কুখ্যাত এপস্টেইন ইস্যু থেকে বাঁচতেই কি ওবামার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের অভিযোগ আনলেন ট্রাম্প

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের অভিযোগ এনেছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কোনো প্রমাণ উপস্থাপন না করেই তিনি বলেছেন, ওবামার নেতৃত্বে তাঁকে মিথ্যাভাবে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার একটি চেষ্টা চলেছে। ওবামা–ই ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাঁর নির্বাচনী প্রচারণাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা চালিয়েছিলেন।
অবশ্য ওবামার এক মুখপাত্র ট্রাম্পের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘এই উদ্ভট অভিযোগগুলো হাস্যকর এবং সবার মনোযোগ অন্যদিকে ঘোরানোর দুর্বল চেষ্টা মাত্র।’
ট্রাম্প অতীতে বহুবার ওবামার নাম ধরে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়েছেন। তবে জানুয়ারিতে আবার প্রেসিডেন্ট পদে ফিরে আসার পর এবারই প্রথম তিনি তাঁর ডেমোক্র্যাট পূর্বসূরির বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার মতো গুরুতর অভিযোগ এনেছেন।
ওভাল অফিসে বক্তব্য দেওয়ার সময় ট্রাম্প তাঁর গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের এক মন্তব্যের জের ধরে এসব কথা বলেন।
গত শুক্রবার গ্যাবার্ড হুমকির সুরে বলেছেন, ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ বিষয়ে গোয়েন্দা মূল্যায়ন করা নিয়ে তিনি ওবামা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনতে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন।
২০১৭ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের এক মূল্যায়নে বলা হয়েছিল, রাশিয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে, হ্যাকিং করে এবং রুশ বট ফার্ম ব্যবহার করে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের প্রচারণায় ক্ষতি করার এবং ট্রাম্পকে সহায়তা করার চেষ্টা করেছে।
তুলসী কিছু গোপন নথি প্রকাশ করে বলেন, যে তথ্য তিনি প্রকাশ করছেন, তা প্রমাণ করে যে ২০১৬ সালে ট্রাম্পকে দুর্বল করতে ওবামা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা ‘দেশদ্রোহী ষড়যন্ত্র’ করেছিলেন।
তবে ডেমোক্র্যাটরা এই দাবিকে মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
এ বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেন, ‘সেখানে প্রমাণ আছে, তিনি (ওবামা) দোষী। এটা ছিল দেশদ্রোহের অপরাধ। তাঁরা নির্বাচন চুরি করার চেষ্টা করেছেন, নির্বাচনকে জটিল ও অস্পষ্ট করে তোলার চেষ্টা করেছেন। তাঁরা এমন সব কাজ করেছেন, যা অন্য কেউ, এমনকি অন্য কোনো দেশের কেউ কল্পনাও করতে পারবে না।’
২০১৭ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের এক মূল্যায়নে বলা হয়েছিল, রাশিয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে, হ্যাকিং করে এবং রুশ বট ফার্ম ব্যবহার করে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের প্রচারে ক্ষতি করার এবং ট্রাম্পকে সহায়তা করার চেষ্টা করেছে।
সেখানে প্রমাণ আছে, তিনি (ওবামা) দোষী। এটা ছিল দেশদ্রোহিতা। তারা নির্বাচন চুরি করার চেষ্টা করেছে, নির্বাচনকে জটিল ও অস্পষ্ট করে তোলার চেষ্টা করেছে। তারা এমন সব কাজ করেছে, যা অন্য কেউ, এমনকি অন্য কোনো দেশের কেউ কল্পনাও করতে পারবে না।
…ডোনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট
ওই মূল্যায়নে আরও বলা হয়েছিল, রাশিয়ার এই প্রচেষ্টার প্রকৃত প্রভাব সম্ভবত সীমিত ছিল এবং এতে ভোটের ফলাফল পরিবর্তনের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এ নিয়ে ওবামার মুখপাত্র প্যাট্রিক রডেনবুশ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘রাশিয়া ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে চেয়েছিল, কিন্তু ভোটের ফলাফল পরিবর্তন করতে সফল হয়নি। গত সপ্তাহে (গ্যাবার্ড) প্রকাশিত নথিতে এ নিয়ে এমন কিছু নেই, যা ব্যাপকভাবে গৃহীত এ সিদ্ধান্তকে খণ্ডন করতে পারে।’
ষড়যন্ত্রতত্ত্ব প্রচারের জন্য পরিচিত ট্রাম্প ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ বিষয়ে গোয়েন্দা মূল্যায়নগুলোকে একাধিকবার ‘প্রহসন’ বলে বর্ণনা করেছেন।
সম্প্রতি ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে একটি ভুয়া ভিডিও আবার পোস্ট করেছেন। ওই ভিডিওতে বারাক ওবামাসহ বিভিন্ন ডেমোক্র্যাট নেতাকে বলতে শোনা যায়, ‘কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।’
ভিডিওতে আরও দেখা যায় যে ওবামাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে নেওয়ার সময় ট্রাম্প হাসছেন। পরে ওবামাকে কমলা রঙের কারাবন্দীর পোশাক পরে কারাগারের শিকের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
এআই দিয়ে নির্মিত ৪৫ সেকেন্ডের ভিডিওর শেষ অংশে দেখা যায়, ট্রাম্প ও ওবামা হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে একসঙ্গে বসে আছেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের সদস্যরা ওবামাকে গ্রেপ্তার করছেন। এ সময় ব্যাকগ্রাউন্ডে জনপ্রিয় গান ‘ওয়াইএমসিএ’ বাজতে শোনা যায়।
গত সপ্তাহে (গ্যাবার্ড কর্তৃক) প্রকাশিত নথিতে এ নিয়ে এমন কিছু নেই, যা ব্যাপকভাবে গৃহীত এ সিদ্ধান্তকে খণ্ডন করতে পারে।
….প্যাট্রিক রডেনবুশ, ওবামার মুখপাত্র
ভিডিওতে আরও দেখা যায়, ওবামাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে নেওয়ার সময় ট্রাম্প হাসছেন। পরে ওবামাকে কমলা রঙের কারাবন্দীর পোশাক পরে কারাগারের শিকের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
ট্রাম্পের ওপর চাপ বাড়ছে
বলা হচ্ছে, ট্রাম্প তাঁর রক্ষণশীল সমর্থকদের চাপের মুখে কুখ্যাত জেফরি এপস্টেইন সম্পর্কে আরও তথ্য প্রকাশের পরিবর্তে অন্যান্য বিষয়ে মনোযোগ সরানোর চেষ্টা করছেন। শিশু যৌন নিপীড়ন ও যৌনদাসী হিসেবে নারী ও শিশুদের পাচারের অভিযোগে মার্কিন ধনকুবের এপস্টেইন গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এবং তাঁর বিচার শুরু করার প্রক্রিয়া চলছিল।
কিন্তু বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর আগেই ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি কারাগার থেকে এপস্টেইনের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তবে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে বলেও ষড়যন্ত্রতত্ত্ব প্রচলিত আছে। এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বাতাস দেওয়া কয়েকজন এখন ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছেন।
ওভাল অফিসে ট্রাম্পকে এপস্টেইন সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি দ্রুত বিষয় পরিবর্তন করে ওবামা ও ক্লিনটনের বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘তারা আমার সঙ্গে যা করেছে, সেটা ঠিক হোক বা ভুল, সেটা নিয়ে (কাজ) শুরু করার সময় হয়েছে, জনগণ যা চায় তা করার সময় হয়েছে। ওবামা হাতেনাতে ধরা পড়েছেন।’