈঠকের দাবি-দাওয়া এবং সরকারের তরফ থেকে প্রেস সচিবের ব্রিফিং পর্যালোচনা করলে এটিই প্রতীয়মান হয় যে, প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থানে অনড় রয়েছে। কেউ কারও অবস্থান থেকে চুল পরিমাণ সরে আসেনি। ফলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সৃষ্ট সংকটের আদৌ কোনো সমাধান হবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ-সংশয় থেকেই যাচ্ছে। যদিও আজ রোববারও প্রধান উপদেষ্টা আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এরপর স্বাভাবিকভাবে পুরো বিষয়টি নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদে ফের আলোচনা হতে পারে। সেখান থেকে শেষমেশ কী সিদ্ধান্ত আসে, সেটিই এখন দেখার বিষয়। আবার কোনো কোনো সূত্র বলছে, প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে তার সরকারের অবস্থান সুস্পষ্ট করতে পারেন।

এ অবস্থায় নতুন করে বিন্দু বিন্দু কালো মেঘ ফের জমতে শুরু করেছে রাজনীতির আকাশে। তবে দেশের বেশির ভাগ মানুষ চায়, জুলাই ঐক্য অটুট থাকুক। মতপার্থক্য থাকতে পারে, তবে সেটি যেন দ্বন্দ্ব-সংঘাতে রূপ না নেয়, গণ-অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর মধ্যে সাধারণ মানুষ কোনোরকম দ্বিধাবিভক্তি আর দেখতে চায় না। সবার চাওয়া সর্বদলীয় বৈঠকের মধ্য দিয়ে সবার জন্য, বিশেষ করে দেশের জন্য ভালো হয় এমন সিদ্ধান্তে সবাইকে একমত হতেই হবে। এছাড়া নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার প্রশ্নে সব পক্ষকে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে শান্তিপূর্ণভাবে একটা সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। এতকিছুর পরও সবার মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ভর করেছে। সবার প্রশ্ন-শেষ পর্যন্ত রাজনীতির আকাশে দেখা দেওয়া দুর্যোগের এই মেঘ কাটবে তো।

বিএনপি

ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন, ৩ উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি

নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সংস্কার অবিলম্বে সম্পন্ন করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দ্রুত রোডম্যাপ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলম এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের পদত্যাগ চেয়েছে দলটি। শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর এসব কথা সাংবাদিকদের জানান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, কোনো ওসিলায় নির্বাচন যত বিলম্ব করা হবে, জাতির কাছে আবার স্বৈরাচার পুনরায় ফিরে আসার ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে। এর দায়দায়িত্ব বর্তমান সরকার এবং তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ওপরে বর্তাবে।

সংস্কার ও বিচার প্রসঙ্গে বিএনপি নেতারা বলেছেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। আওয়ামী লীগের আমলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বিএনপি। এই বিচার প্রক্রিয়া কোনোভাবে অসম্পন্ন থেকে গেলে বিএনপি সরকারের দায়িত্বে গেলে বিচারের আওতায় এনে তা স্বাধীন বিচার বিভাগের মাধ্যমে পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করবে।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে ৪০ মিনিটের ওই বৈঠকে মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য-ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে যমুনায় যান তারা। তবে তাদের আলোচনার বিষয়বস্তু আগে জানানো হয়নি। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যা অনুমান করতে পেরেছিলেন তার ওপর ভিত্তি করে একটি লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার কাছে। তার ভিত্তিতে আলোচনা করেছেন।

বিএনপি কখনোই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বরং প্রথম দিন থেকেই এই সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছে বিএনপি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল দায়িত্ব হচ্ছে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে গণতন্ত্র উত্তরণের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা। যে কোনো ওসিলায় নির্বাচন যত বিলম্ব করা হবে, আমরা মনে করি জাতির কাছে আবার স্বৈরাচার পুনরায় ফিরে আসার ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে। এর দায়দায়িত্ব বর্তমান সরকার এবং তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ওপরে বর্তাবে।

মোশাররফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র উত্তরণের লক্ষ্যে বিএনপি প্রথম থেকেই একটি সুস্পষ্ট জাতীয় নির্বাচনি রোডম্যাপ দাবি করে আসছে। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মী পারিবারিক, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগতভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এজন্য আওয়ামী লীগের বিচারের দাবি সবচেয়ে বেশি বিএনপির। এই বিচার প্রক্রিয়া কোনোভাবে অসম্পন্ন থেকে গেলে বিএনপি সরকারের দায়িত্বে গেলে বিচারের আওতায় এনে তা স্বাধীন বিচার বিভাগের মাধ্যমে পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করবে।

