Trending

কারিগরি শিক্ষা শেষেও বেকার থাকছে ৭৫ শতাংশ সনদধারী

কারিগরি শিক্ষার্থীদের যেসব যন্ত্রপাতির ব্যবহার শেখানো হচ্ছে, তা গত শতাব্দীর, কারিকুলাম ঢেলে সাজানোর পরামর্শ শিক্ষাবিদদের

খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ২০২৩ সালে কারিগরি শিক্ষা শেষ করেন আজিজুল হক। এর পর থেকেই চাকরির চেষ্টা করছেন। প্রায় দুই বছর ধরে চেষ্টা করেও চাকরি হয়নি এই ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিধারীর। আর্কিটেকচার অ্যান্ড ইনটেরিয়র টেকনোলজি বিষয়ে সনদধারী রবিউল ইসলামও গত এক বছর ধরে চাকরি পাচ্ছেন না। বিশ্বব্যাংকের এক জরিপে উঠে এসেছে, ‘বাংলাদেশে কারিগরি ডিগ্রি সম্পন্নের পর এক বছর পর্যন্ত বেকার থাকছেন ৭৫ শতাংশ পলিটেকনিক ডিগ্রিধারী। আর দুই বছর পর্যন্ত বেকার থাকেন ৩২ শতাংশ।’ 

বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) এক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ডিপ্লোমা প্রকৌশলীর ডিগ্রি নিয়ে চাকরিতে প্রবেশ করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭১ শতাংশ বেতন পাচ্ছে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে। দক্ষতার ঘাটতিকেই এসবের প্রধান কারণ বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরাসহ সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, দেশে কারিগরি শিক্ষায় অনুন্নত কারিকুলাম ও পুরোনো কোর্স আছে, যা চাকরির বাজারের সঙ্গে অসামঞ্জস্য। এছাড়া কারিগরি শিক্ষার্থীদের যেসব যন্ত্রপাতির ব্যবহার শেখানো হচ্ছে, তা গত শতাব্দীর। শিল্পকারখানা এসব যন্ত্রপাতির ব্যবহার বন্ধ করে নতুন প্রযুক্তি আনছে। শিল্পের উপযোগী আধুনিক জ্ঞান তৈরি না হওয়ায় নিয়োগদাতারা চাকরিপ্রার্থীদের ওপর সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। কারিগরি বিভিন্ন বিষয়ে বিদেশে চাহিদা থাকলেও শিক্ষার মান উন্নয়নে আশাতীত কোনো উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্টদের। কারিগরি শিক্ষার কারিকুলাম ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা।

সারা বিশ্বে কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হয় কারিগরি শিক্ষাকে। উন্নত অনেক দেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থীর হারও বেশি। কিন্তু বাংলাদেশে চাকরি না পেয়ে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন শিক্ষার্থীরা। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, দেশের সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোয় ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে মোট আসন ছিল ১ লাখ ৭১ হাজার ৫০০টি। এর বিপরীতে ভর্তি হয় ৬৮ হাজার ৭৮২ শিক্ষার্থী, যা বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন; অর্থাৎ ইনস্টিটিউটগুলোয় প্রায় ৬০ শতাংশ আসনই ঐ শিক্ষা বছরে ফাঁকা ছিল। বিগত পাঁচ বছরের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মোট শিক্ষার্থী ভর্তি হয় ৮১ হাজার ৭৬ জন। ঐ শিক্ষাবর্ষে আসন ফাঁকা ছিল ৫২ দশমিক ৮ শতাংশ। তার পরের শিক্ষাবর্ষে ৭৭ হাজার ২৭২ শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও ৫৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ ছিল শূন্য আসন। এছাড়া ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ছিল ৭৩ হাজার ২৭২ জন, ফাঁকা আসন ৫৮ দশমিক ৬২ শতাংশ; ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয় ৭১ হাজার ৫৫৩ শিক্ষার্থী, আর ফাঁকা পড়ে ছিল ৫৯ দশমিক ৪ শতাংশ আসন। এদিকে ২০১২ সালে সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, ২০২০ সালের মধ্যে কারিগরি শিক্ষার্থী হবে ২০ শতাংশ। বর্তমানে বলা হচ্ছে শিক্ষার্থীর হার ১৬ শতাংশ। তবে আন্তর্জাতিক কারিগরি শিক্ষার সংজ্ঞা ও ব্যানবেইসের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এটি মূলত ৯ শতাংশ; অর্থাৎ এক যুগেও লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও অর্জিত হয়নি। শুধু তা-ই নয়, বিভিন্ন পলিটেকনিক, মনোটেকনিক এবং কারিগরি স্কুল ও কলেজে শিক্ষক পদের ৭০ শতাংশই শূন্য আছে। এছাড়া দক্ষ শিক্ষকের অভাব কারিগরি শিক্ষায় একটি বড় সংকট।

দেশের চারটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিগ্রিধারী ১০ জন ইত্তেফাককে বলেন, তারা এ পর্যন্ত চারটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন। প্রথমটিতে বেতন ছিল মাত্র ৯ হাজার টাকা। এরপর অন্য আরেকটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন ১০ হাজার টাকায়। সেখানে আবার বেতনের তুলনায় কাজের চাপ ছিল অনেক বেশি। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা তারই সহকর্মীরা একই পদে পেতেন প্রায় তিন গুণ বেশি বেতন। সেই কষ্টে চাকরি ছেড়ে দিয়ে তারা তিন মাসের কোর্স করে ফ্রিল্যান্সিং করছেন। এখন তাদের প্রত্যেকের বেতন লাখের ওপরে। জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে (নায়েম) ২০২১ সালে জমা দেওয়া এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের মধ্যে ৫৪ শতাংশ কর্মজীবী, ৪ শতাংশ উদ্যোক্তা, ৩৮ শতাংশ বেকার ও ৪ শতাংশ কাজে আগ্রহী নয়। তবে শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে বেকারত্বের হার বেশি। গ্রামাঞ্চলের মাত্র ৪৮ শতাংশ ডিপ্লোমাধারী কর্মক্ষেত্রে রয়েছেন। সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ২৭২ ডিপ্লোমাধারীর ওপর ঐ গবেষণা করা হয়। ঐ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, কর্মজীবীদের ৬৫ শতাংশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে, ২৪ শতাংশ ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে, ৬ শতাংশ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বা এনজিওতে ও ৫ শতাংশ কাজ করছেন সরকারি প্রতিষ্ঠানে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এ ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের ৪৪ শতাংশের মাসিক আয় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যে এবং ৪৩ শতাংশের আয় ১০ হাজার টাকার কম। মাসে ১৫ হাজার টাকার ওপরে আয় করেন মাত্র ১৩ শতাংশ সনদধারী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের একজন অধ্যাপক গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, ‘দেশে মানসম্মত কারিগরি শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোয় যে ধরনের দক্ষ লোকবল প্রয়োজন, তা নেই। এ কারণে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ হতাশাগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে এবং তাদের দেখে নতুন শিক্ষার্থীরাও ভর্তিতে নিরুত্সাহিত হচ্ছে। যদি শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সংযোগ স্থাপন করা যায়, বিশেষত আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে গড়ে তোলা যায় তাহলে কারিগরি শিক্ষায় পড়তে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়বে।’ এদিকে স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা’ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা, ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন এবং উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে অনেকদিন ধরেই আন্দোলন করছেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। সার্বিক বিষয়ে জানার জন্য বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রুহুল আমিনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d