Hot

কারও সাহায্য ছাড়া হাঁটার চেষ্টা খালেদার

বৃটেনের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার। ছেলেসহ স্বজনদের কাছে পেয়ে তিনি এখন মানসিকভাবেও উজ্জীবিত। তাকে নিয়মিত থেরাপি দেয়া হচ্ছে। কারও সাহায্য ছাড়া একা হাঁটার চেষ্টা করছেন। পুরো চিকিৎসা শুরুর আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে। কয়েকদিনে প্রয়োজনীয় প্রায় সব পরীক্ষা শেষ হয়েছে। ফলাফল হাতে পেতে কয়েকদিন সময় লাগবে। খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, থেরাপি দেয়ার পর তিনি একা হাঁটার চেষ্টা করছেন।  ছেলে তারেক রহমান, দুই পুত্রবধূ  জোবাইদা রহমান ও সৈয়দা শর্মিলা রহমান, নাতনিসহ স্বজনদের সান্নিধ্যে সময় কাটাচ্ছেন খালেদা জিয়া। ছেলে তারেক রহমান মা’কে হাসপাতালে সময় দিচ্ছেন। তিনি নিজেই বাসায় তৈরি করা খাবার নিয়ে যাচ্ছেন হাসপাতালে। দিনের প্রায় পুরো সময়ই তিনি হাসপাতালে মায়ের সঙ্গে থাকছেন। 

বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ আল মামুন মানবজমিনকে বলেন, ৮ই জানুয়ারি লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। শনিবার এবং রোববার বন্ধ থাকে। এজন্য এ দু’দিন কোনো পরীক্ষা হয়নি। সোমবার কিছু পরীক্ষা হয়েছে। আগামী দুই-তিনদিনের মধ্যে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা। এরপর লন্ডন ক্লিনিকের মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা বসে পরবর্তী চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। 

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন লন্ডনে সাংবাদিকদের জানান, বেগম জিয়া কারও সাহায্য ছাড়া একা হাঁটতে পারছেন। রোববার তিনি এই তথ্য জানান। ডা. জাহিদ জানান, চিকিৎসক প্যাট্রিক কেনেডি খালেদা জিয়াকে পর্যবেক্ষণ করছেন। তাকে ফিজিওথেরাপি দেয়া হচ্ছে।

ওদিকে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী জানান, লন্ডনের ডাক্তাররা বলেছেন- দেশে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা আন্তর্জাতিক মানের হয়েছে। তিনি বর্তমানে কারও সাহায্য ছাড়াই হাঁটতে পারছেন। 

ওদিকে খালেদা জিয়ার খোঁজ নিতে ক্লিনিকের সামনে প্রতিদিন ভিড় করছেন বিএনপি’র স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

উন্নত চিকিৎসার জন্য বৃটেনের উদ্দেশ্যে গত ৭ই জানুয়ারি রাতে এয়ার এম্বুলেন্সে ঢাকা ছাড়েন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কাতার আমীরের পাঠানো এয়ার এম্বুলেন্সে করে তিনি লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছান। সেখান থেকে সরাসরি লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হন। ঢাকা ছাড়ার দিনে গুলশানের বাসা থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত পৌঁছে দিতে দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ সড়কে অবস্থান নিয়ে বিপুল শুভেচ্ছা জানান। বিদেশ যাত্রার আগে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

৮ই জানুয়ারি সকালে হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছালে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান ছেলে তারেক রহমানসহ স্বজনরা। সেখানে তারেক রহমানের মা’কে জড়িয়ে ধরার আবেগঘন ছবি খবরের শিরোনাম হয়। তারেক রহমান বরাবরের মতো নিজে গাড়ি চালিয়ে খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নিয়ে যান। এর আগে ২০১৭ সালের জুলাইয়ে মা-ছেলের সর্বশেষ সাক্ষাৎ হয়েছিল। 

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি মামলায় সাজা দিয়ে খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়। ওদিনই বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তারেক রহমানকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০২০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার খালেদা জিয়াকে নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি দেয়। কিন্তু দুই শর্তের কারণে তিনি কার্যত বন্দি ছিলেন বাসায়। শুধু হাসপাতালে যেতে পারতেন। পরিবার এবং দলের পক্ষ থেকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার জন্য বার বার অনুমতি চাইলেও তাতে সাড়া দেয়নি আওয়ামী লীগ সরকার। দল এবং স্বজনরা বারবার আবেদন জানালেও তাতে কর্ণপাত করেনি ফ্যাসিস্ট সরকার। 

৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, আর্থ্রাইটিস, কিডনি, ডায়াবেটিস সহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। 

ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে বিভিন্ন সময়ে আইসিইউতে রেখে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে তাকে দীর্ঘ সময় চিকিৎসা নিতে হয়েছে। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button