Trending

কারখানা খোলার দাবিতে আন্দোলন: গ্রামীণ ফেব্রিকস, যানবাহনে আগুন দিলেন বিক্ষুব্ধ বেক্সিমকো শ্রমিকেরা

শ্রমিকদের দাবির মধ্যে রয়েছে বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়া, ব্যাংকিং ব্যবস্থা পুনরায় চালু করা, এলসি খোলা এবং বকেয়া পরিশোধ করা।

বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৬টি বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে বেক্সিমকোর একদল কর্মচারী ও শ্রমিক গ্রামীণ ফেব্রিকস নামক একটি কারখানায় আগুন দিয়েছেন। এছাড়া তারা মহাসড়ক অবরোধ করে একাধিক যানবাহনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন।

বুধবার (২২ জানুয়ারি) বিকেলে গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর এলাকায় চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়কে তারা বিক্ষোভ শুরু করেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।

এতে ছত্রভঙ্গ হয়ে শ্রমিকেরা সন্ধ্যায় গ্রামীণ ফেব্রিকস অ্যান্ড ফ্যাশনস লিমিটেড-এর ফটক ভেঙে ঢুকে আগুন ধরিয়ে দেন। ফায়ার সার্ভিস বর্তমানে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।

কাশিমপুর ফায়ার স্টেশনের ফায়ার ফাইটার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘গ্রামীণ ফেব্রিকস-এ আগুন লাগার খবর পেয়ে সারাবো ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেছে।’

শ্রমিক বিক্ষোভের ফলে সড়কে বিকেল থেকে রাত সাড়ে ৮টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ থাকে। 

গাজীপুর মহানগর পুলিশের একটি সূত্র জানায়, শ্রমিকেরা বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানসহ ৪–৫টি যানবাহনে আগুন দিয়েছেন। এ সময় তারা ১৫–২০টি যানবাহনের জানালার কাচ ভাঙচুর করেন।

সেনাবাহিনী ও শিল্প পুলিশ সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে শ্রমিকদের দুইপাশ থেকে ধাওয়া দিয়ে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

সূত্র আরও জানায়, পরে বেক্সিমকোর উত্তেজিত শ্রমিকেরা তেতুইবাড়ী এলাকার শেখ ফজিলাতুন্নেছা কেপিজে হাসপাতালের সামনে সড়কের পাশে অবস্থিত গ্রামীণ ফেব্রিকসের গেইট ভাঙচুর করেন। পৌনে ৭টার দিকে ভেতরে ঢুকে তারা কারখানাটির ভবনে আগুন ধরিয়ে দেন।

এর আগে গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২-এর পরিদর্শক রাজিব হোসেন বলেছিলেন, আন্দোলনকারীরা সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে আশপাশের কয়েকটি দোকানে হামলা ও ভাঙচুর চালান। ‘পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে।’

শ্রমিকদের দাবির মধ্যে রয়েছে বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়া, ব্যাংকিং ব্যবস্থা পুনরায় চালু করা, এলসি খোলা এবং বকেয়া পরিশোধ করা।

পুলিশ ও শ্রমিক সূত্রে জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাণিজ্য উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৬টি কারখানায় প্রায় ৪২ হাজার শ্রমিক কর্মরত ছিলেন।

গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা হারানোর পর পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর কয়েক মাস ধরে শ্রমিকদের বেতন নিয়মিত দেওয়া হচ্ছিল না।

বেতনের দাবিতে এরপর শ্রমিকেরা বারবার আন্দোলন করছিলেন। এর প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের জন্য ঋণ সহায়তা প্রদান করে।

তবে, ১৫ ডিসেম্বর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৬ কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর শ্রমিকেরা কয়েকদিন ধরে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন।

বুধবার বিকালে তারা চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়কে লাকড়ি ও আবর্জনায় আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন। এতে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয় এবং যাত্রী ও চালকেরা দুর্ভোগে পড়েন।

ঘটনাস্থলে পুলিশ, শিল্প পুলিশ ও সেনা সদস্যরা এসে শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু শ্রমিকেরা তাদের অনুরোধে রাজি হননি। এক পর্যায়ে উত্তেজিত কিছু শ্রমিক যানবাহন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও সড়কের পাশের দোকানে হামলা করেন।

এ সময় ছবি তুলতে গিয়ে গণমাধ্যম কর্মীরাও হামলার শিকার হন। হামলায় দীপ্ত টিভির গাজীপুর প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম, বাংলাভিশন টিভির চিত্রগ্রাহক আমির হোসেন রিয়েল ও প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকার কালিয়াকৈর প্রতিবেদক আবু সাঈদ আহত হয়েছেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button