Bangladesh

কিংস পার্টির ‘আশায় গুড়ে বালি’

বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের দলে টানতে না পারায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছে ‘প্রত্যাশিত গুরুত্ব’ পাচ্ছে না ‘কিংস পার্টি’। ঢাকঢোল পিটিয়ে রাজনীতির মাঠে নামলেও ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিত দুই দলের ‘আশায় গুড়ে বালি’। কোনো চমকই সৃষ্টি করতে পারেনি ‘তৃণমূল বিএনপি’ ও ‘বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট-বিএনএম’।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা থাকলেও তা দিতে পারেনি। অপেক্ষাকৃত কম পরিচিতদের নির্বাচনী মাঠে নামিয়ে নির্বাচনের যুদ্ধে কোনো প্রভাবই ফেলতে পারেনি দুই দল। এসব দলের সিনিয়র নেতারাও ভোটের হিসাবে অনেক পিছিয়ে আছেন। এমনকি আওয়ামী লীগের কাছ থেকে এখনও আসন ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে কোনো সমঝোতা করতে পারেনি তারা।

মিত্র জাতীয় পার্টি ও জোট শরিক ১৪ দলের সঙ্গে আসন সমঝোতায় দফায় দফায় প্রকাশ্যে ও গোপনে বৈঠক করলেও ‘কিংস পার্টি’গুলোকে তেমন আমলে নিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। একই অবস্থা অপর ‘কিংস পার্টি’ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের। কেন্দ্রের আশ্বাস পেয়ে নির্বাচনে এলেও এলাকায় কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে তাঁকে।

তৃণমূল বিএনপি ও বিএনএমের প্রার্থীদের নিয়ে কোনো তোড়জোড় কিংবা আলোচনা না থাকলেও কেন্দ্রীয় ছয় নেতাকে নিয়ে আশাবাদী তাদের নেতাকর্মী। এর মধ্যে রয়েছেন তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মবিন, মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার ও নির্বাহী চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট অন্তরা হুদা এবং বিএনএমের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহ মো. আবু জাফর, মহাসচিব ড. মুহাম্মদ শাহ্জাহান ও সাবেক আহ্বায়ক ড. আব্দুর রহমান। ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার ‘তৃণমূল বিএনপি’ মূলত তিন নেতার দল। নাজমুল হুদার মৃত্যুর পর তাঁর পরিবারের হাত থেকে এর নেতৃত্ব এখন শমসের মবিন চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের হাতে। তারা দু’জনেই বিএনপির সাবেক নেতা। এর মধ্যে শমসের মবিন বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে বিকল্পধারা বাংলাদেশ ঘুরে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান হয়েছেন। তৈমূর আলম খন্দকার বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়ে এ দলের মহাসচিব হয়েছেন। নাজমুল হুদার মেয়ে অ্যাডভোকেট অন্তরা হুদা তৃণমূল বিএনপির নির্বাহী চেয়ারপারসন। তিন দল পরিচালনায় কোণঠাসা অবস্থায় আছেন। এই তিন নেতার বাইরে অনেকেই এ দলে যোগদান করেছেন। তবে সেখানে উল্লেখযোগ্য কিংবা প্রভাবশালী কাউকে টানতে পারেননি তারা। 

বিতর্কের জন্ম দিয়ে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পাওয়া বিএনএম দলের নেতারা শুরুতে যেভাবে হাঁকডাক দিয়েছিলেন, সেভাবে কিছুই করতে পারেননি। চমক আসছে বলে নেতারা বিভিন্ন সময়ে প্রচারণা চালালেও সেটা হয়নি। দলটির প্রতিষ্ঠাতাদের একটি অংশকে বাদ দিয়ে কথিত কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন হলেও সেখানে চেয়ারম্যান হিসেবে কাউকে নিয়োগ দিতে পারেনি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন বিএনপি থেকে আসা শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া মহাসচিব হিসেবে আছেন ড. মুহাম্মদ শাহ্‌জাহান এবং দলটির সাবেক আহ্বায়ক ও বিএনপিদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক ড. আব্দুর রহমান।  

জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃণমূল বিএনপি ২৩০ আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছে; বিএনএম দিয়েছে ৮২ আসনে। এর মধ্যে তৃণমূল বিএনপির ১৩৯ মনোনয়ন এবং বিএনএম দলের ৫৭ মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। 

তৃণমূল বিএনপি

তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী সিলেট-৬ আসনে নির্বাচনী ভোটযুদ্ধে নেমেছেন। এ আসনে তাঁর নিজস্ব কোনো ভোট ব্যাংক কিংবা তাঁর দলের কোনো অস্তিত্ব নেই। একমাত্র ‘সমঝোতার আশীর্বাদ’ পাওয়া গেলে তিনি হয়তো নির্বাচিত হতে পারেন। 

এ আসনে শমসের মবিন চৌধুরীর বিপরীতে নির্বাচনে রয়েছেন নৌকা প্রতীকে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন। এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে এখনও অনেকটা অপরিচিত শমসের মবিন। তাঁর পাশে তেমন কেউ নেই। যাদের থাকার কথা ছিল, তারাও পক্ষে নেই। তাই তাঁকে নিয়ে কোনো মাথাব্যথাও নেই আওয়ামী লীগের। এ অবস্থায় তৃণমূল বিএনপি দলটি ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে জোটে গেলে এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী সরে দাঁড়ালেই কেবল নির্বাচনের আলোচনায় আসতে পারবেন শমসের মবিন। তবে জয়লাভের বিষয়টি ভিন্ন জায়গা থেকে হতে হবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। জোটের স্বার্থে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলেও পাল্লা ভারী হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী সরওয়ার হোসেনের। সেখানেও সুবিধা করতে পারবেন না শমসের মবিন। 

এলাকার স্থানীয় বিএনপির কোনো নেতাকর্মীও তাঁর সঙ্গে নেই। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও তাঁকে গুরুত্ব দিতে চাইছেন না। তাদের ভাষ্যমতে, শমসের মবিন ঢাকায় প্রভাবশালী নেতা হতে পারেন কিংবা তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান হতে পারেন, কিন্তু এলাকায় তিনি শূন্য। 

গত মঙ্গলবার এই আসনের নির্বাচনী এলাকা গোলাপগঞ্জমুক্ত দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় শমসের মবিন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটে তৃণমূল বিএনপি যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দল হিসেবে তারা আওয়ামী লীগের কার্যক্রমকে অনুসরণ করেন। গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অজিউর রহমান সানা বলেন, এ আসনে হিসাবনিকাশ জটিল। যার যার মতো করে মাঠে রয়েছেন প্রার্থীরা।

বিগত দিনের নিজের নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন ছেড়ে সমঝোতায় নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে নির্বাচনী ভোটযুদ্ধে নেমেছেন ‘তৃণমূল বিএনপির’ মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার। এই আসনে রূপগঞ্জের তারাব পৌরসভার রূপসীর খন্দকারপাড়ায় তাঁর পৈতৃক বাড়ি হলেও তিনি বিগত দিনে এলাকার স্থানীয় রাজনীতি করেননি। রাজনীতি করেছেন নারায়ণগঞ্জ শহরে। তিনি বিএনপির মহানগরের নেতা ছিলেন, জেলার নেতা ছিলেন, কেন্দ্রীয় নেতাও ছিলেন। নারায়ণগঞ্জ শহরে রিকশাচালক, ঠেলাগাড়িচালক, ভ্যানচালকদের মতো তৃণমূল মানুষের রাজনীতি করেছেন। কিন্তু রূপগঞ্জের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল না। ফলে এই এলাকার আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সঙ্গে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়ে তুলতে পারবেন না বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। 

এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ভূঁইয়া ও গোলাম দস্তগীর গাজীর ছেলে গোলাম মুর্তজা।

তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, এলাকায় তাঁর চৌদ্দ পুরুষের শিকড় রয়েছে।  এই জেলার তিনটি আসনেই তাদের বাড়ি আছে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে এই এলাকার অনেককে তিনি চাকরি দিয়েছেন। তাহলে কেন তিনি ভোট পাবেন না। সরকারের সঙ্গে কোনো সমঝোতা হয়নি বলে তিনি দাবি করেন। 

