Hot

কী ঘটবে আজ? বিচারপতি অপসারণ ও ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রত্যাবর্তন’ ইস্যু সবার চোখ সুপ্রিমকোর্টে

কী ঘটবে আজ উচ্চ আদালতে? ইস্যু অনেকগুলো। প্রত্যেকটি ইস্যুই বিচার বিভাগ,শাসন ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক বাঁকবদল করে দেয়ার মতো। সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের চাকরি থেকে অপসারণ সংক্রান্ত ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’ পুনর্বহাল সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রিভিউ পিটিশনের সিদ্ধান্ত আসতে পারে আজ। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার অনুগত দুর্নীতিবাজ বিচারপতিদের অপসারণের দাবিতে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আল্টিমেটাম রয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে শেখ হাসিনা সর্বব্যাপী মাফিয়াতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে ফিরিয়ে আনার পক্ষে বিএনপি’র রিভিউ পিটিশন শুনানির কথাও রয়েছে। এ ছাড়া ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট বিতাড়িত হওয়ার পর বিপ্লবোত্তর স্বাধীন পরিবেশে নিযুক্ত নয়া প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিমকোর্টে পুরোদমে বিচার কার্যক্রমও শুরু হচ্ছে আজ। এসব মৌলিক ইস্যু ছাড়াও হাসিনা উৎখাত-উত্তর সৃষ্ট বহুবিধ মামলা এবং শুনানির বিষয়তো রয়েছেই। বলাবাহুল্য, প্রথমোক্ত তিনটি মৌলিক ইস্যুই একটি অন্যটির সঙ্গে সম্পৃক্ত।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা মাফিয়াতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় পুলিশের মতোই দলীয় লাঠিয়ালে পরিণত করেন বিচার বিভাগকেও। এ ক্ষেত্রে তিনি কোনো গ্রামারেরই ধার ধারেননি। ক্যাম্পাসে-রাজপথে লগি-বৈঠা-হাতুড়ি দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ঠ্যাঙানো ছাত্রলীগ নেতাদের বেছে বেছে বসিয়েছেন বিচারক পদে। হাইকোর্টের রায় প্রকাশ্যে পুড়িয়ে ফেলা ছাত্রলীগ নেতাকে বিচারপতি বানিয়ে আপিল বিভাগে পর্যন্ত উন্নীত করা হয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের দরজায় লাথি দেয়া ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ পেয়েছেন ‘বিচারপতি’ হিসেবে। দলীয় আনুগত্যের মানদণ্ডে নিয়োগপ্রাপ্ত এসব বিচারপতি সর্বোচ্চ এজলাসে বসেও সদম্ভে ঘোষণা দেন ‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ বলে। ফ্যাসিবাদের মূর্তপ্রতীক হয়ে ওঠা ‘শেখ মুজিব- শেখ হাসিনা’ বলতেই তারা ছিলেন অজ্ঞান। এভাবে পুরো বিচার বিভাগকেই করে ফেলা হয় মেরুদণ্ডহীন। প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে একজন প্রধান বিচারপতিকে ঘাড় ধরে নামিয়ে দেয়ার স্বীকারোক্তি দিলেও শুধুমাত্র ‘শেখ পরিবার’র লোক হওয়ায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে আদালত অবমাননার রুল ইস্যুর সাহস দেখাতে পারেনি আপিল বিভাগ। পক্ষান্তরে নাইমা হায়দারসহ দুর্নীতিবাজ বিচারপতিদের বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কথা বলার ‘অপরাধ’ এ কেড়ে নেয়া হয় তরুণ ব্যারিস্টার মো: আশরাফুল আলমের মামলা পরিচালনার এখতিয়ার।

