Bangladesh

কোনো হিসাবই মিলছে না, ‘বাজার অস্থিতিশীল করছে বড় ব্যবসায়ীরা’

অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী জামির হোসেন সরকার। প্রতি মাসে তাঁর অবসরকালীন ভাতা ১৭ হাজার ৫৯৬ টাকা। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে সংসার। এ ছাড়া দেখভাল করতে হয় মা-বাবাকে। সামান্য ভাতার টাকায় সংসার আর সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে গিয়ে চিড়েচ্যাপ্টা অবস্থা তাঁর।গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলা শহরতলির কলেজ পাড়ার বাসিন্দা জামির হোসেন। তাঁর ছেলে মিলিটারি ইনস্টিটিউট সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি) ঢাকায় পড়াশোনা করছেন। ছেলের জন্য মাসে খরচ পাঠাতে হয় ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা। আর প্রাইভেট স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ের জন্য ব্যয় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। দুই সন্তানের লেখাপড়ার খরচ দিতেই ভাতার টাকা শেষ। এ অবস্থায় সংসার চালাতে পেনশনের টাকায় হাত দিতে হচ্ছে জামির হোসেনের।

দিনে মজুরির কাজ করে রাতে রিকশা চালান উপজেলার কাজীবাড়ী সন্তোলা গ্রামের আসাদুল হক। স্ত্রী ও তিন সন্তান– পাঁচজনের সংসার। সন্তানের লেখাপড়ার খরচ চালাতে না পেরে বড় ছেলে রাতুল ইসলামকে এবার হাফেজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করেছেন। আর মেয়ে ও ছোট ছেলেকে বাড়িতে রেখে লেখাপড়া চালিয়ে নিতে চাইছেন তিনি। আসাদুল হক বলছিলেন, দিন-রাত পরিশ্রম করে যে আয় হয়, তা দিয়ে সংসারের খরচ জোগানো যাচ্ছে না। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে চলতে হচ্ছে।

সাদুল্লাপুর সদর বাজারে সবজির দাম গত বছরের তুলনায় এবার অনেক বেশি। কোনো কোনো সবজির দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। বাজারে আসা স্কুলশিক্ষক সাইদুর রহমান বলেন, সবজির এমন দাম আগে কখনও দেখেননি। বেশি দামের কারণে ক্রেতা অনেক কমেছে বলে জানালেন সবজি বিক্রেতা আলমগীর হোসেন। এ অবস্থায় ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই তাদের জন্য কষ্টকর। কারণ, সবজি বিক্রি না হলে পচে যায়।

গত বছরের তুলনায় এ বছরের এই সময়ে সবজি আমদানি কম বলে জানিয়েছেন উপজেলার মীরপুর হাটের ইজারাদার জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, সার ও কীটনাশকের দাম বেড়েছে। শ্রমিকের মজুরি বেশি। সব মিলে সবজির দাম বেশি। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম বসুনিয়ার সঙ্গে। তাঁর দেওয়া তথ্য মতে, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের আবহাওয়া সবজি চাষের অনুকূলে থাকে না। এই সময়ে অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও বেশি বৃষ্টিপাতের কারণে সবজিচাষ ব্যাহত হয়। এতে উৎপাদন কম হওয়ায় সবজির দাম বেড়ে যায়। সবজির এলাকাখ্যাত আলীনগর গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম সরকার এ বছর এক বিঘা জমিতে বইয়াকচু উৎপাদনে খরচ গুনেছেন ১১ থেকে ১২ হাজার টাকা। একই ফসলের জন্য গত বছর বিঘায় খরচ হয়েছে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় দামও বেড়েছে। আবার অনেক অসাধু ব্যবসায়ীর কারণেও সবজির দাম বেশি। এ ক্ষেত্রে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারিভাবে জোরালো ভূমিকার ওপর জোর দিয়েছেন সাদুল্লাপুর বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান সাবু।

ছাইগাড়ী গ্রামের কৃষক জাহিদুল ইসলাম মৌসুমে প্রতি কেজি আলু বিক্রি করেছেন ১২ থেকে ১৫ টাকায়। হাত ঘুরে সেই আলু এখন ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। তিনি বলেন, লাভবান হচ্ছেন মজুতদাররা। তাই সরকারি উদ্যোগে কৃষকদের জন্য পর্যাপ্ত আলু মজুত রাখার ওপর জোর দেন তিনি। সাদুল্লাপুরে এবার আলু উৎপাদন হয়েছে ৩০ হাজার ৬১০ টন। চাহিদার তুলনায় ১০ হাজার ৬১০ টন আলু বেশি উৎপাদন হয়েছে; কিন্তু এর পরও আলুর সংকট।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেছেন, করপোরেট কোম্পানি বা বড় ব্যবসায়ীরা বাজার অস্থিতিশীল করছে। এটা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। আর বেশ্বিক পরিস্থিতি, ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, ফ্রেইট কস্ট, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে দ্রব্যমূল্য বাড়লেও দেশে উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।

সোমবার অধিদপ্তরের সম্মেলনকক্ষে ভোক্তা অধিকার সচেতনতাবিষয়ক বিতর্ক প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফাইনালের আয়োজন নিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বিতর্ক প্রতিযোগিতাটি যৌথভাবে ভোক্তা অধিদপ্তর ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজন করেছে। এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আগামী সপ্তাহে প্রতিযোগিতার সেমিফাইনাল হবে। পরবর্তীতে গ্র্যান্ড ফাইনাল ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান হবে। এতে চ্যাম্পিয়ন দল পুরস্কার হিসাবে নগদ দুই লাখ টাকা এবং রানারআপ দল এক লাখ টাকা পাবে।

সফিকুজ্জামান আরও বলেন, ‘আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সবসময় অভিযান পরিচালনা করছে। আলু ন্যায্যমূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে উৎপাদক পর্যায় থেকে খুচরা ব্যবসায়ী পর্যন্ত অধিদপ্তর লিংকেজ করে দিচ্ছে। যাতে সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি করা যায়। তবে শুধু আলুর দাম কমালেই হবে না, কৃষকদের উৎপাদন খরচও বিবেচনা করতে হবে।’

তিনি জানান, সরকার বাধ্য হয়ে ডিম আমদানি করছে। যারা ডিমের দাম নিয়ে কারসাজি করছে তাদের নিয়ন্ত্রণের জন্যই ডিম আমদানি করা হচ্ছে। ভোক্তা অধিকার আইনের কিছুটা দুর্বলতার পাশাপাশি জনবল সংকট রয়েছে। ১৭টি জেলায় অধিদপ্তরের কোনো কর্মকর্তা নেই। তার পরও সারা দেশে প্রতিদিন অধিদপ্তরের ৪০ থেকে ৫০টি টিম দাম নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে শুধু বিক্রেতা নয় ক্রেতাসহ সাধারণ জনগণকেও আওয়াজ তুলতে হবে। যাতে সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়। সে লক্ষ্যেই ভোক্তা অধিকার সচেতনতাবিষয়ক বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।

Show More

8 Comments

  1. Woah! I’m really enjoying the template/theme of this blog.

    It’s simple, yet effective. A lot of times it’s very hard to get that “perfect balance” between superb usability and visual appeal.
    I must say that you’ve done a great job with this. Additionally, the blog loads very quick for me
    on Opera. Superb Blog!

    my webpage what does vpn mean

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d