Science & Tech

কৃত্রিম সভ্যতার হাতছানি

বর্তমানে বিশ্ব কাঁপানো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এখন সব কাজেই পারদর্শী। নুডলস রান্নায় কোন কোন মসলা কীভাবে মেশালে ভালো স্বাদ হবে, কীসের সঙ্গে কী মেশালে রান্নায় স্বাদ বৈচিত্র্য আসবে– সবকিছুতেই দক্ষ এআই।
বৈশ্বিক বাজার ছেয়ে গেছে এআই জেনারেটেড কুক-বুকে। সাধারণ মানুষ জানতেও পারবে না রেসিপি বানিয়েছে এআই। সময় বাঁচিয়ে সুস্বাদু খাবার রান্না করার টিপসও আছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এমন অভিজ্ঞতা সারাবিশ্বেই হইচই ফেলেছে। সারাবিশ্বে এআই তো সবই পারছে– এমন গুঞ্জন। প্রশ্ন উঠছে, এআই কি রাঁধতে জানে? সদুত্তর হবে– হ্যাঁ, সে রান্না করতেও পারদর্শী।

বাজারে দারুণ বিকিকিনি হচ্ছে কুক-বুক। ওই সব বই এআই জেনারেটেড। অথচ শুধু যদি কাভার দিয়ে বিবেচনার বিষয় হয়, তারও উত্তর ওই সব বই-ই। লোকে জানতেও পারবে না, রেসিপি নির্মাতা এআই। কী নেই সেখানে? সদ্য রান্না করতে শেখা রাঁধুনিদের জন্য জিভে জল আনার মতো খাবারের রেসিপি, সময় বাঁচিয়ে সুস্বাদু খাবার রান্না করার হাজারো টিপস। কাটতিও বেশ ভালো।

শুধু বই বিক্রি নয়, কেনার পরে বই দেখে কী রান্না করছেন ক্রেতারা, তা অবশ্য রিভিউ থেকে সহজেই অনুমেয়। অথচ কুক-বুকের বাজারে প্রতিযোগিতা দৃশ্যমান। নতুন বই বাজারে আসতে না আসতেই অন্য কোনো সংস্থা এআই দিয়ে আবার নতুন কোনো বই বাজারে নিয়ে আসছে। হয়তো আগেরটাতে ভালো মানের ছবি ছিল না; কিন্তু সরব প্রতিযোগিতায় কাটতি বাড়াতে ছবি দিচ্ছে অন্য প্রকাশক। আর সেই দৃষ্টিনন্দন সুন্দর ছবিই নজর কাড়ছে ক্রেতাদের।

কিন্তু ওই রেসিপির পরামর্শে রান্না করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, বারবারই ভুল হচ্ছে। সবই ভুল। রান্না ভুল, কম্বিনেশন ভুল, এমনকি রেসিপি যেভাবে বর্ণনা করা হচ্ছে, সেটাও ভুল। শুধু তাই নয়, রান্না কৌশলও ভুল। বিশেষায়িত রেসিপি বইয়ে লেখা দুই কিলো মাখন লাগবে! বিশ্বের কেউ কোথাও শুনেছে যে দুই কিলো মাখন লাগে রান্নায়। যুক্তির খাতিরে যদি ধরে নেওয়া যায়, পরিমাণটা ভুল হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) হয়তো এমন ভুল করেই চলেছে। যেমন শ্রীলঙ্কার কারিওয়ার্স্ট ‘কারি’ নাকি সবচেয়ে ভালো খাওয়া যায় ভাত দিয়ে, আজব কথা শুনেছে কেউ কখনও।
ঘটনাটা তো গেল এআই প্রযুক্তির নিজের বুদ্ধির দৌড়। আর যেসব বই কিছুটা ভালো, মানে কিছুটা বিশ্বাসযোগ্য, ওইগুলো কি আদৌ কপি করা রেসিপি– প্রশ্ন থাকছেই। কারণ, রান্নায় বিশেষজ্ঞরা খতিয়ে দেখেছেন বহু রেসিপিই কপি করা, কিন্তু কপিরাইট যুক্তিতে শব্দগুলো ধরার সুযোগ নেই। বই নিয়ে বিপত্তি বাড়লেও বিকিকিনিতে ভাটা পড়ছে না।

সবকিছু যেন অধরাই থেকে যাচ্ছে। অন্যদিকে এআই দিয়ে তৈরি রেসিপির কপিরাইট ধরছে এআই নিজেই। তাহলে আর এআই প্রযুক্তির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য কি আদৌ থাকে।
যত নেতিবাচক কথাই হোক না কেন, এআই অপ্রতিরোধ্য– তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। রন্ধনযন্ত্রে ধীরে ধীরে প্রবেশ করবে এআই প্রযুক্তির যন্ত্র। ইতোমধ্যে বিশ্ববাজারে এমন যন্ত্রের যশ আর খ্যাতি দুটোই ছড়িয়েছে। সময়টা এমন আসবে এআই নিয়ন্ত্রিত জীবন ব্যবস্থায় সবকিছুতেই যন্ত্রের আধিপত্য দৃশ্যমান হবে। নাছোড়বান্দা প্রযুক্তি ছড়িয়ে পড়বে জীবনের সব অংশে। নির্মাণ, চিকিৎসা, নিরাপত্তা এমনকি রন্ধনশালাতেও নিজের দৌরাত্ম্য প্রমাণ করবে আজকের দাপুটে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) যান্ত্রিকতা।
অভূতপূর্ব যান্ত্রিক সভ্যতার দিকে একটু একটু করে এগিয়ে চলেছি। হয়তো তখন এআই হয়ে উঠবে জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা হবে অপরিহার্য দৃশ্যমান আর বাস্তব সত্য।  

যতই বলা হোক না কেন, ভবিষ্যতের টেস্ট এআইর হাতে, এআই কি আর গরম রান্না হাতের তালুতে নিয়ে চাখতে পারবে? দেখলেও বুঝতে পারবে? মানুষের স্বাদ-গন্ধ সব এআইর হাতে– এমন যান্ত্রিক সভ্যতা অনুমেয়; কিন্তু তার আস্ফালন কতটা ঝুঁকিপূর্ণ, তা সময়ই বলে দেবে।

মানুষের পক্ষে যেসব কাজ করা প্রায় অসম্ভব, সেগুলো অনায়াসে করে ফেলতে পারে এআই রোবট। আদেশকর্তার প্রয়োজনে তারা কাজ করতে পারবে। কৃত্রিমতার ছোঁয়া থাকলেও প্রতিটি কাজ হবে নিখুঁত। ফলে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে কাজ করাতে আগ্রহী হবেন উদ্যোক্তারা -ইলন মাস্ক, স্পেসএক্স প্রতিষ্ঠাতা

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button