কোনো উদ্যোগ কাজে আসছে না : বৃষ্টির পরও দূষণে শীর্ষে ঢাকা

গতকাল ঢাকাসহ দেশের আট বিভাগে কয়েক ঘণ্টা ধরে টানা বৃষ্টি হওয়ার পরও দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় শীর্ষে ছিল মেগা সিটি ঢাকা। একিউআই সূচক অনুযায়ী ঢাকার বাতাস হলো ‘অস্বাস্থ্যকর’।
রাজধানীর পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে কোনো উদ্যোগ কাজে আসছে না। সর্বশেষ ২০২২ সালে নেয়া তিন ধাপের পরিকল্পনাও ঢাকাকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে বৃষ্টির পরও দূষণে বিশ্বের শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে রাজধানী ঢাকা শহর।
গতকাল ঢাকাসহ দেশের আট বিভাগে কয়েক ঘণ্টা ধরে টানা বৃষ্টি হওয়ার পরও দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় শীর্ষে ছিল মেগা সিটি ঢাকা। একিউআই সূচক অনুযায়ী ঢাকার বাতাস হলো ‘অস্বাস্থ্যকর’।
এ ছাড়া গতকাল সকাল ৯টা ২৩ মিনিটে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় বাংলাদেশের একিউআই স্কোর ছিল ১৮৩।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরে বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় জর্জরিত। শহরটির বায়ুর গুণমান সাধারণত শীতকালে অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে এবং বর্ষাকালে উন্নত হয়।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএইচও) মতে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। বায়ুদূষণের কারণে প্রধানত স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ থেকে মৃত্যুর হার বাড়ে। কিন্তু পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে ২০২২ সালে তিন ধাপের পরিকল্পনা নেয়া হয়। ২০৪০ সাল পর্যন্ত এ কার্যক্রম স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন এ কার্যক্রমের শুরু হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ থেকে। পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে নারায়ণগঞ্জকে ‘মডেল’ ধরে আগামী বছর থেকে কাজ শুরু করতে যাচ্ছে পরিবেশ অধিদফতর। এটি সফল হলে ঢাকার আশপাশের অন্যান্য জেলাতেও তা বাস্তবায়ন করা হবে।
তাদের মতে, ২০৪০ সাল পর্যন্ত এ কার্যক্রমে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি কর্মপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সফল হলে ঢাকার আশপাশের অন্যান্য জেলাতেও তা বাস্তবায়ন করা হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিবেশ অধিদফতর অগ্রাধিকার দিয়ে এক বছর মেয়াদি ২৩ সালে, স্বল্পমেয়াদি ২০২৪ সাল থেকে, মধ্যমেয়াদি ২০২৬ থেকে এবং দীর্ঘমেয়াদি ২০৩১ থেকে খসড়া কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়।
স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) গবেষণা বলছে, দেশে বায়ুদূষণের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ। বায়ুদূষণে প্রথম গাজীপুর এবং দ্বিতীয় অবস্থানে ঢাকা।
পরিবেশ অধিদফতরের হিসাব বলছে, নারায়ণগঞ্জে তরল বর্জ্য নির্গমন হয় এমন শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা চার শ’র বেশি। পরিবেশবান্ধব বর্জ্য শোধনাগার- ইটিপি প্ল্যান্ট আছে তিনশটির মতো কারখানায়। প্রায় এক শ’ কারখানায় ইটিপি প্ল্যান্ট নেই। এসব কারখানার বর্জ্য শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গা নদীতে গিয়ে পড়ছে।
পরিবেশ অধিদফতরের তথ্য বলছে, নারায়ণগঞ্জ জেলায় বৈধ-অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা ৩৪৪। যার ২৫৪টিই চলছে অবৈধভাবে। আর বৈধ ইটভাটার সংখ্যা মাত্র ৯০টি। অবৈধ এসব ইটভাটার কারণে নারায়ণগঞ্জের বায়ুর মান খুবই নাজুক।
নদীদূষণ রোধে পরিবেশ অধিদফতরের অগ্রাধিকারভিত্তিক কর্মপরিকল্পনায় সাব/জেলা কমিটি করে দূষণের ধরন ও উৎস চিহ্নিত করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া কারখানা ও ইটিপি ছাড়া শিল্প কারখানা চিহ্নিত করা।
দূষণকারী কারখানার বিরুদ্ধে সুপারিশ প্রণয়ন ও সিটি করপোরেশন এলাকায় পয়ঃবর্জ্য যাতে শীতলক্ষ্যা নদীতে অপরিশোধিত অবস্থায় না পড়ে সে লক্ষ্যে পরিশোধন প্ল্যান্ট স্থাপনে উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হয়েছে। বায়ুদূষণ ঠেকানোর কর্মপরিকল্পনায় দূষণের ধরন ও উৎস চিহ্নিত করার কথা বলা হয়েছে। সেইসাথে দূষণকারী কারখানা চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে সুপারিশ দেয়ার কথা বলা হয়।