ড. মঈন খান বলেন, যে তিনটি বিষয় নিয়ে কথা বলেছি- নির্বাচন, বিচার ও সংস্কার। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলেছি একটার সঙ্গে আরেকটার কোনো সম্পর্ক নেই। যদি দ্রুত নির্বাচন দেওয়া হয়, আজকে বাংলাদেশে যে নৈরাজ্য ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে এক ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে শান্তি, শৃঙ্খলা ও গণতন্ত্র ফিরে আসবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, যাদের কারণে এই সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে সেই নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং দুই ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগের কথা প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছি। তাদের বাদ দেওয়ার জন্য লিখিত বক্তব্য দিয়েছি, মুখেও বলেছি।

কোনো আশ্বাস পেয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেই আশ্বাস উনারা দেখবেন। আমরা আমাদের বক্তব্য দিয়েছি। নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন বলেন, সুনির্দিষ্টভাবে এই রকমের কোনো কথা হয়নি। উনি (প্রধান উপদেষ্টা) সুনির্দিষ্টভাবে জানাননি। আমরা আমাদের দাবি জানিয়েছি। হয়তো বা উনারা প্রেসের মাধ্যমে জানাবেন। এখনই কোনো প্রতিক্রিয়া জানানোর প্রয়োজন নেই। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে জানানোর পরে প্রতিক্রিয়া দেব।

অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ড. আলী রীয়াজ ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

জামায়াত

নির্বাচন-সংস্কারের রোডম্যাপ ঘোষণায় কাটবে অস্থিরতা

জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে, সেটা স্পষ্ট করা দরকার বলে মনে করে জামায়াতে ইসলামী। দলটি বলেছে, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় কখন, তার একটি রোডম্যাপ (পথনকশা) দরকার। পাশাপাশি সংস্কারেরও রোডম্যাপ প্রয়োজন। এ দুটি রোডম্যাপ ঘোষণা করলেই চলমান অস্থিরতা অনেকটাই কেটে যাবে। নির্বাচনের আগে সংস্কার ও বিচার দৃশ্যমান হতে হবে বলেও মনে করে দলটি। শনিবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর এসব কথা সাংবাদিকদের জানান দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াত আমির বলেন, বিএনপিও কিন্তু বারবার বলছে তারা সংস্কারের বিরোধী নয়, কিন্তু নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চান। সেটা তো আমরাও (জামায়াত) চাই। আমরা কোনো সময় বেঁধে দেইনি। যদি সংস্কার শেষ হয়ে যায়, তাহলে ফেব্রুয়ারির মধ্যভাগে নির্বাচন হতে পারে। আর সংস্কার এর ভেতরে শেষ না হয়, আরেকটু সময় লাগে এরপরই যেহেতু রোজা শুরু হয়ে যাবে, রোজার পরপরই নির্বাচন হতে হবে। তারপর এটাকে টেনে লম্বা করলে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। আমাদের দেশের আবহাওয়া এটা অ্যালাউ করবে না।

রাত সাড়ে ৮টা থেকে আধা ঘণ্টার ওই বৈঠকে ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে আরও ছিলেন-নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।

এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াত আমির বলেন, আমরা কিন্তু নিজেরাই সাক্ষাৎ চেয়েছি। প্রধান উপদেষ্টা গভীর মনোযোগের সঙ্গে কথা শুনেছেন। তিনি বিষয়টাকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। আরেক প্রশ্নের জবাবে শফিকুর রহমান বলেন, আমরা কারও কোনো পদত্যাগ চাইনি। আমরা যখন ওইরকম প্রয়োজন মনে করব তা জানাব। প্রধান উপদেষ্টা কি বলেছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে জামায়াত আমির বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন দেশ আমাদের সবার। তিনি অর্থবহ সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন দিতে চান। যেনতেন কোনো নির্বাচন দিতে চান না।

