Bangladesh

কুমিল্লা পরিবেশ অধিদপ্তর: পাঁচজনের বেপরোয়া দুর্নীতির সিন্ডিকেট, অবৈধ উপায়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ * ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও জিম্মি এ সিন্ডিকেটের কাছে

কুমিল্লা পরিবেশ অধিদপ্তরে বেপরোয়া পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতির সিন্ডিকেট। অদৃশ্য শক্তির আশ্রয় নিয়ে বছরের পর বছর জেলার পরিবেশসংক্রান্ত সব কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করছে এ সিন্ডিকেট। তাদের এখান থেকে বদলি করার ক্ষমতা নেই কারোর। 

অভিযোগ রয়েছে, এ সিন্ডিকেটকে চাহিদা অনুসারে ঘুস দিলে সব অসাধ্য কাজ হয়ে যায়। অবৈধ ইটভাটা, অটোরাইস মিল, বিভিন্ন কলকারখানা, ভবন, পলিথিন ব্যবসা, নদীর মাটি উত্তোলন, দীঘি, পুকুর, জলাশয় ভরাট, পাহাড় কাটাসহ পরিবেশের ক্ষতিকারক সব কর্মকাণ্ডের বৈধতা মেলে এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। সিন্ডিকেটের সদস্যরা হলেন, পরিদর্শক মো. নুর উদ্দিন, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর তাজুল ইসলাম, ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট মো. মোরশেদ আলম, হিসাবরক্ষক মো. আমির হোসেন, জুনিয়র কেমিস্ট মোজাম্মেল হক টিপু। এ পাঁচজনের কাছে অনেকটাই অসহায় এ দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারাও।

অনুসন্ধানে জানা যায়, যে কোনো ইটভাটা এবং কলকারখানা ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাটের প্রত্যয়নপত্র, ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স, আয়কর রিটার্নের কপি, ব্যাংক চালানসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। সূত্র জানায়, কুমিল্লা পরিবেশ অধিদপ্তরে ফাইল প্রস্তুত করে অনলাইনে আবেদনের আগে সিন্ডিকেটের সঙ্গে চুক্তি করতে হয়। অন্যথায় দ্বিতল ভবনের ওই দপ্তরের নিচ তলাতেই সিন্ডিকেটের কাছে ফাইল ঘোরাঘুরি করতে থাকে। এ সিন্ডিকেটকে ম্যানেজ না করলে কখনো ফাইল উপরের তলায় উঠে না। 

যুগান্তরের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে কুমিল্লা পরিবেশ অধিদপ্তরের দুর্নীতির সিন্ডিকেটের আসল চিত্র। পাঁচ সদস্যের সিন্ডিকেট ভাগ করে জেলার ইটভাটাসহ সব কলকারখানার ফাইল নিয়ন্ত্রণ করছে। 

প্রতিজনের হাতে শতাধিক ফাইলের নিয়ন্ত্রণ। তাছাড়া পরিবেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের নিয়ন্ত্রণও এ সিন্ডিকেটের হাতে। মূলত ডাটা এন্ট্রি অপারেটর তাজুল ইসলামই নিয়ন্ত্রণ করছেন এ সিন্ডিকেট। সব কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকলেও সিন্ডিকেটের ঘুস পরিশোধ না হলে কোনো ফাইলই অনলাইনে এন্ট্রি করেন না সিন্ডিকেট প্রধান তাজুল ইসলাম। নিজ জেলার এ কার্যালয়ে তিনি ৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে কর্মরত আছেন। 

ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে একাধিকবার বদলির চেষ্টা করলেও তার বড় ভাই বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিবের জনসংযোগ কর্মকর্তা রমিজ উদ্দিনের প্রভাবে তা নাকচ হয়ে যায়। সিন্ডিকেটের অপর সদস্য ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট মো. মোরশেদ আলম চার বছর ধরে এ কার্যালয়ে আছেন। তাজুল ও মোরশেদ মিলেই কাগজপত্রের খুঁটিনাটি বের করে সেবাপ্রত্যাশীদের হয়রানি করে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে থাকেন। 

হিসাবরক্ষক আমির হোসেন পাঁচ বছর ধরে এ কার্যালয়ে থেকে দালাল সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। জুনিয়র কেমিস্ট জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার মোজাম্মেল হক টিপু পাঁচ বছর কুমিল্লায় চাকরি করার পর অন্যত্র বদলি হয়ে আবারও কুমিল্লায় এসে সিন্ডিকেটে যুক্ত হয়েছেন। টিপুর রয়েছেন নিজস্ব দালাল সিন্ডিকেট। তাকে চাহিদা অনুসারে ম্যানেজ না করলে সেবা গ্রহীতাদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ অনেকের। তাছাড়া ইন্সপেক্টর নুর উদ্দিনও স্রোতের সঙ্গে গা ভাসিয়ে সিন্ডিকেটের সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। 

সূত্র জানায়, এরই মাঝে এ সিন্ডিকেট ভাঙতে অধিদপ্তরের পরিচালক এবং উপপরিচালকসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা গত কয়েক বছর ধরে অনেক চেষ্টা করেছেন। তাদের অন্যত্র বদলি করা হলেও প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে মুহূর্তের মধ্যেই এ বদলির আদেশ স্থগিত হয়ে যায়। সম্প্রতি উপপরিচালক হিসাবে এ কার্যালয়ে যোগ দিয়েছেন মোসাব্বের হোসেন মুহাম্মদ রাজীব। যোগদানের পর সিন্ডিকেটের এমন বৃত্ত দেখে তিনিও রীতিমতো হতবাক।

জেলার মুরাদনগর উপজেলার রায়তলা গ্রামের মেসার্স ওয়ান ব্রিকসের মালিক বাচ্চু মিয়া মোবাইল ফোনে জানান, তার ইটভাটাটি পরিবেশের ক্ষতিকারক স্থানে অবস্থিত হলেও প্রতিবছর তাজু-মোরশেদসহ পাঁচ সদস্যের সিন্ডিকেটকে ১০ লাখ টাকা দিয়ে পরিবেশের ছাড়পত্র সংগ্রহ করে ভাটা পরিচালনা করছেন।
উপজেলার বাখরনগর এলাকায় অবস্থিত মেসার্স শাপলা ব্রিকসের মালিক আব্দুল করিম জানান, পাঁচ সদস্যের সিন্ডিকেটকে চাহিদা অনুসারে টাকা দিলে পরিবেশের ছাড়পত্র পাওয়া যায়। আমি আগে টাকা দিয়ে ভাটা চালাইছি। এখন টাকা দিতে পারি না বলেই ভাটাও চালাতে পারি না। 

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সিন্ডিকেট প্রধান তাজুল ইসলাম বলেন, আমি শুধু ডাটা এট্রি করি। বাকি কাজ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা করে থাকেন। এখানে কোনো সিন্ডিকেট নেই। ঘুস-দুর্নীতির সঙ্গে আমি জড়িত নই। একইভাবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন পরিদর্শক মো. নুর উদ্দিন, ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট মো. মোরশেদ আলম, হিসাবরক্ষক মো. আমির হোসেন, জুনিয়র কেমিস্ট মোজাম্মেল হক টিপু।

কুমিল্লা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোসাব্বের হোসেন মুহাম্মদ রাজীব বলেন, আমি সদ্য যোগদান করে এমন সিন্ডিকেটের আভাস পেয়েছি। বিষয়টি আমি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। কোনো সেবা প্রত্যাশী যেন তাদের সঙ্গে কোনো বিষয়ে অনৈতিক লেনদেন না করেন সে বিষয়টিও আমি সবাইকে জানিয়েছি। তাদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d