Hot

কী থাকছে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণায়

ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের প্রায় ৪ মাস পর ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ ঘোষণা করতে যাচ্ছেন ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। আগামীকাল বিকাল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৫৮ সমন্বয়কের শপথের মধ্যদিয়ে এ ঘোষণাপত্রকে স্বীকৃতি দেয়া হবে। বিপ্লবের এতদিন পর অভ্যুত্থানের এই ঘোষণাপত্র পাঠ নিয়ে কৌতূহল জনমনে। কী থাকছে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রে? গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রনেতারা জানিয়েছেন জুলাই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে এদেশের রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক করা হবে। কবর রচনা করা হবে ১৯৭২ সালের মুজিববাদী সংবিধানের। ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে অতীতের জনবিরোধী ব্যবস্থার বিলোপ নিশ্চিত করে নতুন ব্যবস্থা চালু করা হবে। যার মাধ্যমে কেমন বাংলাদেশ চায় নতুন প্রজন্ম তার উল্লেখ থাকবে।  

ওদিকে ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘোষণাপত্রে উপনিবেশবিরোধী এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এ অঞ্চলের মানুষের লড়াই- সংগ্রামের কথা উল্লেখ থাকবে। এ ছাড়াও ’৯০-র স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ও ’২৪-র গণঅভ্যুত্থানসহ এ দেশের মানুষের সকল আন্দোলন সংগ্রামের বিষয় উল্লেখ থাকবে। স্থান দেয়া হবে জনআকাঙ্ক্ষাকে। বিপ্লবীরা মনে করে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের পর রচিত ১৯৭২ সালের সংবিধান নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। যেটি বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বক্তৃতায়ও ফুটে উঠেছে। তাই নতুন প্রজন্ম মনে করে ’৭২-এর সংবিধানের ব্যর্থতার কারণে এ দেশের গণতন্ত্র এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়েছে। মুজিববাদী সংবিধানের মাধ্যমে এদেশের গণমানুষের আকাঙ্ক্ষাকে বিনষ্ট করা হয়েছে। যার উল্লেখ থাকবে ঘোষণাপত্রে। এর মাধ্যমে ’৭২-এর সংবিধান গুরুত্ব হারাবে। বিপ্লবীদের ঘোষণাপত্রে সমালোচনা থাকবে এক-এগারো সময়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া নিয়েও। এ ছাড়া ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে উল্লেখ থাকবে। যার মাধ্যমে হাসিনার দুঃশাসনের ইতিহাসকে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্থান দেয়া হবে। জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রে গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পাবে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকারের বিষয়গুলো। নাগরিক হিসেবে সবার অধিকার নিশ্চিতে যেটি কাজ করবে। বিগত সাড়ে ১৫ বছর শেখ হাসিনার শাসনামলে এ দেশের ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মকর্তারা কীভাবে আওয়ামী লীগের দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ  করেছেন তার উল্লেখ থাকবে। একই সঙ্গে ৫ই আগস্ট বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে ঘোষণাপত্রে উল্লেখ থাকবে। এমন বাস্তবতায় ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে রাজপথের লড়াই-সংগ্রামে সক্রিয় থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার আহ্বান থাকতে পারে। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা আব্দুল কাদের মানবজমিনকে বলেন, আমরা এ ঘোষণাপত্রটা আরও আগেই দিতাম। কিন্তু সময় সুযোগের অভাবে সে সময় এটি দিতে পারিনি। এখন আমরা মনে করছি জুলাই বিপ্লবের ঘোষণা দেয়ার উপযুক্ত সময় এটি। আরেক নেতা মানবজমিনকে বলেন, ঘোষণাপত্রটি অনেকটা ৫ই আগস্টের জন্যই করা। এতদিন এটি ঘোষণা করা না হলেও বিপ্লবীরা এখন মনে করছেন এটি ঘোষণা করা প্রয়োজন। কারণ এ আন্দোলন কোনো সংবিধান মেনে হয়নি। সংবিধানের দোহাই দিয়ে আগামীতে সরকারে আসা যেকোনো রাজনৈতিক শক্তি এটিকে অস্বীকার করতে পারে। এর বৈধতা বাতিল করে অভ্যুত্থানকারীদের বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় বিচারের মুখোমুখি করতে পারে। সেটি যেন কেউ না করতে পারে তার জন্য জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র ঘোষণা করা জরুরি ছিল। আর সেটিই হতে যাচ্ছে ঐতিহাসিক একদফা ঘোষণার স্থান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে। এ ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে এ দেশের মানুষের আশা- আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে বলেও জানান তিনি। 

এদিকে গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পৃক্ততা নাই। তিনি বলেন, এটিকে সরকার বেসরকারি উদ্যোগ হিসেবে দেখতে চায়। যারা এটিকে সমর্থন করছেন, তারা বেসরকারি উদ্যোগকে সমর্থন করছেন। 

এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংবাদ সম্মেলনে আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমরা চাই, মুজিববাদী সংবিধানকে কবরস্থ ঘোষণা করা হবে। যেখান থেকে একদফার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল, ঠিক সেই জায়গা থেকে মুজিববাদী বাহাত্তরের সংবিধানের কবর রচিত হবে। আমরা প্রত্যাশা রাখছি, জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রে নাৎসিবাদী আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে অপ্রাসঙ্গিক ঘোষণা করা হবে। এরই মধ্যে ঘোষণাপত্রের খসড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে পাঠানো হয়েছে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ৩১শে ডিসেম্বর এই ঘোষণাপত্র পাঠ করা হবে। তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রটি ৫ই আগস্টে হওয়া উচিত ছিল। এটি না হওয়ার কারণে গণমাধ্যম, বুদ্ধিজীবী পাড়াসহ সব জায়গায় ফ্যাসিবাদের পক্ষের শক্তিগুলো ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। দুই হাজারের বেশি শহীদ ও ২০ হাজারের বেশি আহতের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও বর্তমানে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, আমরা বিপ্লবের একটিমাত্র ধাপ অতিক্রম করেছি। জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র আরও আগে ঘোষণা করা প্রয়োজন ছিল। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের এই বিপ্লব যেমন ফ্যাসিস্টবিরোধী সবাইকে ধারণ করতে পেরেছিল, এই ঘোষণাপত্রও সবার আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করতে পারবে। এর মধ্যে ঘোষণাপত্রের একটি খসড়া করা হয়েছে। এই বিপ্লবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল-মত, ধর্ম ও বয়সের যে মানুষেরা সরাসরি অংশ নিয়েছেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে তাদের মতামত নেয়া হচ্ছে। এটি সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করা হচ্ছে। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আমরা জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র ঘোষণা করবো। সেটা সংবিধানে যুক্ত করে সেকেন্ড রিপাবলিক করার দায়িত্ব সরকারের।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto