Bangladesh

খরচ ও ভোগান্তিতে নাকাল গ্রাহক, ইন্টারনেট সেবায় বিশৃঙ্খলা: পাঁচ মাসে গ্রাহক কমেছে প্রায় ৩৫ লাখ

মোবাইল ফোনের ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। ৩ ও ১৫ দিনের প্যাকেজ বন্ধের পর কমছে মোবাইল ফোনের ইন্টারনেট গ্রাহক। গত ৫ মাসে গ্রাহক কমেছে প্রায় ৩৫ লাখ। যারা ছোট ছোট ইন্টারনেট প্যাকেজ ব্যবহার করতেন তারা এখন ইন্টারনেট ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছেন। অপারেটররাও প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে নতুন সিদ্ধান্ত আসার পর খরচ প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। এখন ইন্টারনেটের প্যাকেজগুলো এমনভাবে করা হচ্ছে যাতে ন্যূনতম ব্যবহারের জন্য সাত দিনের একটি প্যাকেজ কিনতেও ২০০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। বিটিআরসির এই সিদ্ধান্তে চরম বিরক্ত গ্রাহকরা। এর সঙ্গে ঠিকমতো নেটওয়ার্ক না পাওয়ার অভিযোগ তো আছেই। পাশাপাশি অব্যবহৃত ইন্টারনেটের ক্ষেত্রেও সমাধান আসেনি।

এই বিশৃঙ্খলা কীভাবে সমাধান করা যাবে? জানতে চাইলে টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা—বিটিআরসিকে গণশুনানির আয়োজন করতে বলেছি। খুব শিগগিরই গণশুনানি করা হবে। সাধারণ মানুষের কথা শোনার পর আমরা এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব। সাধারণ মানুষ যেভাবে চাইবেন সেভাবেই আমরা ব্যবস্থা নেব। কেউ অনৈতিকভাবে সুবিধা পাবে না।’

গত বছরের ১৫ অক্টোবর থেকে ৩ থেকে ১৫ দিনের ইন্টারনেট প্যাকেজ বন্ধ করে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। একই সঙ্গে ইন্টারনেট প্যাকেজের সংখ্যা ৯৫ থেকে কমিয়ে ৪০টিতে নামিয়ে আনা হয়। এর ফলে ইন্টারনেট ব্যবহারে প্রতি জিবিতে গ্রাহকের খরচ ১০ থেকে ১৫ টাকা বাড়ে। নির্বাচনের আগে ৬৮ টাকায় দেড় জিবি ইন্টারনেট দিত অপারেটরগুলো। কয়েক দিন হলো ৬৮ টাকায় আর এক জিবি ইন্টারনেট পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। আগে ৪৮ টাকায় এক জিবি ইন্টারনেট পেতেন গ্রাহকরা। নির্বাচনের আগে গ্রাহকরা প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন। তখন তত্কালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার অপারেটরদেরকে ডেকে আগের দাম বহাল রাখতে নির্দেশনা দেন। অপারেটররা আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

নতুন সিদ্ধান্তে কি ইন্টারনেট খরচ বেড়েছে? জানতে চাইলে মোবাইল অপারেটর রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদুল আলম ইত্তেফাককে বলেন, ‘বিটিআরসির নতুন সিদ্ধান্তে আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমাদের তো রাজস্ব বাড়েনি। গ্রাহকও বাড়েনি। একটা জিনিস বুঝতে হবে, কোনো প্যাকেজের মেয়াদ বাড়লে খরচও বাড়ে। আমাদের নেটওয়ার্কে ঐ প্যাকেজটা লম্বা সময় ধরে রাখতে হয়। আসলে যেটা হয়েছে, নতুন সিদ্ধান্তে ছোট ছোট প্যাকেজ কেনা গ্রাহকরা কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন। আগে যারা তিন দিনের প্যাকেজ কিনতেন তারা এখন দাম বেশি বলে কিনছেন না। এই কারণে ইন্টারনেট গ্রাহকও কমছে। তিন দিনের একটা প্যাকেজ কিনতে যে টাকা লাগত, এখন ঐ রেশিওতে সাত দিনের প্যাকেজের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। বিটিআরসি আমাদের এই প্যাকেজের অনুমোদনও দিয়েছে। আমরা এখনো নতুন সিদ্ধান্তের বিষয়টি পর্যালোচনা করছি। খুব শিগগিরই বিটিআরসিকে আমাদের পর্যবেক্ষণ জানাব।’

গত বছরের ১৫ অক্টোবর নতুন সিদ্ধান্ত আসার আগের মাসে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে দেশে ইন্টারনেটের গ্রাহক ছিল ১৩ কোটি ২২ লাখ ৬০ হাজার। এর মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেটের গ্রাহক ছিল ১১ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার। বিটিআরসির সর্বশেষ জানুয়ারি মাসের হিসাব অনুযায়ী দেশে এখন ইন্টারনেট গ্রাহক ১২ কোটি ৯১ লাখ ৮০ হাজার। এর মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক ১১ কোটি ৬৩ লাখ। অর্থাৎ ৫ মাসে মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক কমেছে ৩৪ লাখ ৭০ হাজার। অন্যদিকে গত পাঁচ মাসে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বেড়েছে ৪ লাখের মতো।

নতুন সিদ্ধান্তে গ্রাহকরা যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, বিষয়টি কি বিটিআরসির নজরে এসেছে? জানতে চাইলে বিটিআরসির মহাপরিচালক (এসএস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করছি। অপারেটরদের এ ব্যাপারে পর্যবেক্ষণ আমরা জানতে চেয়েছি। তাদের রিপোর্ট পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি গণশুনানির আয়োজন করা হচ্ছে। সেখানে গ্রাহকরা কী বলেন, সেটাও আমরা আমলে নেব।’ 

মোবাইল অপারেটররা আগেই বিটিআরসিকে জানিয়েছিল, দেশে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে শতকরা ৬৯ দশমিক ২৩ ভাগ তিন দিনের ডেটা প্যাকেজ ব্যবহার করে। এ অবস্থায় জনপ্রিয় এই প্যাকেজ বন্ধ করে দিলে শিক্ষার্থীসহ নিম্ন আয়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে বিটিআরসির যুক্তি, তিন দিনের প্যাকেজে যে পরিমাণ ডেটা দেওয়া হয় তার সবটুকু ব্যবহার করা হয় না। সে কারণে মেয়াদ বাড়ালে গ্রাহকরা উপকৃত হবে। অথচ এখন হচ্ছে উলটোটা।

ভিপিএন সেবাদানকারী প্ল্যাটফরম সার্ফ শার্ক প্রকাশিত গ্লোবাল ইন্টারনেট ভ্যালু ইনডেক্স (আইভিআই) শীর্ষক এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, বাংলাদেশিরা ইন্টারনেট ব্যবহারে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় প্রায় ৬ দশমিক ৯ গুণ বেশি অর্থ খরচ করছে। গত নভেম্বরে রিপোর্টটি প্রকাশ করেছে আইভিআই। ইন্টারনেটের জন্য যে খরচ করা হয়, সে রকম সেবা পাওয়া যাচ্ছে কি না, তার ওপর ভিত্তি করে গ্লোবাল ইন্টারনেট ভ্যালু ইনডেক্স তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে ইন্টারনেট ব্যবহারে কোন দেশ কেমন খরচ করে, তার একটি ক্রমতালিকা তারা প্রকাশ করে। এ তালিকায় বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে ৮৩তম এবং আঞ্চলিকভাবে তৃতীয় অবস্থানে আছে। সার্ফ শার্ক বলছে, বাংলাদেশের ইনডেক্স ০.০১০৫ যা বৈশ্বিক গড় ইনডেক্স থেকে প্রায় ৮৬ শতাংশ কম। এর অর্থ বাংলাদেশিদের ইন্টারনেটসেবা পেতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে এবং এ ক্ষেত্রে বিশ্বের মাত্র ২৪ শতাংশ দেশ বাংলাদেশের চেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d