ক্ষুধায় কাতর সন্তান, ভেলায় চড়ে মা খুঁজছেন খাবার: সরেজমিন-ফেনী
ফেনীর মুহুরীগঞ্জের কলিমউদ্দিন ভুঁইয়া বাড়ির নূর নাহার বেগম। শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েছেন ত্রাণের জন্য। তিনি বললেন, ছোট ছোট সন্তান নিয়ে ঘরের ছাদে আশ্রয় নিয়েছি। বৃহস্পতিবার থেকে কেউ কিছু খেতে পারিনি। ওদের কান্না দেখে নিজের ক্ষুধা ভুলে গেছি। এক প্রতিবেশী সাঁতার কেটে সড়কে এসে কলাগাছের ভেলা বানিয়ে দিয়ে গেছে। সেটাতে চড়ে ঘুরে ঘুরে সন্তানদের জন্য খাবার জোগাড়ের চেষ্টা করছি।
গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম থেকে মিরসরাই বাজার পার হতেই খালেবিলে অথৈ পানি। ধুমঘাট সেতু পেরিয়ে নতুন সমিতি বাজার। এখানে মহাসড়কের ওপর দিয়ে বইছে স্রোত। পাশেই ছাগলনাইয়ার নিজকুনজরা, দৌলতপুর, মুহুরীগঞ্জ ও ঘোপাল গ্রাম তলিয়ে আছে।
বৃদ্ধ ফয়েজ আহমদ থাকতেন ফেনী শহরের পশ্চিম রামপুরায়। বৃহস্পতিবার সকালে বাসার নিচ তলায় পানি ঢুকলে আশ্রয় নেন দ্বিতীয় তলায়। শুক্রবার সকালে পানি কমতে থাকলে বাসা থেকে বের হন। সাঁতরে গলাপানি পার হয়ে ওঠেন রাস্তায়। সেখানেও বুকসমান পানি। সঙ্গে তীব্র স্রোত। কথা বলার অবস্থায় নেই তিনি। তার পরও বললেন, প্রায় চার ঘণ্টায় মহিপাল হয়ে মুহুরীগঞ্জ পৌঁছেছি। কোনো রকম প্রাণ নিয়ে এসেছি। জীবনে এমন পানি দেখিনি।
চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন গাড়িতে আসছে ত্রাণ। অনেকে ট্রাকে করে নৌকা ও ট্রলার নিয়ে হাজির হচ্ছেন। মহাসড়কে পানির কারণে সামনে যেতে পারছে না। মহাসড়কের আশেপাশের লোকজন ভেলা নিয়ে এসে খাবার সংগ্রহ করছেন। কিন্তু স্বেচ্ছাসেবীরা ত্রাণ নিয়ে গ্রামে যেতে পারছেন না।
স্বজনদের খোঁজ নিতে চট্টগ্রামের ফাজিলপুরের বাসিন্দা মো. আহাদ এসে আটকা পড়েছেন খাইয়ারা এলাকায়। পানির তোড়ে এগোতে পারছেন না। তিনি বলেন, সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কথা হয়, তখন এক কাপড়ে পরিবারের লোকজন বের হয়ে পাশের স্কুলে আশ্রয় নেয়। এক তলা ডুবে গেছে। এর পর আর খবর নেই। প্রাণে বাঁচলেও ওরা তো ক্ষুধায় মরে যাবে!
ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নেওয়া চট্টগ্রামের শিহাব জিসান বললেন, বন্ধুরা মিলে কিছু খাবার নিয়ে এসেছিলাম। দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি। কাউকে দিতে পারিনি। সড়কে পানি না কমায় ফিরে যাচ্ছি।
উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরণ করে ফিরছিলেন সীতাকুণ্ডের শুভ কর্মকার। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাতে এলাকার বেশ কয়েকজন এসেছিলেন। ফুলগাজী থেকে অনেককে উদ্ধার করেন। গ্রামের ভেতরে অবস্থা ভয়াবহ। অন্যরা আছে। অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনি ফিরে যাচ্ছেন।
পণ্যবাহী কাভার্ডভ্যান নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে রওনা হন চালক আহমদ কবির। নতুন সমিতি বাজার এলাকায় আটকে পড়েন। শুক্রবার সন্ধ্যায় ধুমঘাট সেতু এলাকায় তিনি বলেন, মানবেতর দিন-রাত কাটিয়েছি। কোনোভাবে প্রস্রাব করা যায়। পায়খানার সুযোগ নেই। হানিফ পরিবহনের চালক আব্দুল মাবুদ বলেন, যাত্রী নিয়ে বৃহস্পতিবার সাড়ে ১০টায় রওনা হয়েছি। সাড়ে ১২টার দিকে ফেনীর কসকা গিয়ে আটকা পড়ি। সারা রাত ছিলাম, সকালে যাত্রীরা ফিরে গেছেন। খাবার নেই, পানি নেই। ভয়াবহ অবস্থা। নারী-শিশুরা খুবই কষ্টে রয়েছে।