Bangladesh

কেন এক্সটার্নাল ভিসি চান বুটেক্স শিক্ষার্থীরা?

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশের একের পর এক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্যদের পদত্যাগ করতে দেখা যায়। আওয়ামী আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত ভিসি’র পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ সরকার পতনের পর থেকে সরব থাকলেও, পদত্যাগ করতে নারাজ ছিলেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) সদ্য সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহ আলিমুজ্জামান। তবে শিক্ষার্থীদের একাংশ বিভিন্ন ইস্যুতে ক্লাস বয়কট করলে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরানোর জন্য তিনি বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) পদত্যাগ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেড-১ এবং গ্রেড-২ মিলিয়ে মোট ১০ জন অধ্যাপকদের মধ্য থেকে একজনকে ভিসি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে এই শূন্য আসন পূরণ করা হোক এমনটা চান অধিকাংশ শিক্ষক। তবে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই চান যেনো বুটেক্সের বাইরের (এক্সটার্নাল) কাউকে ভিসি নিয়োগ দেয়া হোক। বুটেক্স সাংবাদিক সমিতির করা একটি অনলাইন ভোটের আয়োজনে দেখা যায়, ৯০ ভাগ সদস্য চান এক্সটার্নাল ভিসি এবং ১০ ভাগ সদস্য চান বুটেক্সের কোনো অধ্যাপকই যেনো ভিসি হোন। যেখানে অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেখা যায় শিক্ষার্থীরা নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ভিসি দাবি করেন সেখানে বুটেক্সের শিক্ষার্থীদের এক্সটার্নাল ভিসি দাবি করাটা নজিরবিহীন। কেনই বা এক্সটার্নাল ভিসি চাচ্ছেন বুটেক্স শিক্ষার্থীরা সেই বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়েছেন মো: রাবী সিদ্দিকী (জুবায়ের)।

বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ফ্যাশন এন্ড ডিজাইন বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মাইফ মুহাম্মাদ কৃতি বলেন, এক্সটার্নাল ভিসি কোনো নির্দিষ্ট ডিপার্টমেন্টের প্রতি স্বভাবতই পক্ষপাতী হবেন না। তিনি কাজ করবেন ন্যায্যতার ভিত্তিতে ও ছাত্রকল্যাণের কথা চিন্তা করেই এবং তার নিজস্ব ডিপার্টমেন্ট ভিত্তিক কোনো বলয়ও থাকবে না, যে বলয়টির ফলে দেখা যায় কোনো বিশেষ ডিপার্টমেন্টই সুবিধা পাচ্ছে ও অন্যরা বঞ্চিত হচ্ছে। তাছাড়া জুলাই বিপ্লবের সময় গুটিকয়েক শিক্ষক-শিক্ষিকা বাদে কেউ ছাত্রদের পক্ষে দাড়াননি।এক্সটার্নাল ভিসির অবশ্যই প্রশাসনিক কর্মদক্ষতা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে তিনি যদি ইতোমধ্যেই কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যনির্ধারণী পদে কর্মরত থাকেন তবে সেটি বিবেচিত হতে পারে। এছাড়া তিনি গবেষণার উপর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিবেন, গবেষণার জন্য একটি সহজ এবং প্রসারিত পরিবেশের সৃষ্টি করবেন । এখন যদি এক্সটার্নাল ভিসির বিপরীতে কোনো স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে তবে এটাই প্রতীয়মান হবে যে, এই গোষ্ঠীর কোনো প্রার্থীই তাদের নিজেদের স্বার্থের বাইরে যেয়ে কল্যাণকর কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। ইতোমধ্যেই সেশনজট-স্থবিরতার কারণে শিক্ষার্থী জীবন দীর্ঘায়িত হয়েছে। এখন যদি শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ভবিষ্যত ভিসিকে সহায়তা না করেন তবে বিষয়টি দুঃখজনক। নতুন ভিসির প্রতি আমার চাওয়া থাকবে যে, তিনি তার দপ্তরের দরজা সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য খোলা রাখবেন, ন্যায্য দাবিদাওয়া বাস্তবায়ন করবেন এবং ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের যে সিদ্ধান্ত সেটির বরখেলাপ তিনি করবেন না।

ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাফিজুর সাব্বির বলেন, বুটেক্সের বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের এক্সটার্নাল ভিসি চাওয়া সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের মাঝে সৃষ্ট অন্তর্কোন্দল, গ্রুপিং, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতিসহ নানাবিধ সমস্যাগুলোর কারণে একাডেমিক কার্যক্রমে ধীরগতি ও ক্যাম্পাসে পড়ালেখার বৈরী পরিবেশ তৈরীর দৃঢ় সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এক্সটার্নাল ভিসি যেহেতু এই প্রতিষ্ঠানের হবেন না তাই তিনি কোন গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে নিরপেক্ষ চিন্তাচেতনা, আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে প্রতিষ্ঠানের সমস্যাগুলোর সমাধানে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিতে পারবেন ও ছাত্রকল্যানে অধিক মনোযোগ দিবেন। এক্সটার্নাল ভিসি প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে যুক্ত না থাকায় তার সিদ্ধান্তগুলো নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি হবে। অন্যদিকে ইন্টার্নাল ভিসির ক্ষেত্রে কয়েকটি সমস্যা হতে পারে। যেমন ইন্টার্নাল প্রার্থী ইতোমধ্যেই প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও দলীয়করণের সাথে যুক্ত থাকতে পারেন, যা ন্যায্য সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। ইন্টার্নাল ভিসি প্রার্থীরা পরিচিত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রভাবের কারণে নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধাগ্রস্ত হতে পারেন। একজন এক্সটার্নাল ভিসি’র শিক্ষা ব্যবস্থা ও প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা, নিরপেক্ষভাবে নেতৃত্ব দানে সক্ষমতা, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিয়ে সমস্যার সমাধান করার অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন বলে মনে করি। সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ কল্যাণ নিশ্চিতকরণে কাজ করতে হবে। আমরা বুয়েটের মত স্বনামধন্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভিসি নিয়োগের আশা ব্যক্ত করছি। এরপরেও যদি এক্সটার্নাল ভিসি শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সাপোর্ট না পান, প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করা হয় সেক্ষেত্রে বুটেক্সের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল রাফি বলেন, চব্বিশের গণ অভ্যুত্থানে হাজারো প্রাণ আর অগণিত পঙ্গুত্বের বিনিময়ে স্বৈরাচার হটিয়ে পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ। সমগ্র বাংলাদেশে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে যে সংস্কার কার্যক্রম চলমান, দেরীতে হলেও বুটেক্স এখন এই সংস্কারের অংশ। বুটেক্স ক্যাম্পাসের সর্বোচ্চ পদধারী ব্যাক্তিটি যেন অবশ্যই শিক্ষার্থী বান্ধব হয় সেটাই আমরা প্রত্যাশা করি। দলীয় পরিচয় ধারণকারী এবং রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী কেউ যেনো ভিসি না হয় সেটাই আমাদের চাওয়া। তবে সুবিধাবাদী মানুষের হাতে প্রতিষ্ঠান তুলে দেওয়া হলে পরিস্থিতি হিতে বিপরীত হয়ে যাবে। বুটেক্সের অধিকাংশ শিক্ষক বিগত ১৬ বছরে স্বৈরাচারী শাসনামলে নিয়োগ ও পদন্নোতি প্রাপ্ত। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনায়, সুবিধাভোগী মানুষ ও তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আমরা সকলেই অবগত। এরই প্রেক্ষিতে টেক্সটাইল ব্যাকগ্রাউন্ডের একজন এক্সটার্নাল ভিসিই আমার চাওয়া।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মুবাশ্বির হাসান বলেন, আমরা এমন একজনকে ভিসি চাই যিনি হবেন নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় এবং শিক্ষার্থীদের অগ্রগতিই হবে যার প্রধান উদ্দেশ্য। একজন ভিসি নিয়োগের সময় তার গ্রহণযোগ্যতা শিক্ষার্থীদের মাঝে কতটুকু সেটি মন্ত্রণালয়ের গুরুত্ব দেওয়া উচিত। ভিসি নিয়োগের ক্ষেত্রে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকরাই প্রার্থী হলেও বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে তাদের গ্রহণযোগ্যতা কম। প্রথমত, তাদের কার্যক্রম তাদের পক্ষে কথা বলে না। দ্বিতীয়ত, দেশের ক্রান্তিলগ্নে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় আমাদের শিক্ষার্থীদের পাশে অধিকাংশ সিনিয়র শিক্ষকদের পাওয়া যায়নি। আর প্রতিটি সিনিয়র শিক্ষকদেরই লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতিতে সম্পৃক্ততার খবর পাওয়া যায়। তাই বুটেক্সের সকল সাধারণ শিক্ষার্থীদের চাওয়া একজন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ এক্সটার্নাল ভিসি। বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু একটি স্পেশালাইজড বিশ্ববিদ্যালয় সেহেতু ‘বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০’ অনুযায়ী টেক্সটাইলের সাথে সম্পৃক্ত কেউ যদি ভিসি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয় সেক্ষেত্রে তা সকলের জন্য গ্রহণযোগ্য হবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স এক যুগ পার হলেও এটি একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে নি। সুতরাং পরবর্তী ভিসি এই বিষয়টি নিয়েও যথাযথ কাজ করে যাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছি। ভিসি হিসেবে এক্সটার্নাল কেউ নিয়োগ পেলেও বর্তমান ক্যাম্পাসে তিনি শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসহযোগিতার শিকার হতে পারেন যা ইতোপূর্বে হয়েছে। এই সমস্যা মোকাবিলার জন্য তার নেতৃত্বের গুণাবলী অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং শিক্ষার্থীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে এ বিষয়ে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d