শফিকুর রহমান বলেন, আমরা বলেছি দুইটা বিষয় স্পষ্ট করা দরকার। নির্বাচনটা কখন হবে। আপনি (প্রধান উপদেষ্টা) যে সময়সীমা দিয়েছেন এর ভেতরেই জনগণের কোনো ধরনের বড় ভোগান্তি না হয়-এমন একটা স্বস্তিদায়ক সময়ে জাতীয় নির্বাচনটা হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। আর দুই নম্বরে আমরা বলেছি-নির্বাচনের আগে অবশ্যই সংস্কার ও বিচারের দৃশ্যমান কিছু প্রক্রিয়া জনগণের সামনে আসতে হবে। সংস্কার শেষ না করে যদি নির্বাচন হয় সেই নির্বাচনে জনগণ তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে না। আবার সব সংস্কার এই সরকারের করা সম্ভব হবে না। মাত্র পাঁচটা সুনির্দিষ্ট বিষয়ে তারা হাত দিয়েছেন। এতটুকু সন্তোষজনকভাবে নিষ্পত্তি হওয়া উচিত।

তিনি বলেন, এর পাশাপাশি এখানে জুলাই প্রক্লেমেশনের ব্যাপার আছে, এগুলো সংস্কারের সঙ্গে জড়িত। অনেক দলের দাবি-দাওয়ার মধ্যে কিছু ভিন্নতা আছে। এটা থাকবেই। গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হচ্ছে, আমার মত আমি প্রকাশ করব, আরেকজনের মতের প্রতি সম্মান দেখাব। আমি কারও মতকেই তুচ্ছজ্ঞান ও উপহাস করব না এবং কাউকে অপমানিত করব না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটা আমরা অনেকেই রক্ষা করে চলতে পারি না। কিন্তু এটা আমাদের পারা উচিত।

জামায়াত আমির বলেন, দেশকে ভালোবাসার জায়গা থেকে দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়ে আমরা যদি এগিয়ে আসি এবং যদি সংস্কার প্রক্রিয়াকে অর্থবহ সহযোগিতা করি তাহলে একটা অর্থবহ সংস্কারের মধ্যে একটা অর্থবহ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। আমরা সেই দিনের অপেক্ষায় আছি। এ বিষয়টাকে কেন্দ্র করে সমাজে যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল, আপাতদৃষ্টিতে তা কিছুটা কেটেছে। আমরা এর স্থায়ী নিষ্পত্তি চাই। আমরা মনে করি দুইটা রোডম্যাপ ঘোষণা করলেই তার অনেকটাই হয়ে যাবে। একটা হচ্ছে সংস্কারের রোডম্যাপ। আরেকটা হচ্ছে নির্বাচনের রোডম্যাপ। এই দুটোই অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ইতোমধ্যে কয়েকবার বলেছেন, নির্বাচন দিতে চান এ বছরের ডিসেম্বর থেকে শুরু করে আগামী বছরের জুনের মধ্যবর্তী কোনো এক সময়ে। কিন্তু তিনি সুনির্দিষ্ট কোনো রোডম্যাপ দেননি। কোনো মাস সপ্তাহ তিনি ঘোষণা করেননি। এটাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দাবি নির্বাচনের রোডম্যাপের ব্যাপারে আছে। আমাদেরও কিছু সুপারিশ ছিল। আমরা তার প্রতি সম্মান রেখেই বলেছিলাম, এ দায়িত্ব সবাই মিলেই তাকে দিয়েছিলাম। তিনি চেয়ে নেননি এবং দলের পক্ষ থেকে নির্বাচিত দায়িত্বশীল কোনো নেতা নন। বরং তিনি জনগণের ঐকমত্যের ভিত্তিতেই এই জায়গায় গুরুভার গ্রহণ করেছেন। তিনি তার সম্মান রেখে দেশের স্বার্থটা দেখবেন সেটা আমরা সব সময় বলে আসছি। এই ব্যাপারে বৈঠকে কথা বলেছি।

