কাল আসছে নতুন মুদ্রানীতি বাড়ছে না নীতি সুদহার

চলতি অর্থবছরের শেষ ছয় মাসের জন্য আগামী কাল ঘোষিত হতে যাচ্ছে নতুন মুদ্রানীতি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রিজার্ভ ধরে রাখা ও বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা গুরুত্ব পাবে এবারের নীতিতে। তবে সংকোচনমুখী নীতি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সুদের হার না বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তবে সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাস্তবসম্মত নয় বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীল। তাই সুদ বাড়লে পণ্য উৎপাদন খরচ বেড়ে মূল্যস্ফীতি উসকে যায়। এজন্য ভারসাম্যপূর্ণ মুদ্রানীতি প্রয়োজন।
নতুন সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজারে টাকার প্রবাহ কমাতে বাড়িয়েছিল নীতি সুদহার। যদিও বাজারে তার প্রভাব খুব একটা পড়েনি। টানা ১০ মাস ধরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপর রয়েছে। বিবিএস সর্বশেষ হিসাবে, গত জানুয়ারি মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৭২ শতাংশ। গত বছরের মার্চের পর খাদ্য মূল্যস্ফীতি আর এক অঙ্কের ঘরে নামেনি। খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেশি থাকায় গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে চাপে রয়েছেন। সর্বশেষ গত মার্চে খাদ্য মূল্যস্ফীতি সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৮৭ শতাংশে ছিল।
এমন বাস্তবতায় গভর্নর হিসেবে প্রথম বারের মতো মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছেন ড. আহসান এইচ মনসুর। জানুয়ারি-জুন সময়ের জন্য দেওয়া এই নীতির ভঙ্গি এবার অত্যন্ত সতর্কতামূলক হলেও সুদহার বাড়াচ্ছে না বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও নতুন মুখপাত্র আরিফ হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, এবারের মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ডলারের বিপরীতে টাকার মান ধরে রাখা, বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা ও রিজার্ভ বাড়ানোর দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া হবে। তিনি বলেন, নীতি সুদহার বাড়ানোর ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়ানো হবে।
যদিও অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বাড়তি মূল্যস্ফীতিতে মানুষ সমস্যায় রয়েছে এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে তা কমাতে ইতিমধ্যে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর প্রভাবে মূল্যস্ফীতি কমতে আরও দুই থেকে তিন মাস অপেক্ষা করতে হবে।
মুদ্রানীতি নিয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, মূদ্রানীতিতে নীতি সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুফল পাওয়া যায়নি, যাবেও না। এবারেরও সুদহার বাড়ানো ঠিক হবে না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজার সিন্ডিকেট ভাঙার বিকল্প নেই। তিনি বলেন, এখন যে অবস্থা তাতে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির কোনো বিকল্প নেই। তবে শুধু মুদ্রানীতি দিয়ে সংকটের সমাধান করা যাবে না। এর জন্য সব সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব নেওয়ার পর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গত পাঁচ মাসে ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট করে তিন দফা নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছে, বর্তমানে যা ১০ শতাংশ। নীতি সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হচ্ছে না, বরং এর প্রভাবে বাজারে সব ধরনের ঋণের সুদহার বেড়ে গেছে। বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদাও তলানিতে নেমে এসেছে।