Hot

খাদ্যপণ্যে ক্রেতার হাঁসফাঁস

পবিত্র রমজান মাসে বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও এখন আর তা নেই। ঈদের পর থেকে ভোগ্যপণ্যের বাজারে আবার অস্থিরতা শুরু হয়েছে। গত দুই মাসের ব্যবধানে চিকন চাল (মিনিকেট), মোটা চাল, সয়াবিন তেল, পেঁয়াজ, ফার্মের মুরগির ডিম—এই পাঁচটি পণ্যের দাম সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে। আয়ের সঙ্গে সংগতি না থাকায় খাদ্যপণ্যের চড়া দামে চাপে পড়েছেন ভোক্তারা।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের সক্রিয়তা ধারাবাহিক নয়। ভোক্তারা এতে পণ্যের বাজারে প্রত্যাশিত সুবিধা পাচ্ছেন না। তাঁরা বলছেন, তদারকি না থাকায় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি করছেন। এখনই লাগাম টেনে ধরতে না পারলে বাজারে অস্থিরতা বাড়বে।

সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি এবং রাজধানীর খুচরা বাজারের ২৮ এপ্রিল ও গত ২৮ ফেব্রুয়ারির বাজারদর পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত দুই মাসের ব্যবধানে খুচরায় প্রতি কেজি চিকন চাল (মিনিকেট) ১২ থেকে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে মানভেদে কেজি ৮৫ থেকে ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চালের বাজারে সবচেয়ে বেশি চাহিদাসম্পন্ন মোটা চাল ব্রি-২৮ বা পাইজাম এই সময়ের ব্যবধানে ৭ শতাংশ দাম বেড়ে মানভেদে ৬২ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটারে ৮ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়ে এক লিটার ১৮৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভরা মৌসুমেও বেড়েছে পেঁয়াজের দাম।

দুই মাসের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ দাম বেড়ে মানভেদে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত কয়েক মাস ধরে বাজারে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম সহনীয় রয়েছে। গত দুই মাসের ব্যবধানে ৪ শতাংশ দাম বেড়ে ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে ব্রয়লার মুরগির দাম ১৭ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি এখন ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুরগির দাম ও ডিমের এই দাম ক্রেতাদের অনেকটাই স্বস্তি দিচ্ছে।

বাজারে সবজির দাম এখন বেশ চড়া। গতকাল রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজার, রামপুরা ও বাড্ডাসহ বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে বেশির ভাগ সবজি ৮০ টাকা কেজি। কিছু সবজির দাম শতক ছাড়িয়েছে। বেগুন মানভেদে ৮০ থেকে ১০০, ঝিঙা ১০০ থেকে ১২০, করলা ৮০ থেকে ১০০, পটোল ৮০, চিচিঙ্গা ৮০ থেকে ৯০, শজনে মানভেদে ১২০ থেকে ১৫০, ঢেঁড়স ৮০, টমেটো ৪০ থেকে ৫০, বরবটি ৮০ থেকে ১০০, গাজর ৫০ থেকে ৭০, কাঁচা মরিচ ১২০ থেকে ১৪০, পেঁপে ৫০ থেকে ৬০ এবং দেশি শসা ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পিস লম্বা লাউ ৭০ থেকে ৮০ এবং চালকুমড়া ৬০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে।

অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, আগের তুলনায় সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও বাজারে চাল, তেল ও সবজির চড়া দামে দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। যেভাবে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে, মূল্যস্ফীতি আবার বেড়ে যেতে পারে। আয় বৃদ্ধির তুলনায় মূল্যস্ফীতির হার বেশি হলে গরিব ও মধ্যবিত্ত মানুষ সংসার চালাতে ভোগান্তিতে পড়ে। কয়েক অর্থবছর ধরে চলা এই উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। প্রভাব পড়ছে মানুষের যাপিত জীবনে।

দেশে পেঁয়াজের ভরা মৌসুমের মধ্যেই ঈদের পরপরই হঠাৎ কেজিতে এক লাফেই ২০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দুই মাস আগের তুলনায় বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা কমেছে ঠিকই, তবে যে হারে দাম বাড়ছে, তা অস্বাভাবিক। আবার বাজার সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়েছে, যারা কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে মুনাফা লুটছে।

রাজধানীর রামপুরার খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা আব্দুল বারী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখন পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। কৃষকরা পেঁয়াজ উৎপাদন করে বাজারে ছেড়ে দিয়েছেন। এই সুযোগে মুনাফালোভী কিছু বড় ব্যবসায়ী মজুদ বাড়িয়ে কারসাজি করে দাম বাড়াচ্ছেন।’

রাজধানীর জোয়ারসাহারা বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. সাইফুল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রমজানে সবজির ভরা মৌসুম ছিল। তাই তখন বাজারে পর্যাপ্ত সবজির সরবরাহের কারণে দামও ক্রেতার নাগালে ছিল। এখন সবজির অফ সিজন চলছে, তাই বাজারে সবজির সরবরাহ কিছুটা কম। তাই পাইকারি বাজারেও দাম বাড়তি।’

বাড্ডার কাঁচাবাজারে রেবা সুলতানা নামের এক গৃহিণী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঈদের পর সরকার বাজারের দিকে নজর কমিয়ে দিয়েছেঅ এই সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা তাঁদের ইচ্ছামতো পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। ঈদের আগে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া সবজিগুলো এখন ৮০ টাকার নিচে কেনা যাচ্ছে না। এদিকে কৃষকরা পেঁয়াজের দাম না পেয়ে আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছেন। কিন্তু ভোক্তাদের বাড়তি দামেই পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। মাঝে লাভ চলে যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে।’

মহাখালী কাঁচাবাজারে কথা হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সোলাইমান শেখের সঙ্গে। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরে একটি প্রতিষ্ঠানে এ একই পদে চাকরি করছি। এই সময় আমার বেতন বেড়েছে মাত্র সাত হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। বাসাভাড়া, গ্যাস-বিদ্যুৎ বিল ও খাদ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে এখন পরিবার নিয়ে চলতে খুবই কষ্ট হয়।’

ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ভলান্টারি কনজিউমারস ট্রেনিং অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস সোসাইটির (ভোক্তা) নির্বাহী পরিচালক মো. খলিলুর রহমান সজল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বর্তমানে বাজার নিয়ন্ত্রণহীন। এর পেছনে রয়েছে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য।’

ভোক্তার নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘রমজান শেষ হওয়ার পর থেকে পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এখন গ্রীষ্মকালের সবজি ঝিঙা, করলা, পটোল ও চিচিঙ্গার দাম আকাশচুম্বী। গত বছর এই সময় এসব সবজির দাম প্রায় অর্ধেক ছিল। ভোক্তার আরো কষ্টের কারণ সম্প্রতি হঠাৎ করে তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা বেড়ে যাওয়া। সরকারকে দ্রুত বাজার তদারকিতে জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor