Science & Tech

ক্যান্সারের টিকাও সম্ভব করতে পারে নতুন প্রযুক্তি

বায়োনটেকের মতো কোম্পানির টিকা কোভিড মহামারির মোকাবিলা করতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে৷ সেই প্রযুক্তির আরো উন্নতি ঘটিয়ে নানা ধরনের ক্যান্সার নিরাময়ের চেষ্টা চলছে৷

জানা গেছে, কোভিড-১৯ ভাইরাস প্রতিরোধ করতে প্রথমবার মেসেঞ্জার আরএনএ টিকা অনুমোদন পেয়েছিল। গোটা বিশ্বে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার পর এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে করোনার টিকা আবিষ্কার করা হয়েছিল। আসলে সেই অণু নিয়ে বেশ কয়েক দশকের কাজের দৌলতেই সেটা সম্ভব হয়েছিল।

তবে, সেই গবেষণার ক্ষেত্র ছিল ক্যানসার নিরাময়। কোভিডের দৌলতে এমআরএনএ প্রযুক্তি লোকচক্ষুর আড়াল থেকে জনসমক্ষে এসেছে। এমআরএনএ-কে প্রায়ই মেডিক্যাল সফটওয়্যার হিসেবে বর্ণনা করা হয়। কারণ, সেটি সরাসরি শরীরের ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না। বরং এমন নির্দেশ বহন করে, যা পালন করলে তবেই সেই প্রভাব দেখা যায়।

এমআরএনএ টিকা শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে আগেভাগেই প্রশিক্ষণ দেয়। সেগুলোর মধ্যে সুনির্দিষ্ট জেনেটিক তথ্যের স্ট্র্যান্ডের অনেক কপি থাকে, যা হলো মেসেঞ্জার আরএনএ৷ সেগুলো এমনভাবে প্রোগ্রাম করা থাকে, যার মাধ্যমে কোষগুলিকে সুনির্দিষ্ট প্রোটিন সৃষ্টি করতে উৎসাহ দেয়া হয়। যেমন টিউমার সেলে পাওয়া অস্বাভাবিক প্রোটিন, যা শরীরের ইমিউন সিস্টেমের চোখ এড়িয়ে গেছে।

জার্মান ক্যান্সার গবেষণা কেন্দ্রের নিল্স হালামা বলেন, ‘এই নজরদারি প্রণালী ভেতরে থেকেই আমাদের সুরক্ষা দেয়। কিন্তু কিছু ত্রুটি থাকে এবং নির্দিষ্ট পরিবেশে প্রদাহ দেখা দিতে পারে৷ যেমন ক্রনিক ইনফ্লেমাশন শরীরের কাঠামোয় পরিবর্তন আনতে পারে এবং তখন টিউমার ইমিউন সিস্টেমের নজর এড়িয়ে যেতে পারে৷’

তিনি বলেন, ‘এমন অদৃশ্য ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করতে হলে ইমিউন সিস্টেমকে সবার আগে সেটি দেখার ক্ষমতা আয়ত্ত করতে হবে। মেসেঞ্জার আরএনএ সেই কোষ দৃশ্যমান করে তোলে।’

কিন্তু সমস্যা হলো, সব রোগীর ক্যান্সারের ধরন ভিন্ন। ফলে সবার জন্য একই এমআরএনএ থেরাপির কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু ইনফরমেশন মলিকিউল নতুন করে লেখা সম্ভব, যাতে প্রয়োজনীয় প্রোটিন উৎপাদন করা যায়। বড় আকারে এমন ব্যক্তিগত চিকিৎসার যুগ ধীরে ধীরে বাস্তব হয়ে উঠছে।

নিল্স হালামা আরো বলেন, ‘আগামী ১২, ২৪ বা ৩৬ মাসের মধ্যেই এমন ক্যান্সার চিকিৎসা অনুমোদন পাবে বলে আমাদের প্রত্যাশা রয়েছে। কিন্তু বড় আকারে এমন চিকিৎসা প্রয়োগ করতে অনেক সময় লাগবে। এমন অণু উৎপাদনের ক্ষমতা এবং তার মূল্যের ওপরেও বিষয়টি অবশ্যই নির্ভর করবে। এখনো পর্যন্ত সামান্য কয়েকটি ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অনুমোদন পেলেও গোটা বিশ্ব জুড়ে নানা ধরনের ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য বেশ কিছু এমআরএনএ প্রযুক্তি-ভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে পরীক্ষা চলছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘চিকিৎসার ধারাবাহিক উন্নতি ঘটে চলেছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সূত্র অনুযায়ী, কোনো না কোনো ধরনের ক্যান্সার বছরে প্রায় এক কোটি মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে রয়েছে।’ মহামারির সময় খ্যাতি অর্জন করা প্রযু্ক্তি এবার ক্যান্সারের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও প্রয়োগের প্রস্তুতি চলছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button