Trending

‘ক্রলিং পেগ’ মানছে না কিছু ব্যাংক : বাড়তি দরেই ডলার কেনাবেচা

ডলার কেনাবেচায় ‘ক্রলিং পেগ’-এর নির্ধারিত দর মানছে না কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংক। গতকাল মঙ্গলবার বেশ কিছু ব্যাংক প্রবাস আয় বা রেমিট্যান্স কিনেছে ১১৯ টাকায়। আর আমদানির এলসি বা ঋণপত্র খুলছে ১২০ টাকার বেশি দরে। যদিও গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের আমদানি এলসি খোলার জন্য সর্বনিম্ন রেট ছিল ১১৭ টাকা ৪৫ পয়সা এবং সর্বোচ্চ ১১৭ টাকা ৮০ পয়সা।

কয়েকটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও ট্রেজারিপ্রধানদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। ব্যাংকাররা জানান, ডলারে যে রেট নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, সেই রেটে ডলার কিনতে পাওয়া যায় না। তাই সবাই আগের মতোই বাড়তি দরে ডলার কেনা শুরু করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ব্যাংকের ট্রেজারিপ্রধান জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রলিং পেগ রেট ব্যাংকগুলো প্রথম দু-চার দিন মেনেছে।

এখন সবাই বাড়তি দরে ডলার কেনাবেচা করছে। গতকাল ১১৮ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ১১৯ টাকায় রেমিট্যান্স কেনা হয়। আর আমদানি এলসি খোলা হয় ১২০ টাকার বেশি। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকে নির্ধারিত দরে রিপোর্ট করা হয়।

তবে বাকিটা আন্ডারলাইনে টাকায় লেনদেন করে।

তিনি বলেন, আগেও ডলার রেট ছিল ১১০ টাকা। কিন্তু কেউ এই রেট মানেনি। সবাই বাড়তি রেটেই ডলার কেনাবেচা করছিল। এখন আবার সেই অবস্থায় ফিরে গেছে। কারণ মার্কেটে ডলার রেট আরো বেশি। কেউ তো বেশি রেটে কিনে কম রেটে বিক্রি করবে না।

জানা যায়, ডলারের দর বাজারভিত্তিক করার আগে গত ৮ মার্চ ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই পদ্ধতি চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন করেছে। ক্রলিং পেগ পদ্ধতির আওতায় ডলারের মধ্যবর্তী একটি দাম নির্ধারণ করে ব্যাংকগুলোকে এই দরের আশপাশে স্বাধীনভাবে লেনদেন করতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মধ্যবর্তী এই দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১১৭ টাকা। তবে মৌখিকভাবে ব্যাংকগুলোকে এক টাকা কমবেশি করার নির্দেশ দিয়েছে। অর্থনৈতিক সংকট ঠেকাতে আইএমএফের শর্ত মেনে ডলারের নতুন পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্থতায় ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি এবং বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ডিলারদের সংগঠন বাফেদা ডলারের একটি আনুষ্ঠানিক দর ঘোষণা করত। যদিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এর চেয়ে বেশি দরে লেনদেন হতো। নতুন পদ্ধতি চালুর আগে সর্বশেষ ঘোষিত দর ছিল ১১০ টাকা। কিন্তু প্রকৃত দর ছিল এরও বেশি। এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণার রেট মানছে না ব্যাংকগুলো।

দেশে যেভাবে কমল ডলার সংকট

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দেশে মার্কিন ডলারের সংকট শুরু হয়। যুদ্ধের জেরে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানি খরচ হঠাৎ বেড়ে যায়, যে কারণে ওই বছরের জুনে ৮৩৭ কোটি ডলারের আমদানি দায় শোধ করতে হয় বাংলাদেশকে। এরপর ঋণপত্র খোলায় কড়াকড়ি ও ঋণপত্র খোলার বিপরীতে শতভাগ পর্যন্ত নগদ টাকা জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। এতে আমদানি দায় কমতে থাকে।

সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়াকড়ি আরোপের কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরের অক্টোবর থেকে আমদানি প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হয়ে পড়ে, যা চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। ফেব্রুয়ারিতে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল আমদানি প্রবৃদ্ধি। ওই মাসে আমদানিতে ১৩ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। তবে মার্চে এসে আবারও হোঁচট খেল আমদানি প্রবৃদ্ধি। ওই মাসে আমদানি প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশের বেশি কমেছে। আমদানি কমলেও এখনো ডলার সংকট কাটেনি। বরং এ সময়ে ডলারের দাম ৮৫ থেকে বেড়ে ১১৭ টাকা হয়েছে।

এদিকে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের বিদেশি হিসাবে (নস্ট্রো অ্যাকাউন্ট) ডলার জমা রাখে। গত অর্থবছর শেষে ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা ডলারের রিজার্ভ বেড়েছিল ৬ শতাংশের বেশি। চলতি অর্থবছরে তা ক্রমেই নিম্নমুখী। বিশেষ করে গত সাত মাসে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর রিজার্ভ কমেছে ১.১৩ বিলিয়ন ডলার। ব্যাংকগুলোর দায় পরিশোধের তুলনায় ডলারের প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণেই মূলত এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এ ছাড়া সোয়াপের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ডলার সরবরাহের কারণেও কিছুটা প্রভাব পড়েছে বলে জানান তাঁরা।

এ বিষয়ে অন্য একটি ব্যাংকের ট্রেজারিপ্রধান বলেন, ডলার হোল্ডিং মোটামুটি সব ব্যাংকের ভালো। ব্যাংকগুলোর বাড়তি যে ডলার ছিল তা সোয়াপের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রয়েছে। তাই ডলার হোল্ডিং কমতে পারে। এ ছাড়া অন্য কোনো কারণ দেখছি না। কারণ এখন পেমেন্টের তেমন চাপ নেই। আগামী জুন-জুলাইয়ে চাপ বাড়বে। কারণ মার্চ-এপ্রিলে এলসি খোলা আগের তুলনায় অনেকটা বেড়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button