Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
Bangladesh

কোটার কাটাকুটিতে ৭২ ভাগ চাকরি

সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটা লেখা পোস্ট করেন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ২৩ হাজার ফেসবুক ব্যবহারকারী লেখাটিতে লাইক বা সাড়া দেন। ২ হাজার ৪০০ জন বিভিন্ন মন্তব্য করেন। এছাড়া ৭৮৫ জন তা শেয়ার করেন। পোস্টটি ছিল সরকারি চাকরি নিয়ে। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন ‘কোয়ালিটি নিয়োগের জন্য কোটা একটি বড় বাধা’। এ পোস্টের পর সাবেক আমলা মিলনের ফেসবুক বন্ধুরা এর ওপর হামলে পড়েন। সেখানে কোটার পক্ষে-বিপক্ষে কথার ঝড় ওঠে। এসব মন্তব্য থেকে বোঝা যায় কোটা নিয়ে মানুষ কতটা হতাশ।

সরকারের প্রায় ৭৩ শতাংশ কর্মচারীর নিয়োগ হয় কোটায়। এরা সবাই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির বা ১৩ থেকে ২০ গ্রেডে চাকরি করেন। সে হিসেবে বেশিরভাগ চাকরিই হয় কোটারভিত্তিতে। আগে সরকারি চাকরির বিন্যাস শ্রেণি অনুযায়ী করা হলেও এখন তা গ্রেড অনুযায়ী করা হয়। ১ থেকে ৯ গ্রেড প্রথম শ্রেণি, ১০ থেকে ১২ গ্রেড দ্বিতীয় শ্রেণি, ১৩ থেকে ১৬ তৃতীয় এবং ১৭ থকে ২০ গ্রেড হচ্ছে চতুর্থ শ্রেণির চাকরি।

২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরি থেকে কোটা তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু তৃতীয় ও চর্তুথ শ্রেণির চাকরিতে তা বহাল থাকে। সরকারের মোট জনবলের ৭৩ শতাংশই হচ্ছে এই দুই শ্রেণির। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরি ২৭ শতাংশ। এগুলো নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ চাকরি। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরির গুরুত্ব কম থাকলেও চাকরির বিশাল বাজারের জন্য তা আবার গুরুত্বপূর্ণও। কারণ এসব চাকরিকে কেন্দ্র করে নানা অনিয়ম হচ্ছে। অনিয়মের সঙ্গে যখন কোটা যুক্ত হয় তখন তা মেধাবীদের জন্য বিভীষিকাময় হয়ে ওঠে।

তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শতভাগ কোটা পূরণ করা হয় ৬ ক্যাটাগরিতে। এতিম ও প্রতিবন্ধী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা ৩০, নারী ১৫, ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী ৫, আনসার ও ভিডিপি ১০ ও জেলা কোটা ৩০ শতাংশ। এই ছয় ক্যাটাগরির যোগফল ১০০ অর্থাৎ পুরোটাই কোটা। সরকারি চাকরির বড় অংশে মেধাবীদের কোনো জায়গা নেই।

প্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কোটা পদ্ধতিতেও সংস্কার দরকার। জেলা কোটা এক হিসেবে মেধা কোটাও। তবে তা ওই জেলায় সীমাবদ্ধ। এই জেলা কোটার পরিসরটা বাড়ানো উচিত। তবে কোটা গুরুত্বপূর্ণ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে। সেখানে কোটা মুক্ত করে সরকার দারুণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোটা সংস্কারের পাশাপাশি নিয়োগের অনিয়ম বন্ধ করা খুব জরুরি।

গত মে মাসে প্রকাশিত সরকারি কর্মচারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী সরকারের মোট জনবল ১৩ লাখ ৯৬ হাজার ৮১৮ জন। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির ১ লাখ ৭৯ হাজার ৫১৪ ও দ্বিতীয় শ্রেণির ১ লাখ ৯৩ হাজার ৬৬৪ জন। আর তৃতীয় শ্রেণির ৬ লাখ ৩ হাজার ৪৩৩ এবং চতুর্থ শ্রেণির ৪ লাখ ১৫ হাজার ১০৪ জন। আর ৫ হাজার ১০৩ জন এই শ্রেণিবিন্যাসের বাইরে রয়েছেন। মোট ১৩ লাখ ৯৬ হাজার ৮১৮ জন কর্মচারীর মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ১০ লাখ ১৮ হাজার ৫৩৭ জন। যা মোট কর্মচারীর ৭২.৯১ বা ৭৩ শতাংশ।