তারাব পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান মোল্লা বলেন, আওয়ামী লীগের কোনো সম্ভাবনা নেই তৈমূর আলম খন্দকারের পক্ষে কাজ করার। তৈমূরকে বা অন্য কাউকে ভোট দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। 

তৈমূরের মতো তৃণমূল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল হুদার মেয়ে অন্তরা হুদাও নিজ আসন ঢাকা-১ থেকে সরে গিয়ে মুন্সীগঞ্জ-১ থেকে নির্বাচন করছেন। এই আসনে অন্তরা হুদার কোনো ভোটব্যাংক নেই। এমনকি নেই কোনো কর্মী-সমর্থকও। তেমন পরিচিতিও নেই। তাই ভোটের মাঠে শূন্যের কোঠায় রয়েছে অন্তরা হুদার ভোটব্যাংক। মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মহিউদ্দিন আহম্মেদ, বিকল্পধারার প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মাহী বি চৌধুরী এবং আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম সারোয়ার কবীরের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিএনএম

ফরিদপুর-১ (মধুখালী-আলফাডাঙ্গা- বোয়ালমারী) আসনে কয়েকভাগে বিভক্ত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে নৌকার কথা বললেও অন্তরালে বিএনএমের প্রার্থী শাহ মো. আবু জাফরকে অন্যতম প্রধান প্রার্থী মনে করছেন। আলোচনায়ও উঠে আসছে তাঁর নাম। শাহ মো. আবু জাফর একসময়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন। সেখান থেকে বিএনপি হয়ে বিএনএম দলে গেছেন; হয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এই এলাকায় তাঁর নিজস্ব ভোটব্যাংক আছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভোটারদের অনেকের ভোট তিনি পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে। 

এ ছাড়া কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাবেক সহসভাপতি আরিফুর রহমান দোলন ও মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম তাদের মনোনয়ন ফিরে পাওয়ার পর নৌকার প্রার্থী দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমানের ভোটে ভাগ বসবে, লাভবান হবে বিএনএম– এমনটাই ধারণা ওই এলাকার সাধারণ ভোটারদের। 

এদিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে শরিক ও অন্যান্য দলের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন বিএনএম প্রার্থী শাহ মো. আবু জাফর। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে এখন পর্যন্ত আসন ভাগাভাগি নিয়ে কোনো কথা হয়নি। সামনে হবে কিনা তাও বলতে পারছি না। তবে এটুকু আশ্বাস পেয়েছি, আগামী নির্বাচন একটি গণতান্ত্রিক উপায়ে হবে। সব নেতাকর্মী-সমর্থক আছেন এবং তারা কাজ করছেন। এবার জনগণ তাঁর পক্ষে, প্রশাসনের ভূমিকা  জনগণের পক্ষে থাকায় তিনি বিজয়ী হবেন।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম সুজা বলেন, আওয়ামী লীগের মধ্যে শাহ মো. আবু জাফরের কোনো প্রভাব পড়বে না। তাঁকে শুধু প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবেই দেখছি। দল থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো সিদ্ধান্ত এলে তা শতভাগ পালন করব।

চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসন থেকে সংসদ সদস্য প্রার্থী বিএনএমের মহাসচিব ড. মুহাম্মদ শাহ্‌জাহান। এলাকায় তাঁর তেমন কোনো পরিচিতি নেই। এর আগে কোনো নির্বাচনের অভিজ্ঞতা নেই। এই আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে বর্তমান এমপি মুহম্মদ শফিকুর রহমান ছাড়াও আওয়ামী লীগের আরও দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে সাবেক এমপি ড. শামসুল হক ভূঁইয়া এবং উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগকারী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জাহিদুল ইসলাম রোমান রয়েছেন। এই তিন প্রার্থীর বাইরে বিএনএম প্রার্থী শাহ্জাহানকে নিয়ে কারও কোনো গুরুত্ব নেই। 

অবশ্য বিএনপির স্থানীয় কয়েক নেতাকে নিজের পক্ষে নেওয়ার জোর চেষ্টা করছেন তিনি। এর মধ্যে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ আসনের অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মতিঝিল থানার একটি মামলায় কারাগারেও পাঠানো হয় ওই সময়। তবে বিএনএম রাজনীতিতে যোগ দেবেন– এমন শর্তে প্রায় ১১ জন নেতাকে গত মঙ্গলবার ঢাকার সিএমএম আদালত থেকে ওই মামলায় জামিনে মুক্ত করেন বিএনএম মহাসচিব। তবে শর্তে রাজি না হওয়ায় একই মামলায় কারাবন্দি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল হান্নানের জামিন হয়নি। জামিন পেয়েছেন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ভিপি মজিবুর রহমান দুলাল, আবু জাফর খসরু মোল্লা, মাসুদ বেপারি, সদস্য নয়ন চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন বিএনপির সোহাগ বেপারি, শরিফ হোসেন প্রমুখ। এখন এসব নেতার ওপর ভর করে তিনি নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। 

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেদ সরকার বলেন, ড. মুহাম্মদ শাহ্জাহানের নাম শুনেছি, কথা হয়নি, বাস্তবে দেখিওনি। এমনকি তিনি আগে যে দল করতেন সেই বিএনপির নেতাকর্মীরাও তাঁকে চেনে না। 

বিএনএম মহাসচিব ড. মুহাম্মদ শাহ্‌জাহান বলেন, পরিবেশ পরিস্থিতি ভালো হলে আইনশৃঙ্খলা ভালো থাকলে, ভোটাররা নির্ভয়ে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারলে অবশ্যই জিতব। তাঁর পরিচিতি নেই, কেউ চেনে না,  জিতব না, প্রতিযোগিতায় হেরে যাব–  এসব কথা কেন? এলাকায় আসা-যাওয়া– নেই এটা ভুল।  মানুষের সুখে-দুঃখে ছিলাম, আছি এবং থাকব।

একই অবস্থা বিরাজ করছে বিএনএম দলটির সাবেক আহ্বায়ক ড. আব্দুর রহমানের বরগুনা-২ (পাথরঘাটা-বামনা-বেতাগী) আসনের ভোটের মাঠ। জনসম্পৃক্ততা নেই বললেই চলে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে এমপি হয়েছিলেন। তবে এর পরের নির্বাচনেই তিনি বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে হেরে আর সক্রিয় রাজনীতিতে ছিলেন না।  

বেতাগী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বেতাগী পৌর মেয়র এ বি এম গোলাম কবির এ বিষয়ে বলেন, আব্দুর রহমান খোকনকে বিগত দিনে বরগুনার রাজনীতিতে দেখা যায়নি। তাঁর বাবা ছিলেন একজন স্বাধীনতাবিরোধী লোক। ১৯৭১ সালে তাঁর বাবা আব্দুস সত্তার হাওলাদারকে মুক্তিযোদ্ধারা হত্যা করেছে।  

কল্যাণ পার্টি 

আরেক কিংস পার্টি বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম ২০১৮ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে নির্বাচন করেছিলেন। আওয়ামী লীগ জোটের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন এই আসনে, যার কারণে সমঝোতার ভিত্তিতে তাঁকে চলে যেতে হয়েছে কক্সবাজার-১ আসনে। সেখানে তাঁর বাড়ি নয়, এলাকায় কোনো পরিচিতি নেই, জনসমর্থনেরও ভিত্তি নেই। আবার তাঁর নিজ দলেরও কোনো অবস্থান নেই। এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমদের ঋণখেলাপির কারণে মনোনয়ন বাতিল হওয়ার পরও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের জাফর আলম ও তাঁর ছেলে রয়েছেন। বিএনপি অধ্যুষিত এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীরা সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের দিকে যাবেন না। আওয়ামী লীগের সমর্থনও তিনি পাবেন না। সমঝোতার ভোট ছাড়া সুষ্ঠু ভোট হলে জামানত রক্ষা করাটাই ইবরাহিমের জন্য দায় হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এ বিষয়ে ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button