Trending

খাদ্য ও সেবার বাড়তি দাম, মূল্যস্ফীতিতে অস্থিরতা

গত ২ বছর ধরে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হার মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়ে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতির হার বাড়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে খাদ্যপণ্যের দামের লাগামহীণ বৃদ্ধি। 

দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মৌলিক পণ্য ও সেবা খাতের উপকরণের দাম বৃদ্ধি। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিতে তৃতীয় অবস্থানে ভূমিকা রেখেছে জ্বালানি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি।  এসব পণ্যের দাম বেশি বাড়ায় মূল্যস্ফীতির হারও হু হু করে বেড়ে অস্থিরতার সৃষ্টি করেছে।

দেশের সার্বিক অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি নিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি একটি গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। মার্চ পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের মোট মূল্যস্ফীতির হার গড়ে প্রায় ১০ শতাংশ। একে ১০০ ধরলে এর ৪৫ শতাংশ বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে খাদ্যপণ্যের বাড়তি দাম। 

৪০ শতাংশ বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে মৌলিক পণ্য ও সেবা খাতের উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি এবং জ্বালানি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি ভূমিকা রেখেছে ১৫ শতাংশ বাড়াতে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে আন্তর্জাতিক বাজারে সব পণ্যের দাম বাড়তে থাকে। এর প্রভাবে দেশের বাজারেও পণ্যের দাম বাড়তে থাকে। ফলে ওই বছরের এপ্রিল থেকেই মূল্যস্ফীতির হার ঊর্ধ্বমুখী হয়। 

ওই বছরের আগস্টে প্রথমবারের মতো মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ৯ শতাংশ অতিক্রম করে। সেপ্টেম্বরেও ৯ শতাংশের উপরে ছিল। অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি এই ৫ মাস ছিল ৯ শতাংশের নিচে ও ৮ শতাংশের উপরে। গত বছরের মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের উপরে রয়েছে। 

টানা দেড় বছর ধরে এ হার ৯ শতাংশের উপরে অবস্থান করছে। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ডাবল ডিজিটের ঘর অতিক্রম করেছে। এত দীর্ঘ সময় মূল্যস্ফীতির হার চড়া থাকাটা উদ্বেগজনক। এতে ভোক্তার ভোগান্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। অর্থাৎ ২০২২ সালের আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত মূল্যস্ফীতির হার ৮ ও ৯ শতাংশের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো কিছুতেই এ হার কমছে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দুঃসংবাদ দিয়ে পূর্বাভাস দেওয়া দেওয়া হয়, চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মূল্যস্ফীতির হারে নেতিবাচক প্রভাব অব্যাহত থাকতে পারে। কারণ ওই সময়ে মৌলিক পণ্য ও জ্বালানি উপকরণের দাম আরও বাড়বে। এর প্রভাবে মূল্যস্ফীতির হারও বেড়ে যেতে পারে। একই সঙ্গে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার কারণেও এতে চাপ বাড়তে পারে।

প্রতিবেদনে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলা হয়, মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে নেওয়া বহুমুখী পদক্ষেপের ইতিবাচক প্রভাব আগামী বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে কিছুটা পড়তে পারে। ওই সময়ে এ হার কমতে পারে। একই সময়ে বাজারে ডলারের প্রবাহ আরও বেড়ে টাকার মান স্থিতিশীল হতে পারে।   

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ডলারের দাম ও মূল্যস্ফীতির হারের বিষয়ে ইতঃপূর্বে যেসব পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে সেগুলোর কোনোটিই ফলেনি। বাস্তবে ঘটেছে উলটো।

আলোচ্য প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক তার প্রাথমিক লক্ষ্য হিসাবে পণ্যের মূল্য স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে অগ্রাধিকার দেয়। এ লক্ষ্যে ভোক্তা মূল্য এবং মজুরি স্তরের মধ্যে একটি সমন্বয় থাকা জরুরি। ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে এ খাতে সমন্বয় নেই। এক্ষেত্রে অস্থিরতার মূল কারণগুলো পর্যবেক্ষণ করে মুদ্রানীতির মাধ্যমে আয় বাড়ানো ও মূল্যস্ফীতির কমানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তারপরও মূল্যস্ফীতিতে ঊর্ধ্বমুখী চাপ অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ৯ থেকে ১০ শতাংশের উপরে অবস্থান করছে। যা কাক্সিক্ষত মাত্রার তুলনায় বেশি। 

২০২৪ সালের আগামী মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতির হারে অস্থিরতা থাকতে পারে। কারণ এখন মৌলিক পণ্য ও জ্বালানি উপকরণের দাম বাড়তে শুরু করেছে। একই সঙ্গে সেবা খাতের উপকরণের দামও বাড়ছে।

এতে বলা হয়, চক্রাকারে খাদ্য, মৌলিক পণ্য, সেবা ও জ্বালানি উপকরণের দাম বেড়েছে। খাদ্যের দাম কমলেও এ খাতে মূল্যস্ফীতি কমে। কিন্তু খাদ্যবহিভর্‚ত খাতে এ হার বেড়ে যাচ্ছে। তখন খাদ্য বহিভর্‚ত খাতের কারণে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যাচ্ছে। ফলে একেক সময় ভিন্ন ভিন্ন খাত মূল্যস্ফীতির হার বাড়াতে উপসর্গ হিসাবে আর্বির্ভূত হয়েছে।

২০২৩ সালে গড় মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের উপরে ছিল।  এই বৃদ্ধির প্রায় এক চতুর্থাংশ ভ‚মিকা রেখেছে হোটেল, রেস্তোরাঁ, বিনোদন, স্বাস্থ্য ও ব্যক্তিগত প্রয়োজন মেটানোর পণ্যের দাম বাড়ার কারণে। এগুলোর নেপথ্যে ভূমিকা রেখেছে খাদ্যপণ্য, জ্বালানি ও সেবার দাম বৃদ্ধি। এর প্রভাবে ওইসব খাতে দাম বেড়ে মূল্যস্ফীতি হয়েছে।
 
এছাড়াও সিগারেট, গহনা, ভ্রমণের আনুষঙ্গিক বিষয় এবং কিছু পরিষেবা খাতের কারণেও মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। তবে আসবাবপত্র, পোশাক এবং জুতার দামের কারণে মূল্যস্ফীতিতে অবদান ব্যাপকভাবে স্থিতিশীল ছিল। তবে মার্চে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর নেতিবাচক প্রভাব আগামীতে মূল্যস্ফীতিতে পড়বে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor