ক্ষুধার বুলেটে মরছে সুদান
মৃত্যুপুরী সুদান এবার ক্ষুধার রাজ্যে পরিণত হয়েছে। নৃশংস সংঘাতে বিধ্বস্ত দেশটিতে চরম খাদ্য সংকট বেড়েই চলেছে। ক্ষুধার যন্ত্রণা কুরে কুরে খাচ্ছে রাজধানী খার্তুমের বাসিন্দাদের। ঠেলে দিচ্ছে মৃত্যুর দিকে। অপুষ্টি ও অনাহারে ভোগা মানুষগুলো মৃত্যুকেই জীবনের শেষ সমাধান হিসেবে বেছে নিচ্ছে। ওমদুরমানের বেহালাবাদক খালেদ সেনহৌরি ক্ষুধার জ্বালায় শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। খাদ্য ও পানির অভাব যেন বুলেটের মতোই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে দেশটিতে।
১৫ এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যে শুরু হওয়া সহিংসতার প্রাদুর্ভাবের পর থেকে দেশের খাদ্য আমদানি মারাত্মক ব্যাঘাতের সম্মুখীন হয়েছে। খাদ্যের অভাব দিন দিন ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। খালি হয়ে পড়ে আছে সুপার মার্কেটের তাকগুলো। বেশির ভাগ বাজার, দোকান ও পেট্রল স্টেশনগুলো বন্ধ রয়েছে। প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের দাম আকাশচুম্বী হয়ে গেছে। মুরগির মাংস প্রায় নেই বললেই চলে। এদিকে ফল ও সবজিও বাজার থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। ক্ষুধা আর অপুষ্টি সহ্য করা ছাড়া কোনো উপায়ও আর নেই। ১৯ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ ইতোমধ্যেই ক্ষুধার সাথে লড়াই করছে।
জাতিসংঘ বলেছে, ২৫ মিলিয়ন মানুষের (যা সুদানের অর্ধেকেরও বেশি জনসংখ্যা) খাদ্যের প্রয়োজন ও ১৩.৬ মিলিয়ন মানুষের মানবিক সহায়তার প্রয়োজন। কিন্তু এ সংকটে ফসলের ফলন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। সারা দেশে প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহের অভাব দেখা দিয়েছে। সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ৩ হাজার ৯০০ জন মানুষ নিহত হয়েছে। অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে ২.৬ মিলিয়ন মানুষ।
যুদ্ধের ফলে প্রয়োজনীয় সংস্থা ও সরবরাহের চ্যানেলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। যা খাদ্য সরবরাহ মানুষের কাছে পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব করে তুলেছে। শিশু, গর্ভবতী মহিলা, অসুস্থ ও বৃদ্ধসহ দুর্বল জনগোষ্ঠী এ বিপর্যয়ের ধাক্কা বহন করছে। মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে তারা। খাদ্য সংকট স্বাস্থ্যের ওপরও ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলছে। এ পরিস্থিতে উৎপাদনের আসন্ন ব্যবধান পূরণে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো জোয়ার, চীনা বাদাম ও তিলের মতো প্রধান ফসলের বীজ বিতরণ শুরু করেছে। তবে সংকট যে শুধু সুদানের জীবিকা ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি তা নয়। খাদ্য রপ্তানির পতন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও প্রভাব ফেলছে।