শফিকুর রহমান আরও বলেন, চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে দেশে একটা পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তনে এখন যারা সরকারে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের পরিচয় হচ্ছে তারা কোনো রাজনৈতিক দলকে বিলং করবেন না। এটা হওয়া উচিত। কিন্তু এখানে কিছু ব্যতিক্রম ঘটেছে। এটাও মাঝে-মধ্যে সমাজকে উদ্বিগ্ন করেছে। আবার স্বাভাবিকভাবেই এই বিপ্লবের দাবি ছিল যে অর্থবহ কিছু সংস্কার করতে হবে এবং যারা অপরাধী তাদের বিচার করতে হবে। এই সংস্কার ও বিচারের মধ্য দিয়েই একটা অর্থবহ নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে সমতল মাঠ থাকবে। নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করবেন তাদের কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হতে হবে না। এখানে পেশিশক্তি ও কালোটাকার প্রভাব চলবে না। সাড়ে ১৫ বছরে তিনটা নির্বাচনে মানুষ তার ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এবার তারা নিঃসংকোচে এই অধিকার প্রয়োগ করতে চায়। এটিই হচ্ছে জনগণের দাবি।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতের আমিরের সঙ্গে ছিলেন নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

এনসিপি

হাসিনা আমলের সব নির্বাচন অবৈধ ঘোষণাসহ ৫ দাবি

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) শেখ হাসিনার আমলে অনুষ্ঠিত সব নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণাসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে। শনিবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের একথা বলেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, আজকে এনসিপির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার একটি বৈঠক হয়েছে। অন্য সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় এনসিপির সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। আমরা তার প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছি। আমরা আবারও আহ্বান করেছি গণ-অভ্যুত্থানের যে প্রতিশ্রুতি রক্ষার উনি দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন সেই দায়িত্ব সম্পন্ন করেই যেন তিনি যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন।

তিনি আরও বলেন, মোটাদাগে আমাদের সঙ্গে মোট পাঁচটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্ব পেয়েছে জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের দাবি। সরকারের পক্ষ থেকে ৩০ দিন আমাদের বলা হয়েছিল। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যাতে জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করা হয় সে বিষয়ে আমরা আহ্বান জানিয়েছি। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, শহীদ পরিবার এবং আহতদের পুনর্বাসনের প্রক্রিয়াটি ধীরগতিতে আগাচ্ছে। সঞ্চয়পত্র এবং মাসিক যে ভাতা দেওয়ার কথা ছিল সেটা এখনো শুরু হয়নি। আর্থিক সহায়তাসহ পুনর্বাসনের দাবি দ্রুত সময়ে বাস্তবায়ন করার কথা বলা হয়েছে।

তৃতীয়ত, শেখ হাসিনার আমলে অনুষ্ঠিত জাতীয় এবং স্থানীয় নির্বাচনকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবৈধ ঘোষণা করতে বলেছি। কারণ একটা ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থায় নির্বাচন করে মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছিল। রাতের ভোট হয়েছে। ডামি প্রার্থীর ভোট। এগুলো নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন সময় প্রত্যাখ্যান করেছে। তাই আমরা মনে করি যে, সেই নির্বাচনগুলোকে আদালতে নিয়ে গিয়ে আবার বিশৃঙ্খলা তৈরি করা হচ্ছে। এজন্য আইনগতভাবেই যাতে অবৈধ ঘোষণা করা হয়।

চতুর্থ, নির্বাচন কমিশনের ওপরে আমরা আস্থা রাখতে পারছি না। তাই কমিশনকে যাতে পুনর্গঠন করে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দ্রুত আয়োজন করা হয়। এর ফলে নাগরিক সেবায় যে দুর্ভোগ হচ্ছে তা কমবে।

তিনি বলেন, আমরা আরও বলেছি জুলাই গণহত্যার বিচার এবং সংস্কার প্রক্রিয়া চলমান থাকবে এবং আইনসভার নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। এই তিনটির সমন্বিত একটি পরিকল্পনা বা রোডম্যাপ যাতে একত্রে সরকার ঘোষণা করে। এর মধ্য দিয়ে আমাদের যে প্রতিশ্রুতি গণহত্যার বিচার এবং সংস্কার এর মাধ্যমে আসলে বাস্তবায়ন হওয়া সম্ভব।

নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই মাসের মধ্যেই জুলাই সনদ আসবে বলে সরকারের তরফে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। আমরা বলেছি যে বিচারটা কবে শেষ হবে এবং কোন প্রক্রিয়ায় এগোবে। এছাড়া জাতীয় নির্বাচন যেটা ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে হওয়ার কথা সে বিষয়েও একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা জানাতে বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা সুনির্দিষ্টভাবে বলেছি, যে ছাত্র উপদেষ্টারা রয়েছেন তারা অভ্যুত্থানের প্রতিনিধি আকারে সরকারে গিয়েছেন। তারা সরকারকে বৈধতা দিয়েছেন। তাদের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দল বা এনসিপির কোনো সম্পর্ক নেই সেটা আমরা আজকে সংবাদ সম্মেলনে বলেছি। যেখানে জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে তারা কাজ করছেন সেখানে তাদের হেয় করা-এটা নিয়ে আমরা নিন্দা জানিয়েছি। আমাদের সঙ্গে তাদের জড়িয়ে ট্যাগ দেওয়াটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক।