গত ২৪ এপ্রিল সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন তার ফেসবুক পেজে আরো লেখেন ‘সরকারি ১১-১৬ গ্রেডের নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা চালু রেখেছে সরকার। হয়ত সামাজিক বৈষম্য নিরসনে তা চালু রাখা হয়েছে। এটা নিয়ে আলোচনা বা সমালোচনা করতে চাচ্ছি না। কিন্তু পদ ও পদবীর মেধাভিত্তিক চর্চা বা কোয়ালিটি নিয়োগের জন্য কোটা একটা বড় বাধা, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।’ ফেসবুক পোস্ট নিয়ে জানতে চাইলে মাহবুব কবীর মিলন সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলতে অস্বীকার করেন।

তবে মিলনের কোটা সংক্রান্ত পোস্টে নেতিবাচক মন্তব্যকারীই বেশি। তাদের মন্তব্য এতটাই তীর্যক যে এসব মন্তব্যে হতাশার সাথে কোটার যাতাকলে পিষ্টদের দুর্দশার গল্পও উঠে আসে। তাদের মধ্যে মতিয়ার রহমান নামে একজন লিখেছেন ‘কোটা পদ্ধতি সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। যোগ্যতারভিত্তিতে সব নিয়োগ হোক। ডিগবাজীর নিয়োগ বন্ধ হোক।’

তানভির হুসাইন নামে একজন লিখেছেন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় কোটা গ্রহণযোগ্য নয়। আলমগীর হাসান লিখেছেন, কোটা এক জঘন্য সিস্টেম। যারা ভুক্তভোগী তারাই শুধু বোঝেন। কোটার কারণে কত অযোগ্য আজ লিডিং পজিশনে। আর মেধাবীরা রাস্তায় ঘুরছে।

আরিফুল ইসলাম আরিফ লিখেছেন, ‘১১-২০ গ্রেড পর্যন্ত কোটা মুক্ত নিয়োগ চাই, মেধাবীদের সুযোগ চাই।’

ইতিবাচক মন্তব্যও রয়েছে। তবে তা খুবই কম। সুব্রত দাশ লিখেছেন কোটা পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠীর বা জাতির জন্য প্রয়োজন, কিন্তু সেটাকে মাত্রার মধ্যে রেখে।’

সাংবিধানিক ক্ষমতায় সরকার চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে। বিশেষ করে অনগ্রসর এবং সুবিধাবঞ্চিত অংশকে কাজের অধিকার দিতে। একইসঙ্গে সম্মান ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হওয়া থেকে রক্ষা করা এ কোটার উদ্দেশ্য। তবে কোটা নির্দিষ্ট করা থাকলেও চাকরির জন্য যে পরীক্ষা আছে তাতে অংশ নিতে হয় এবং উত্তীর্ণ হতে হয়। একটা মান আছে সে মান পর্যন্ত যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। এমন না যে কেউ ফেল করেছে তাকে কোটায় চাকরি দেওয়া হচ্ছে।

জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা জানান, প্রজাতন্ত্রের কর্ম বিভাগে সংস্কার দরকার। কারণ প্রায় ১৩ লাখ কর্মীর কর্ম বিভাগের স্তর বিন্যাস ঠিক নেই। সংস্কার হলে উপযুক্ত জনবল নিয়োগ করা সহজ ও অর্থ সাশ্রয়ী হবে। চাকরি প্রত্যাশীরা বিভ্রান্ত হবেন না। এখন কোন সুনিদিষ্ট নিয়ম না থাকায় বিশৃঙ্খলা চলছে। বিভিন্ন দপ্তর একই সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে। ফলে প্রতিযোগী প্রার্থী একটা পরীক্ষায় হাজির হলে অন্যগুলোতে হাজির হতে পারেন না। এতে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

শিক্ষাগত যোগ্যতার কারণেও সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। যে পদের জন্য যে শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করা হয় তার থেকেও বেশি শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রার্থী আবেদন করলে অপেক্ষাকৃত কম শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রার্থী ভীষণ চাপে পরে। এতে বৈষম্য হয়। আবার কিছু দপ্তর প্রতিষ্ঠান সারা বছর নিয়োগ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। নিয়োগ কমিটি সংশ্লিষ্টরা প্রতিটি মিটিং এর জন্য সম্মানি নেয়। সেটা ১০ মিনিট বা ১ ঘণ্টার মিটিং হোক। সম্মানির জন্য নানান ছুতোয় মিটিং সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। বিভিন্ন নিয়োগ কমিটির অনেক সদস্য আছেন যারা মাসে ৫০ হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকা সম্মানি পান। তারা নিয়োগ কমিটিতে ঢোকার জন্য তক্কে তক্কে থাকেন। এভাবে একটি কমিটিতে কমপক্ষে ৪ জন সদস্য থাকেন। সে হিসেবে একটি নিয়োগের জন্য অতিরিক্ত খরচ হয় কয়েক লাখ টাকা। কর্ম বিভাগ সংস্কার করা হলে এই ধরনের অহেতুক খরচ থেকে সরকার রেহাই পাবে।


জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা যে সংস্কার চাচ্ছেন তা মোটা দাগে তিনটি স্তরে বিন্যস্ত হবে। এগুলো হচ্ছে : সাপোর্টিং স্টাফ স্তর, ব্যবস্থাপনা স্তর এবং  পলিসি স্তর। এই তিনটি স্তর সবসময় আছে কিন্তু দপ্তরগুলো একেকটা একেক বিধি বিধান দিয়ে পরিচালনা করে। অথচ একই বাজেট থেকে অর্থ নিচ্ছে। উপরের তিনটি স্তরের জন্য তিনটি নিয়োগ বিধি থাকতে পারে। তিনটির জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ইত্যাদি সুনির্দিষ্ট থাকবে। যোগ্যতার অতিরিক্ত কোনো যোগ্যতা থাকলে সে সেই দপ্তরের জন্য প্রযোজ্য হবে না। কারণ তার থেকে কম যোগ্যতার ব্যাক্তি বৈষম্যের শিকার হবে। তাছাড়া বেশি যোগ্যতার ব্যক্তিটি তার উপযুক্ত চাকরি নিয়ে অন্য দপ্তরে চলে যায়। তখন ওই পদটি আবার বছরের পর বছর শূন্য থাকে। সাপোর্টিং স্টাফের জন্য যে শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারিত তার বেশি যোগ্যতার কেউ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে না এমন ব্যবস্থা করা। সব দপ্তরে এই তিন স্তরের জন্য প্রতিবছর তিনটি নিয়োগ বাছাই পরীক্ষা নিলেই হবে। যোগ্য ব্যক্তিকে কমিশন মনোনীত করলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর নিয়োগ দিবে।

এতে সাধারণ মানুষ সুস্পষ্ট ধারণা পাবে, কোন স্তরের জন্য প্রতিযোগিতা করবে। একই ব্যাক্তিকে অসংখ্য দপ্তরের জন্য টাকা খরচ করতে হবে না বলে মনে করেন জনপ্রশাসনের সংস্কারবাদী কর্মকর্তারা।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacantoto4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d toto
slot toto
bacan4d
bacan4d
togel online
Toto Slot
saraslot88
Bacan4d Login
bacantoto
Bacan4d Login
bacan4d
bacan4drtp
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot maxwin
slot bacan4d
slot maxwin
bacan4d togel
bacan4d login
bacan4d login
bacan4d login
bacantoto 4d
slot gacor
bacansport
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot77 gacor
JAVHD
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
gacor slot
slot gacor777
slot gacor bacan4d
bacan4d
bacansport
toto gacor
bacan4d
bacansports login
slot maxwin
slot dana
slot gacor
slot dana
slot gacor
bacansports
bacansport
bacansport
bacansport
bawan4d
bacansports
bacansport
slot gacor
judi bola
slot maxwin
slot maxwin
bacansport
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot demo
slot gacor
slot gacor
slot gacor
toto slot
slot gacor
demo slot gacor
slot maxwin
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot toto