Bangladesh

ক্ষমতা হারানোর ভয়েই শিক্ষার্থীদের ওপর হিংস্র হামলা: মির্জা ফখরুল

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থা সংস্কারের যৌক্তিক দাবিতে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ওপর সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নৃশংসভাবে আহত করেছে। শিক্ষার্থীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে অসংখ্য শিক্ষার্থীকে আহত করা কাপুরুষোচিত ও ন্যক্কারজনক। ক্ষমতা হারানোর ভয়েই শিক্ষার্থীদের ওপর এই হামলা। অবশ্যই এ ধরনের পৈশাচিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের শাস্তি পেতে হবে। আর ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবিকে রক্তাক্ত পন্থায় দমনের যে দৃশ্য দেশবাসী অবলোকন করর তা আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আরেকটি হিংস অধ্যায় হিসাবে ইতিহাসে সংযোজিত হবে।’ সোমবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।

বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল আহত শিক্ষার্থীদের আশু সুস্থতা কামনা করেন এবং গভীর সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, ‘বর্তমান অবৈধ সরকারের হাতে জনগণ, রাষ্ট্র, সমাজ, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব কখনোই নিরাপদ নয়। পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের দিয়ে শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরানোর বীরত্বে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী এখন আত্মহারা। দমন-পীড়নের ভয়াবহ পন্থা অবলম্বন করে তারা দেশবাসীকে নিথর-নিস্তব্ধ করতে চায়। আওয়ামী সরকার গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের ওপর যেভাবে স্টিমরোলার চালাচ্ছে, ঠিক একইভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীর চলমান আন্দোলনকে দমনের পন্থা গ্রহণ করেছে। ’

তিনি বলেন, ‘কোটা সংস্কারের ন্যায্য দাবিতে রাজধানীসহ সারা দেশে বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীদের রাজপথের উত্তাল আন্দোলনে সরকার বেসামাল হয়ে পড়েছে। সেজন্যই আন্দোলন দমাতে এখন রাষ্ট্রশক্তি নির্দয়ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটাই আওয়ামী ফ্যাসিবাদের চিরাচরিত বৈশিষ্ট্য। কোটা নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ডামি আওয়ামী সরকার ক্রমাগত প্রতারণা করে যাচ্ছে। কারণ জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য। অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালে কোটা বাতিলের পর চলতি বছর পুনরায় ভিন্ন কায়দায় কোটা পুনর্বহাল করলেন।’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘দুর্নীতি ও হানাহানি যাদের অবলম্বন তারা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনেও শঙ্কিত হয়ে পড়ে। কারণ লুটপাটের ভাবধারায় চালিত সরকার দিয়ে কখনোই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তাই সম্মিলিত কণ্ঠের আওয়াজকে নিস্তব্ধ করতে তারা ভয়ংকর হিংস তার পথ বেছে নেয়।’

শিক্ষার্থীদের দাবি যুক্তিযুক্ত-মান্না : এদিন এক বিবৃতিতে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে দেশকে এক সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সংগতভাবে এ ব্যাপারে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এবং প্রধানমন্ত্রীকে সব শিক্ষার্থী এবং সমর্থককে রাজাকারের দোসর হিসাবে চিহ্নিত করার বক্তব্য প্রত্যাহার করতে বলেছেন। এটা একটা খুবই যুক্তিযুক্ত দাবি এবং গণতান্ত্রিক দেশগুলোয় এর নজির আছে।’

শিক্ষার্থীদের দাবির প্রসঙ্গে মান্না বলেন, এ কথায় কর্ণপাত না করে ছাত্রলীগ ও তার পাণ্ডারা আজ সারাদিন যে তাণ্ডব চালিয়েছে তাকে ধিক্কার জানাচ্ছি। এ ঘটনায় শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই নারী শিক্ষার্থীসহ অন্তত দেড়শ জনকে রক্তাক্ত করেছে ছাত্রলীগ এবং সরকারের বহিরাগত গুন্ডারা। তিনি বলেন, আমি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই- আইয়ুব, ইয়াহিয়া থেকে যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরিয়েছে তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। ভোটবিহীন জবরদখলকারী এই সরকারের জন্য একই পরিণতি অপেক্ষা করছে।

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা-সাকি : গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল এক যৌথ বিবৃতিতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। তারা বলেন, সরকার শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনকে দমন করতে ছাত্রলীগ নামধারী হেলমেট বাহিনীকে মাঠে নামিয়ে দিয়েছে। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাকে রক্তাক্ত করেছে ন্যায্য দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের রক্তে।

নেতারা বলেন, সরকারপ্রধান ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন সম্পর্কে যেসব মন্তব্য করেছেন তা অযৌক্তিক এবং অনভিপ্রেত। প্রধানমন্ত্রীর পদে বসে থেকে দেশের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে, এমনকি শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে অবমাননামূলক উক্তি চরম নিন্দনীয়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button