Hot

কিরগিজস্তানে বিদেশিদের ওপর হামলা, লুকিয়ে আছেন বাংলাদেশি অনেক শিক্ষার্থী

দু’দিন হতে চলল না খেয়ে আছি। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিশকেক শহরে বিদেশিদের ওপর হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছি। স্থানীয় গণমাধ্যমে পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার খবর প্রচার করা হলেও বিদেশিদের ওপর হামলার খবর পাচ্ছি। মানসিক চাপে অসুস্থ হয়ে পড়ছি। শনিবার সন্ধ্যায় সমকালকে এসব কথা বলেছেন কিরগিজস্তানে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি সৈয়দ রাকিবুল ইসলাম।

১৩ মে রাজধানী বিশকেকে স্থানীয় দু-তিনজনের সঙ্গে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত মিসরীয় কয়েকজনের সংঘর্ষ হয়। ১৬ মে সন্ধ্যায় বিদেশিদের ওপর হামলা শুরু করে স্থানীয়রা। শহরে যেসব বাড়িতে বিদেশিরা থাকেন, সেগুলোতে হামলা চালিয়ে লোকজনকে পেটানো এবং ভাঙচুর চালানো হয়। মেডিকেল কলেজগুলোর হোস্টেলেও তারা ঢুকে পড়ে। বিদেশি মেয়েদের ওপরও চালানো হয়েছে নির্যাতন। বাংলাদেশি একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, শহরজুড়ে পুলিশ মোতায়েন থাকলেও তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। 

রয়্যাল মেট্রোপলিটন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সৈয়দ রাকিবুল ইসলাম বলেন, দেশটিতে বাংলাদেশি অনেক ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কক্ষের বাইরে যেতে নিষেধ করেছে। সহিংসতা হঠাৎ শুরু হওয়ায় অনেকে নিজ কক্ষে ফেরত আসতে পারেননি। যে যেখানে পেরেছেন, আত্মগোপন করেছেন। এ পরিস্থিতিতে দেশে ফেরত যেতে চাই, আমাকে উদ্ধার করুন। 
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এ দেশে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস নেই। এ কারণে আমরা কোনো সহায়তা পাই না। দুদিন পার হয়ে গেলেও কোনো বার্তা আমাদের দেওয়া হয়নি। রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোনো উত্তর পাইনি।’ 

কিরগিজস্তানে বাংলাদেশের দূতাবাস নেই। উজবেকিস্তানের বাংলাদেশ দূতাবাস কিরগিজস্তানে অনাবাসি দূতাবাসের দায়িত্ব পালন করে। 

কিরগিজস্তানে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দূতাবাস সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে। এ ছাড়া কিরগিজস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও যোগাযোগ রয়েছে। কোনো বাংলাদেশির হতাহত হওয়ার তথ্য নেই। বাংলাদেশিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, বাসা থেকে বের না হতে। তবে একটি আতঙ্ক রয়েছে আবারও সহিংসতা হয় কিনা।’ 

বাংলাদেশিদের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে– জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রাখছেন। 

এদিকে শনিবার রাতে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে সতর্কবার্তা জারি করেছে বাংলাদেশ দূতাবাস। সেই সঙ্গে একটি হটলাইনও চালু করেছে। 

কিরগিজস্তান স্টেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মো. সালমান ফারসি সিয়াম সমকালকে বলেন, ‘আমরা দূতাবাসে যোগাযোগ করেছি, কিন্তু কোনো ফল পাইনি। দূতাবাসের কেউ এখানে নেই। এখানকার বর্তমান পরিস্থিতি তাদের ধারণার বাইরে। আমরা চরম আতঙ্কে রয়েছি। এখন পর্যন্ত চার থেকে ছয়জন নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে। এখনও হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা কেউ বের হতে পারছি না। দুদিন না খেয়ে আছি।’

দেশটিতে বিদেশিদের হামলার ঘটনার পর ভারত ও পাকিস্তান নিজ নিজ দেশের নাগরিকদের জন্য দিয়েছে সতর্কবার্তা। চালু করেছে হটলাইন, যাতে কোথাও তাদের দেশের নাগরিক আক্রান্ত হলে সাহায্য পৌঁছাতে পারে। দেশটিতে থাকা বাংলাদেশি 
শিক্ষার্থীদের পাঠানো বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে, বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা ১৫-২০ জনের গ্রুপ করে একেকটি কক্ষে লুকিয়ে রয়েছেন। 

দেখা গেছে, ১০ থেকে ১৫ জন মিলে এক ব্যক্তিকে নির্দয়ভাবে পেটাচ্ছে। একজনের লাশ রাস্তায় পড়ে রয়েছে। তবে কোন দেশের নাগরিক, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পুলিশের সামনেই সড়কে পেটানো হচ্ছে লোকজনকে। 

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের দাবি, কিরগিজস্তানে উবারসহ বিভিন্ন যোগাযোগ অ্যাপ ব্যবহার করে বিদেশিদের অবস্থান শনাক্ত করা হচ্ছে। হামলায় বাংলাদেশি শ্রমিক ও শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছেন। কত বাংলাদেশি আহত হয়েছেন, তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি কেউ। এ ছাড়া কোনো আহত বাংলাদেশির নাম বা ফোন নম্বরও জানাতে পারেননি কেউ। দেশটিতে প্রায় ১ হাজার ২০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আছেন বলে তারা জানান।
দেশটিতে কত বাংলাদেশি আছেন, সে পরিসংখ্যান নেই বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে। 
দূতাবাসের ধারণা, ৬০০ থেকে ৭০০ শিক্ষার্থী এবং হাজারখানেক টেক্সটাইলের শ্রমিক কিরগিজস্তানে রয়েছেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button