কেন ট্রাম্পের মনোনীত গোয়েন্দা প্রধান এত বিতর্কিত?
যুক্তরাষ্ট্রের নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তুলসি গ্যাবার্ডকে তার জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক হিসেবে মনোনীত করেছেন। কিন্তু ডাইরেক্টর অফ ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স (ডিএনআই) হিসেবে তুলসিকে বেছে নেয়া ট্রাম্পের বিতর্কিত নিয়োগগুলির অন্যতম হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা নিয়ে সমালোচনা করছেন রিপাবলিকান নেতারাও।
তুলসি গ্যাবার্ড ডিএনআই হিসেবে ১৮টি সংস্থা নিয়ে গঠিত মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগের তত্ত্বাবধান করবেন। সিআইএ এবং ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স ডিরেক্টরের দপ্তরের পাশাপাশি এগুলোর মধ্যে রয়েছে এয়ার ফোর্স ইন্টেলিজেন্স, আর্মি ইন্টেলিজেন্স, কোস্ট গার্ড ইন্টেলিজেন্স, ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি, ডিপার্টমেন্ট অফ এনার্জি, ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি, ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট, ডিপার্টমেন্ট অফ ট্রেজারি, ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই), মেরিন কর্পস ইন্টেলিজেন্স, ন্যাশনাল জিওস্প্যাশিয়াল-ইনটেলিজেন্স এজেন্সি, ন্যাশনাল রিকোনাইসেন্স অফিস, ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি, নেভি ইন্টেলিজেন্স এবং স্পেস ফোর্স ইন্টেলিজেন্স।
২০২২ সালের মার্চে তুলসি একটি ভিডিওতে বলেছিলেন, ইউক্রেনে ২৫টিরও বেশি মার্কিন-অর্থায়নকৃত জৈব গবেষণাগার রয়েছে। ইউক্রেনে মার্কিন-সমর্থিত জৈব অস্ত্রের গবেষণাগারগুলি কাজ করছে বলে মস্কোতে একটি দাবির সূত্রপাত হওয়ার পরে তিনি এটি বলেছিলেন। তার দাবি যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউক্রেন অস্বীকার করেছিল।
তুলসির মন্তব্য প্রাক্তন রিপাবলিকান প্রতিনিধি অ্যাডাম কিনজিঙ্গার সহ অন্যান্য রিপাবলিকানদের দ্বারা সমালোচিত হয়েছিল। কিনজিঙ্গার গ্যাবার্ডের বিবৃতিকে বিশ্বাসঘাতক বলে অভিহিত করেছিলেন। সিনেটর মিট রমনি বলেছিলেন যে তুলসি ভুয়া রুশ প্রচারণা চালাচ্ছেন।
কিন্তু কে এই তুলসী গ্যাবার্ড? ৪৩ বছর বয়সী তুলসি মার্কিন কংগ্রেসের প্রথম হিন্দু এবং যুক্তরাষ্ট্রের সামোয়া অঞ্চলে জন্মগ্রহণকারী প্রথম সদস্য। তিনি হাওয়াইতে বেড়ে উঠেছেন এবং তার শৈশবের এক বছর ফিলিপাইনে কাটিয়েছেন। মার্কিন সেনাবাহিনীতে কাজ করা তুলসি ইরাক যুদ্ধের অভিজ্ঞ যোদ্ধা। তাকে কুয়েতেও মোতায়েন করা হয়েছিল।
তুলসি ২০১৩ থেকে ২০২১ পর্যন্ত চার মেয়াদে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে হাওয়াইয়ের ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি ছিলেন। ২০২২ সালে তিনি দল ত্যাগ করেন। এই বছরের আগস্টে তিনি প্রেসিডেন্ট পদে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাম্পকে সমর্থন করেন। অক্টোবরে তুলসি উত্তর ক্যারোলাইনায় ট্রাম্পের সমাবেশে রিপাবলিকান পার্টিতে যোগদানের ঘোষণা দেন।
তুলসি গ্যাবার্ডের ভারত সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে রয়েছে ব্যাপক ঘনিষ্ঠতা, যার সাথে তিনি একাধিকবার দেখা করেছেন। ইন্টারসেপ্ট নিউজ সাইট ২০১৯ সালে খুঁজে পায় যে, তুলসির নির্বাচনী প্রচারণাগুলি একটি হিন্দুত্ববাদী আন্দোলনের সাথে যুক্ত ১শ’ জনেরও বেশি ব্যক্তির কাছ থেকে বড় ধরণের অনুদান পেয়েছে, যেখানে মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি অন্যতম অংশ।
তুলসি ২০১৯ সালের জানুয়ারীতে উত্তর প্রদেশের বারাণসীতে মোদি সরকারের বার্ষিক প্রবাসী ভারতীয় দিবসে সম্মানিত অতিথি ছিলেন। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয়-আমেরিকান শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী গুর্পাতওয়ান্ত সিং পান্নুনকে হত্যার ব্যর্থ ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মোদি সনরকারের প্রাক্তন ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা বিকাশ যাদবের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ আসার এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে তুলসিকে ডিএনআই হিসেবে এই মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
তুলসি সাম্প্রতিক মাসগুলিতে যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীদের সমালোচনা করেছেন এবং তাদেরকে হামাসকে একটি উগ্র ইসলামী সংগঠন জিেিসব অভিহিক করে ফিলিস্তিনপন্থীদেরকে তাদের পুতুল হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধকে পুরোপুরি সমর্থ দিয়েছেন, যেখানে ৪৩হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই মহিলা এবং শিশু।
তুলসি গাজায় যুদ্ধবিরতিকে সমর্থন করেন বলে মনে হচ্ছে না। ফেব্রুয়ারীতে ইউটিউবে প্রচারিত একটি সাক্ষাৎকারে তিনি হামাসকে সামরিক ও আদর্শগতভাবে পরাজিত করতে হবে, এমন একটি হুমকি বলে অভিহিত করেছেন।
গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য জাতিসঙ্ঘের প্রস্তাবে মার্কিন সমর্থনের বিষয়ে তিনি কী ভাবছেন প্রশ্ন করা হলে, তুলসি বলেছেন যে এটিকে কৌশলগতভাবে মোকাবেলা করা দরকার। তিনি বলেন, ‹ইসরায়েলের জনগণের জন্য বিদ্যমান হুমকির বিষয়ে আমাদের বাস্তববাদী হতে হবে। তাই যতদিন হামাস ক্ষমতায় থাকবে, ততদিন ইসরায়েলের জনগণ নিরাপদ থাকবে না এবং শান্তিতে থাকতে পারবে না।’
তাহলে, যুক্তরাষ্ট্রে তুলসির নিয়োগ কী অর্থ বহন করে? মেরিন কর্নেল এবং ওয়াশিংটনের জেষ্ঠ্য উপদেষ্টা, এবং সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ-এর মার্ক ক্যানসিয়ান আল জাজিরাকে বলেছেন, তুলসির নিয়োগ স্পষ্টতই ট্রাম্পের প্রচারণার সময় তাকে সমর্থনের জন্য একটি পুরষ্কার।
ক্যানসিয়ান বলেছেন যে, গ্যাবার্ডের মনোনয়ন মার্কিন নীতিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয় না। তিনি বলেন, ‹গোয়েন্দা বিভাগে পরিবর্তন সম্ভবত ইউক্রেন, ইসরায়েল, ইরান এবং চীনের বিষয়ে প্রশাসনের বৃহত্তর নীতি পছন্দের দ্বারা চালিত হবে।’