প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ প্রসঙ্গে আলোচনার বিষয়ে তিনি বলেন আমরা বলেছি যে, তিনি যেন দায়িত্বে থেকে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করেন। কোনো রাজনৈতিক দল নয় বরং জনগণ এবং গণ-অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতার আহ্বানে তিনি দায়িত্বে এসেছেন। তাদের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ বিষয়টি যেন তিনি যে কোনো সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বিবেচনা করেন।

বর্তমান পরিস্থিতিতে উনি কাজ করতে পারছেন না। তাই দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চাচ্ছেন এ বিষয়গুলো তো বিভিন্নভাবে এসেছে। এর প্রেক্ষিতেই আজকের এই বৈঠক। ড. মুহাম্মদ ইউনূস হতাশা ব্যক্ত করেছেন কারণ যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে উনি দায়িত্বে এসেছেন এবং আমরা আন্দোলনের প্রতিনিধি হিসাবে তাকে আহ্বান করেছিলাম একটা নতুন বাংলাদেশ গঠনের জন্য। সে সময় শুধু আমরা নয়, অন্য সব রাজনৈতিক দল প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছিল যে একটা নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে। সেটা সংস্কারের মধ্য দিয়েই পাওয়া সম্ভব। সেই প্রতিশ্রুতি থেকে কোনো কোনো পক্ষ সরে আসছে বলে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মনে হচ্ছে। উনাকে চাপ প্রয়োগ করে বিভিন্ন দাবি আদায়ের চেষ্টাও চলছে। এর ফলে উনার আসলে কাজ করা সম্ভব নয়। সংস্কার এবং পরিবর্তন আনাও সম্ভব নয়। সেই জায়গা থেকে উনি তার হতাশা ব্যক্ত করেছেন। আমাদের জায়গা থেকে আমরা বলেছি উনি যেন জনগণের এবং অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতার প্রতি প্রতিশ্রুতিশীল হন।

প্রেস সচিব

নির্বাচন কোনোভাবেই ৩০ জুনের পরে যাবে না

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন কোনোভাবেই ২০২৬ সালের ৩০ জুনের পরে যাবে না। প্রধান উপদেষ্টা বারবার এটি নিশ্চিত করেছেন। শনিবারের বৈঠকেও রাজনৈতিক দলগুলোকে এটা বলেছেন তিনি। এছাড়া চলতি মাসেই জুলাই গণহত্যার বিচার কার্যক্রম শুরু হবে।

তিনটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে শনিবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় সাংবাদিকদের ব্রিফকালে এসব কথা বলেন প্রেস সচিব।

প্রসঙ্গত, চলমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনটি রাজনৈতিক দল শনিবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছে। এর মধ্যে রয়েছে-বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এই বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন শফিকুল আলম। এছাড়া আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে আজ বিকালে যমুনায় ডেকেছেন তিনি।

শফিকুল আলম বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে তিনটি বিষয় আলোচনা হয়েছে। এগুলো হলো-দেশের জাতীয় নির্বাচন, সংস্কার কার্যক্রম এবং জুলাই গণহত্যার বিচার। প্রধান উপদেষ্টাকে বিচার কাজ দ্রুত শুরুর করার অনুরোধ করেছেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, চলতি মাসেই এটি শুরু হবে এবং তিনি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবেন। এ সময় দলগুলো প্রধান উপদেষ্টাকে সমর্থন জানিয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের যে খবর বেরিয়েছে, এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টাকে পদত্যাগ না করার অনুরোধ জানিয়েছে। তার নেতৃত্বেই অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন হতে হবে এটিও জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছে। জামায়াত বলেছে, তারা প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময়ের মধ্যে নির্বাচনে আগ্রহী এবং এনসিপিও ঘোষিত সময়ে নির্বাচন চায়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d