International

কাশ্মিরে যুদ্ধবিরতি নিয়ে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের মতবিরোধ

কৌশলগত অবস্থান ও বিশাল বাজার ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্রে পরিণত করেছে। তাই ট্রাম্পের এমন বক্তব্য ভারতের জন্য অস্বস্তিদায়ক।

দক্ষিণ এশিয়ার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সংঘাত অবসানে সাহায্য করার যে দাবি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করেছেন, তা নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে তার সম্পর্কে ফাটল তৈরি হয়েছে। এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংক্ষিপ্ত কিন্তু তীব্র সংঘাতের অবসান ঘটাতে ট্রাম্প আকস্মিকভাবে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করার এক সপ্তাহ পর যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর প্রক্রিয়া নিয়ে নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে মতভেদ দেখা দিয়েছে।

ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ হর্ষ ভি পান্ত এএফপিকে বলেন, ‘মার্কিন প্রশাসন ভেবেছিল, ট্রাম্পের ভূমিকা তুলে ধরার ক্ষেত্রে যুদ্ধের এ পর্যায়ে হস্তক্ষেপ তাদের কিছু মৌলিক সুবিধা দিতে পারে।’

নয়াদিল্লিভিত্তিক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের থিঙ্ক ট্যাঙ্কের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘তাড়াহুড়ো করে ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়েছে যে এটা চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে।’

ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের পেহেলগামে এপ্রিলে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর গত ৭ মে ভারত পাকিস্তানে ক্ষেপনাস্ত্র হামলা চালায়। তারপর থেকেই শুরু হয় যুদ্ধ। ভারত এ হামলার পেছনে পাকিস্তানের ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ করে, কিন্তু পাকিস্তান তা প্রত্যাখ্যান করে নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানায়।

দুই পক্ষের মধ্যে চলমান চার দিনের ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও কামান হামলার পর ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন। এ সংঘাতে কয়েক ডজন বেসামরিক নাগরিকসহ প্রায় ৭০ জন নিহত হন এবং হাজার হাজার মানুষ পালিয়ে যান।

পরে ট্রাম্প ভারত ও পাকিস্তানকে ‘বিপর্যয়ের কিনারা থেকে ফিরিয়ে আনার’ বিষয়ে গর্ব করে শুক্রবার ফক্স নিউজকে বলেন, ‘আমাকে কৃতিত্ব দেয়া হবে এমন যেকোনো সাফল্যের চেয়েও এটি অনেক বড়।’

পাকিস্তানের সাথে দ্বন্দ্বে বিদেশী মধ্যস্থতাবিরোধী নীতি মেনে আসছে ভারত। কয়েক দশক ধরে মেনে চলা এ নীতির বিরুদ্ধে যাওয়ায় ট্রাম্পের দাবিগুলো এড়িয়ে গেছে ভারত।

ভারত ও পাকিস্তান বর্তমানে বিভক্ত কাশ্মিরকে সম্পূর্ণরূপে নিজেদের বলে দাবি করে। ভারত হিমালয় অঞ্চলকে তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মনে করে এবং দেশটির রাজনীতিবিদরা দীর্ঘদিন ধরেই বাইরের মধ্যস্থতাকে দুর্বলতার লক্ষণ হিসেবে দেখছেন।

যুদ্ধবিরতির পর মোদির প্রথম ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করা হয়নি। তার সরকার তখন থেকেই জোর দিয়ে বলে আসছে, পাকিস্তানের সাথে আলোচনা সম্পূর্ণ দ্বিপক্ষীয়।

বাণিজ্যিক চাপ যুদ্ধবিরতিকে ত্বরান্বিত করেছে বলে ট্রাম্পের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত। গত সপ্তাহে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, মার্কিন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনায় বাণিজ্যের বিষয়টি আসেনি।

অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (ওআরএফ) থিঙ্ক ট্যাঙ্কের ফেলো মনোজ জোশির মতে, কৌশলগত অবস্থান ও বিশাল বাজার ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্রে পরিণত করেছে। তাই ট্রাম্পের এমন বক্তব্য ভারতের জন্য অস্বস্তিদায়ক।

তিনি বলেন, ‘কিন্তু ভারত খুব সতর্ক অবস্থান নিচ্ছে কারণ তারা উচ্চ শুল্ক এড়াতে ওয়াশিংটনের সাথে একটি বাণিজ্য চুক্তির জন্য আলোচনা করছে। আমরা (ভারত) চাইব, অ্যাজেন্ডাটি ভিন্ন দিকে এগিয়ে যাক।’

অভ্যন্তরীণভাবেও বিষয়টি জটিল। দেশটির প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস বলেছে, ট্রাম্পের ঘোষণা হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতার ’অনেক বিলম্বিত ভাষণকে’ উল্টে দিয়েছে। কাশ্মির ইস্যুতে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা সম্পর্কিত নীতি ভারত পরিবর্তন করছে কি-না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস।

এর আগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দুর্বল প্রতিক্রিয়া দেখানোয় কংগ্রেসের সমালোচনা করেছেন মোদি। তাই ভারত স্পষ্টতই এর জবাব দেবে এবং তা অস্বীকার করবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক পরামর্শদাতা ইউরেশিয়া গ্রুপের দক্ষিণ এশিয়া-বিষয়ক গবেষক প্রমিত পাল চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘ট্রাম্পের দাবিকৃত মধ্যস্থতাকে স্বাগত জানিয়েছে ইসলামাবাদ। কারণ সংঘাত থেকে বেরিয়ে আসতে তাদের প্রয়োজনীয় সুযোগ দেয়ার জন্য মার্কিন হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।’

বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর পুনরায় নিশ্চিত করেছেন, ‘পাকিস্তানের সাথে আমাদের সম্পর্ক, তাদের সাথে আমাদের লেনদেন দ্বিপক্ষীয়ভাবেই হবে।’

কিন্তু একই দিনে কাতারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ট্রাম্প যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা ও বাণিজ্যকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের দাবির পুনরাবৃত্তি করেন। তিনি বলেন, ‘আমি বলেছিলাম যুদ্ধের পরিবর্তে বাণিজ্য করা যাক। পাকিস্তান এতে খুব খুশি ছিল, আর ভারতও এতে খুব খুশি ছিল।’

পাকিস্তানের কোনো নেতার সাথে মোদির শেষ দেখা হয়েছিল এক দশক আগে। তারপর থেকে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ২০১৯ সালে ভারত একতরফাভাবে কাশ্মিরের সীমিত স্বায়ত্তশাসন বাতিল করার পর থেকে এ সম্পর্কের আরো অবনতি ঘঠে।

যোশির মতে, ‘ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সমন্বয় নয়াদিল্লির জন্য বিরক্তিকর, বিশেষ করে তারা যখন বিশ্ব মঞ্চে একটি পৃথক পরিচয় তৈরি করার চেষ্টা করছে।’

এদিকে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশীয় বিভাগের প্রভাষক ও সাবেক ভারতীয় সেনাসদস্য সুশান্ত সিং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘ট্রাম্পের বারবার বিষয়টি নিয়ে জোর দিয়ে বলা মোদির জন্য রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিকর। মোদি ব্যক্তিগতভাবে ট্রাম্পের বিরোধিতা করতে পারবেন না এবং ভারতের গণমাধ্যম বিষয়টিকে চাপা দেয়ার চেষ্টা করলেও, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্পের বক্তব্য আরো বেশি করে ছড়িয়ে পড়ছে।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto