কোরিয়ায় পরীক্ষার চাপে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য চরম বিভ্রান্তির হিট পপ গান ‘এপিটি’
মূলত দেশটির জনপ্রিয় কে-পপ ব্যান্ড ব্ল্যাকপিঙ্কের সদস্য রোজে এবং ব্রুনো মার্সের কোলাবরেশন বিশ্বব্যাপী হিট গান ‘এপিটি’।
গত ডিসেম্বরে কয়েক ডজন শিক্ষার্থী সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল, কারণ শিক্ষকরা ভুলবশত তাদের পরীক্ষা ৯০ সেকেন্ড আগে শেষ করে দেন। ফাইল ছবি: ইপিএ
কিছু সময়ের জন্য নীরবতা নেমে এসেছিল দক্ষিণ কোরিয়াজুড়ে, কারণ দেশটির পাঁচ মিলিয়ন শিক্ষার্থী সেসময় তাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা দিতে বসেছিল। খবর বিবিসি’র
গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্বের অন্যতম কঠিন বিশ্ববিদ্যালয় প্লেসমেন্ট পরীক্ষা হিসেবে বিবেচিত, দেশটির আট ঘন্টার বিশ্ববিদ্যালয় প্লেসমেন্ট পরীক্ষা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিমান ওঠানামা স্থগিত রাখা হয়, নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখা এবং গাড়ির হর্ন বাজানোর ব্যাপারেও নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল।
তবে এ বছর একটি শব্দ নিয়ে শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে ভয়ে ছিল, এটি হলো ‘এপিটি’।
মূলত দেশটির জনপ্রিয় কে-পপ ব্যান্ড ব্ল্যাকপিঙ্কের সদস্য রোজে এবং ব্রুনো মার্সের কোলাবরেশন বিশ্বব্যাপী হিট গান ‘এপিটি’।
শিক্ষার্থী কাছে এটি একটি ‘নিষিদ্ধ’ গানে পরিণত হয়েছিল, কারণ তারা ভয় পাচ্ছিল এই গানের সুরের মাদকতায় পরীক্ষার সময় তারা ফোকাস হারিয়ে ফেলতে পারে।
‘সুনেউং’-নামের এই পরীক্ষার ক্ষেত্রে কোনো ছোটোখাটো বিভ্রান্তিও অনেক বড় ব্যাপার। অনেকের কাছে এটি তাদের বেশ কয়েক বছরের আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সমাপ্তি এবং অনেকের কাছে এটি একটি সন্ধিক্ষণ; যা তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান, ক্যারিয়ার এবং সামাজিক অবস্থান নির্ধারণ করে।
‘এপিটি’ সম্পর্কে এক শিক্ষার্থী ইয়োনহাপ নিউজকে বলেন, ‘আমি চিন্তিত যে পরীক্ষার সময়ও গানটি আমার মাথার মধ্যে বাজতে থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘বড়রা একথা শুনে হাসতে পারে এবং বলতে পারে এমন কিছু নিয়ে চিন্তা করছ কেন? কিন্তু আমাদের মতো সামনে এত গুরুত্বপূর্ণ একটি পরীক্ষা থাকা শিক্ষার্থীদের কাছে এটি অস্বস্তিকর মনে হতে পারে।’
দেশটির জনপ্রিয় কে-পপ ব্যান্ড ব্ল্যাকপিঙ্কের সদস্য রোজে এবং ব্রুনো মার্সের কোলাবরেশন বিশ্বব্যাপী হিট গান ‘এপিটি’।
এর আগে ‘সুনেউং’-দেওয়া শিক্ষার্থীদের অন্যান্য ‘ইয়ারওয়ার্ম’ বা মাথায় ঘুরতে থাকা গান না শোনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। বলা হচ্ছিল যেমন: বিটিএসের ‘গো গো’ এবং শাইনির ‘রিং ডিং ডং’- এর মতো যেসব গান অনলাইনে বারবার শোনা যায়, সেগুলো পরীক্ষার সময় নিষিদ্ধ হওয়া উচিত।
পরীক্ষাটি যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় তা নিশ্চিত করতে দেশব্যাপী প্রচেষ্টা চালানো হয়। এজন্য বৃহস্পতিবার ট্রাফিক জ্যাম কমানোর জন্য দোকান এবং শেয়ার বাজার দেরি করে খোলা হয়েছিল এবং কর্তৃপক্ষ জনসাধারণের পরিবহন সময়সূচি পরিবর্তন করে এবং যেকোনো জরুরি প্রয়োজনের জন্য ডজনখানেক অতিরিক্ত ট্রেন প্রস্তুত রাখে।
১০ হাজারেরও এরও বেশি পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল, যার মধ্যে কিছু শিক্ষার্থীদের জরুরি পরিস্থিতিতে স্কুলে পৌঁছানোর জন্য নিযুক্ত ছিল।
২০ মিনিটের ইংরেজি লিসেনিং টেস্ট [শ্রুতি পরীক্ষা] চলাকালীন আওয়াজ কমানোর জন্য বিমান ওঠানামা রাখা হয়। এছাড়াও, কর্তৃপক্ষ বাস ও ট্যাক্সি চালকদেরকে পরীক্ষার সময় হর্ণ বাজানো থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেছে।
সুনেউং পরীক্ষায় বিঘ্ন ঘটানোকে একটি গুরুতর বিষয় হিসেবে দেখা হয়। গত ডিসেম্বরে কয়েক ডজন শিক্ষার্থী সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল, কারণ শিক্ষকরা ভুলবশত তাদের পরীক্ষা ৯০ সেকেন্ড আগে শেষ করে দেন।
এ বছর রেকর্ড পরিমাণ প্রার্থী আবার পরীক্ষা দিচ্ছেন, কারণ কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছে যে তারা মেডিকেল স্কুলে ভর্তির পরিধি বাড়াবে। ইন্টার্ন ডাক্তররা বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক প্রতিবাদ করলেও, ভর্থি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা এই সিদ্ধান্ত সাদরে গ্রহণ করেছে।