দুর্নীতির পাল্লায়ও দুর্নীতিবাজরা হয়ে ওঠেন দড়িছাড়া গরুর মতো। দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলেও শেখ পরিবারের বন্দনাগুণে তাদের কোনো জবাবদিহিতাই ছিলো না। দুর্নীতিবাজ বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত অনুচ্ছেদটি কায়দা করে সংবিধান থেকে ছেঁটে ফেলা হয় বেশ আগে। কথিত এসব ছাত্রলীগ ক্যাডার বিচারপতির গাউন পরে শুধু সর্বোচ্চ আদালতের বেঞ্চই দখলে নেননি, বর্বর উন্মত্ততায় নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করে দখলে নেয় সুপ্রিমকোর্টবার এবং বাংলাদেশ বারকাউন্সিল। হাসিনা তার ফ্যাসিবাদ চর্চার প্রান্তহীন মাঠে পরিণত করেন বিচার বিভাগকে। শেখ হাসিনার প্রতি মানুষের অগ্নি-ক্ষোভের বড় এক কারণ ছিলো গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রকাঠামো বিচার বিভাগকে ধ্বংস করে দেয়া। এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ছিলো ৫ আগস্ট হাসিনা উৎখাতের দিন তৎকালীন প্রধান বিচারপতির সরকারি বাসভবনে হামলা, লুটপাট, ১০ আগস্ট হাসিনার একান্ত অনুগত প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় ক্যু’র ব্যর্থ চেষ্টার বার্তা পেয়ে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা কর্তৃক সুপ্রিমকোর্ট ঘেরাও এবং বাস্তবতা অনুধাবন করে ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগের ৬ বিচারপতির পদত্যাগ। ছাত্র-জনতার অহিংস সেই ঘেরাও-কর্মসূচির পরই ধারণা করা হয়েছিলো হয়তো অগ্রজদের পথ অনুসরণ করবেন হাইকোর্ট বিভাগের দুর্নীতিবাজ বিচারকরাও। কিন্তু না। হাসিনা উৎখাতের দুই মাসের মাথায়ও তাদের স্বেচ্ছা পদত্যাগের নামগন্ধটিও নেই। দুর্নীতিবাজ আওয়ামী বিচারপতিদের পদত্যাগের দাবিতে সুপ্রিমকোর্টের সাধারণ আইনজীবীরা ক্রমাগত দাবি জানিয়ে আসছেন। অন্ততঃ ৩০ বিচারপতির দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট ফিরিস্তি প্রকাশ করেন তারা। সর্বশেষ ১৬ অক্টোবর অপসারণ কিংবা পদত্যাগের দাবিতে প্রধান বিচারপতির কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা করেন আইনজীবীরা। সেটিও যখন দুর্নীতিবাজ বিচারপতিদের গায়ে লাগেনি তখনই বিপ্লবী ছাত্র-জনতার কাছে কথিত বিচারপতিদের মতলব স্পষ্ট হয়ে যায়। মাত্র ২৪ ঘণ্টার নোটিশে ১৭ অক্টোবর ছাত্র-জনতা দুর্নীতিবাজদের অপসারণের দাবিতে জড়ো হন সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমের ডাকে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা জড়ো হয়ে অচল করে দেন সর্বোচ্চ বিচারাঙ্গন। অ্যানেক্স ভবনের সামনে অগ্নিঝরা বক্তব্য দেন দুই সমন্বয়ক। তবে সেই বিক্ষোভ-সমাবেশ ছিলো স্বতঃস্ফূর্ত, অহিংস এবং অত্যন্ত সুশৃঙ্খল। ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দল দুর্নীতিবাজদের অপসারণের দাবি জানালে সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃপক্ষ ১২ বিচারপতিকে দীর্ঘ ছুটিতে পাঠান। একই সঙ্গে বিচারপতি অপসারণে ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’র মামলার রিভিউর শুনানির তারিখ ২০ অক্টোবর (আজ রোববার) ধার্য রাখার কথা জানান। আন্দোলনকারীরা তখন দুর্নীতিবাজদের অপসারণে ২০ পর্যন্ত আল্টিমেটাম দেন। আজই শেষ হচ্ছে আল্টিমেটাম। এ হিসেবে আজ (২০ অক্টোবর) ফের উত্তাল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সুপ্রিমকোর্ট।

তবে ‘বিচারপতি’ পদধারী দুর্নীতিবাজদের পক্ষে সাফাই গাইছেন একশ্রেণির ‘সুশীল’ আইনজীবী। সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্নার মতে, বিচারকদের পদত্যাগ বা অপসারণ দাবি করা হচ্ছে, তা শৃঙ্খলাবহির্ভূত। এটি নৈরাজ্যকর অবস্থা। কোনো বিচারপতি বা কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে, সেটি লিখিতভাবে জানাতে প্রধান বিচারপতি একটি হটলাইন সেবা চালু করেছেন। এর ব্যবহার না করে পদত্যাগ ও অপসারণের দাবিতে চাপ প্রয়োগের প্রবণতা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কোনো বিচারপতিই হয়তো এ থেকে রেহাই পাবেন না।

ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া মনে করেন, চাপ প্রয়াগের প্রক্রিয়া অশোভন। এগুলো পরিহার করা উচিত। দু’দিন পরপর শিক্ষার্থীরা এসে দাবি জানাতে থাকবে এবং এটার পরিপ্রেক্ষিতে একটা অ্যাকশন হবে, এর কোনোটাই ঠিক নয়। এতে বিচার বিভাগের শ্রেষ্ঠত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এর আগেও যেভাবে হয়েছিল, ছয়জন আপিল বিভাগের বিচারপতির ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াটাও যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে হয়নি।

এছাড়া ‘প্রথম আলোঘেঁষা’ আরেক আইনজ্ঞ ড. শাহদীন মালিকের মতে, পদত্যাগের দাবির মুখে বিচারকাজ থেকে অপসারিত করা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার মূলে কুঠারাঘাতের শামিল। শেখ হাসিনার রেখে যাওয়া সংবিধানকে উচ্চকিত করে তিনি বলছেন, বিচারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত এবং সত্য-মিথ্যা নির্ধারণের একটি প্রক্রিয়া সংবিধানে বলে দেয়া আছে। কয়েকজন বিচারককে বিচারকাজ থেকে সাময়িকভাবে বিরত রাখার ক্ষেত্রে সেই প্রক্রিয়া অনুসৃত হয়নি, সার্বিকভাবে এ ঘটনাগুলো খুবই বেদনাদায়ক।

তবে এই তিন আইনজীবীর সঙ্গে দ্বি-মত পোষণ করে সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল, সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী হুমায়ুন কবির বুলবুল বলেছেন, শুধু ‘সুশীল’রাই এমনটি বলছেন, তা নয়। শোনা যাচ্ছে, সিনিয়র দু-চারজন বিচারপতিও তাদের ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় বলার চেষ্টা করেছেন যে, তাদেরকে (দুর্নীতিবাজ বিচারপতি) এভাবে সরিয়ে দেয়া হলে কোর্ট চলবে কী দিয়ে? আমি তাদের সঙ্গে একমত নই। কারণ, দুর্নীতিবাজ এই বিচারপতিদের নিয়োগ প্রক্রিয়াই সঠিক ছিলো না। তাদের নিয়োগ দেয়া হয় দলীয় বিবেচনায়। কোনো যোগ্যতা নির্ধারণী ব্যবস্থা ছিলো না। বিচারপতি হয়েও দলীয়ভাষায় কথা বলেছেন তারা। আ’লীগ সরকারের পক্ষে ফরমায়েশী রায় দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেননি। বৈধতার প্রশ্ন তুলছেন ? তাহলেতো ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন কোনোটাইতো বৈধ নয়! যোগ করেন এই আইনজীবী।

সৈয়দ মামুন মাহবুব বলেন, বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, হাইকোর্টের প্রচণ্ড দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ বিচারপতিদের ন্যূনতম লজ্জাবোধ নেই। বিচারপতিদের মূল আস্থার জায়গাই হচ্ছে জনগণ। জনগণ তাদের পদত্যাগ চাইছেন। দুই মাস ধরে আইনজীবীরা আন্দোলন করছেন। যাদের হাতে এখন ক্ষমতার শক্তি তারা এটি বহু আগেই করতে পারতেন। মেথড আর উল্লেখ করতে চাই না। তিনি বলেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল যদি রিভাইবও হয় তবুও তাদের অপসারণে সময় লাগবে। আইনজীবী-ছাত্র-জনতা দুর্নীতিবাজ বিচারপতিদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতে বাধ্যই করলেন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা এবং সর্বশেষ বর্তমান ক্ষমতাসীনরা। কারণ, এটি (দুর্নীতিবাজদের অপসারণ) তারা বহু আগেই করতে পারতেন।

এদিকে মাফিয়াতন্ত্রকে মজবুত ও নিরবচ্ছিন্ন করতে শেখ হাসিনা ইচ্ছেমতো ব্যবহার করেন বিচার বিভাগকে অনুগত প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে দিয়ে। তার শঠতা ও কপটতাপূর্ণ রায়কে ভিত্তি ধরে সংবিধান থেকে তুলে দেন ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ব্যবস্থা। যা ছিলো শেখ হাসিনার দেড় দশকের কর্তৃত্ববাদী স্বৈরশাসনের প্রধান আইনি ভিত্তি। এর মাধ্যমে শেখ হাসিনা পরপর তিনটি জাতীয় নির্বাচনে স্বীয় ‘বিজয়’ সুনিশ্চিত করেন। গত ১৭ অক্টোবর এবিএম খায়রুল হকের এ রায় পুনর্বিবেচনার জন্য রিভিউ পিটিশন করেছেন ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ (রোববার) এটি আপিল বিভাগে উপস্থাপনের কথা রয়েছে। রিভিউ পিটিশনলব্ধ রায়ের ভিত্তিতে সংবিধানে প্রত্যাবর্তন করতে পারে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’। এতেও ঘটতে পারে দেশের শাসন ব্যবস্থার বাঁক বদল।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor