কেন মানুষের মস্তিষ্ক ছোটো হয়ে আসছে?
বিশ্ব মানেই পরিবর্তনশীল। বিবর্তনে পাল্টায় নানা প্রাণীর রূপ। তবে আধুনিকতায় থিতু হওয়া বিশ্বে অনেক পরিবর্তনই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এবার তেমনই এক চিন্তার কথা শোনালেন বিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, আধুনিক মানুষের মস্তিষ্ক ক্রমাগত সংকুচিত হয়ে আসছে। গবেষণায় তারা দেখেছেন, এক লাখ বছর আগের মানুষের তুলনায় এখনকার মানুষের মস্তিষ্ক প্রায় ১৩ শতাংশ ছোট।
আর মানুষের মতিষ্কের এমন সংকোচনের পিছনে জলবায়ুর পরিবর্তন নাকি অন্য কিছুর দায় আছে সেই কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। ‘বড় মস্তিষ্ক’ মানুষকে প্রাণিজগতের অন্য অনেক কিছু থেকেই আলাদা করেছে। এর জোরে মানুষের চিন্তা ও উদ্ভাবনের ক্ষমতা বেড়েছে। মানুষের হাতে তৈরি হয়েছে অনেক কিছু। মানুষ গড়েছে নানা শিল্পম পৌঁছে গেছে চাঁদে।
একই আকারের অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় মানুুষের মস্তিষ্ক অনেকটাই বড়। প্রাণীদের মধ্যে শিম্পাঞ্জির সঙ্গে আমাদের মানবপ্রজাতির পূর্বপুরুষদের শেষবারের মতো মিল পাওয়া যায়। তখন থেকে ৬০ লাখ (৬ মিলিয়ন) বছর পর্যন্ত মানুষের মস্তিষ্ক আকারে প্রায় চার গুণ হয়েছে। তবে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, মানবজাতির মস্তিষ্ক অধিকতর বড় হওয়ার এ প্রবণতা হোমো সেপিয়েন্স তথা আধুনিক মানুষে এসে হয়েছে উল্টো। আধুনিক মানুষের মস্তিষ্কের গড় আকার সংকুচিত হওয়ার এ প্রবণতা চলছে ১ লাখ বছর ধরে।
২০২৩ সালের এক গবেষণায় জীবাশ্মবিদ ও নিউইয়র্ক সিটির আমেরিকান মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রির কিউরেটর ইমেরিটাস ইয়ান ট্যাটারসাল সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রাচীন মানবের মস্তিষ্কের আকৃতির পরিবর্তনের চিত্র তুলে ধরেছেন। এ ক্ষেত্রে মানুষের সবচেয়ে পুরোনো প্রজাতি থেকে শুরু করেন তিনি। আর শেষ করেন আধুনিক মানুষে এসে।
গবেষণায় ইয়ান দেখেন, প্রাচীন মানুষের আলাদা আলাদা প্রজাতির মধ্যে মস্তিষ্কের দ্রুত সম্প্রসারণ স্বাভাবিকভাবে ঘটেছে। আর সেটি ঘটেছে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকাজুড়ে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে। সময়ের সঙ্গে মস্তিষ্ক বড় হওয়া মানুষের প্রজাতির মধ্যে রয়েছে অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যাফারেনসিস, হোমো ইরেক্টাস, হোমো হাইডেলবার্গেনসিস ও হোমো নিয়ান্ডারথালেনসিস।
সময়ের সঙ্গে মস্তিষ্ক বড় হওয়ার এ প্রবণতা চূড়ান্ত রূপ লাভ করে আধুনিক মানুষের আবির্ভাবের পর্যায়ে এসে। সর্বশেষ বরফযুগে বসবাসকারী আধুনিক মানুষের তুলনায় এখনকার নারী–পুরুষের খুলি গড়ে ১২ দশমিক ৭ শতাংশ ছোট।