Bangladesh

খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার আবেদন নাকচ: পর্দার আড়ালে ‘কলকাঠি’, আবেদন পুনর্বিবেচনার সুযোগ নেই – আইনমন্ত্রী

গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর আবেদন হঠাৎ কেন চাওয়া হয়েছিল? আবার কেনইবা তা নাকচ করে দিল সরকার? জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের হাসপাতালে ভর্তির ব্যাপারে বিএনপিইবা খোঁজখবর নিল কেন? ‘পর্দার আড়ালে’ সরকারের পক্ষ থেকে কি কোনো ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেয়েছিল তারা? না পেলে কেন এত প্রস্তুতির তোড়জোড় শুরু করেছিল বিএনপি ও খালেদা জিয়ার পরিবার? গতকাল রোববার আইন মন্ত্রণালয় খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার আবেদন নাকচ করে দেওয়ার পর থেকেই অনেকের মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল এসব প্রশ্ন। যদিও সরকার এবং বিএনপি বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলছে না। তবে আবেদন নাকচ করার পক্ষে-বিপক্ষে আইনি ব্যাখ্যা দিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন তারা। অবশ্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের হাইকমান্ডের ‘সিগন্যাল’ ছাড়া আইনমন্ত্রী আবেদন চাওয়ার সাহস রাখেন না। আবার কোনো ‘ইঙ্গিত’ ছাড়া হঠাৎ করে বিএনপিরও সুনির্দিষ্টভাবে বিদেশে নিতে খোঁজখবর এবং প্রস্তুতি শুরু করার কথা নয়। নেপথ্যে শর্ত মানা বা না মানার বিষয়ও থাকতে পারে। আবার রাজনৈতিক হিসাবনিকাশে পরিবর্তনও হতে পারে।

বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের মতপার্থক্য হওয়ায় আবেদন নাকচ করে দিয়েছে। মন্ত্রীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী একমত হতে পারেননি। এক প্রশ্নের জবাবে ওই নেতা বলেন, কোনো শর্ত দিয়েছে বলে তিনি জানেন না।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর আবেদন নাকচ করার আগের দিন শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যেও নেতিবাচক বার্তা এসেছে। গতকাল রোববার তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিল আইন মন্ত্রণালয়। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বিদেশে পাঠাতে তাঁর পরিবারের করা আবেদন নতুন করে বিবেচনার কোনো সুযোগ নেই।

অথচ কয়েক দিন আগে আইনমন্ত্রীই বলেছিলেন, খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে বিদেশে চিকিৎসা নিতে কোনো আবেদন করা হয়নি। আবেদন করা হলে সরকার বিবেচনা করবে। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়– ইতোপূর্বে আবেদন করা হয়েছে। তারপরও ২৫ সেপ্টেম্বর আবার আবেদন করেছিলেন তাঁর ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার।

সরকারের আবেদন নাকচের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে বিএনপি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসলে প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্রে দেওয়া বক্তব্যেরই প্রতিফলন। আসলে প্রধানমন্ত্রী দুনিয়া থেকে খালেদা জিয়াকে সরানোর নীলনকশা বাস্তবায়ন করছেন। নাৎসি জার্মানির ‘সিক্রেট স্টেট পুলিশ’ যার সংক্ষিপ্ত নাম ‘গেস্টাপো’র ন্যায় বাংলাদেশে আওয়ামী ‘গেস্টাপো’ হিসেবে পরিচিত আদালত, পুলিশ ও প্রশাসন দিয়ে জনগণের সামনে মৃত্যুর খাঁড়া ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। গেস্টাপোরা বেঞ্জামিন ইনজেকশন দিয়ে তাদের প্রতিপক্ষ বন্দিদের হত্যা করত। বাংলাদেশেও এখন তাই চলছে। খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করার পর বিভিন্ন কায়দায় বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে বলে জনগণ বিশ্বাস করে।

অতীতের উদাহরণ দিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, দেশে ও বিদেশে বহু রাজনীতিবিদ কারাবন্দি থাকা অবস্থায় অসুস্থ হওয়ায় বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার অনেক নজির রয়েছে। এমনকি দেশে জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব কারাবন্দি হয়েও বিদেশে চিকিৎসা সুবিধা পেয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীসহ অন্য মন্ত্রীরা প্রচলিত আইনে তা সম্ভব নয় বলে জানাচ্ছেন।  
তবে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়েছে। একই ক্ষমতাবলে সরকার তাঁকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দিতে পারে। এর জন্য আদালতে যেতে হবে– এটি হয়তো ঠিক নয়। কেননা, ৪০১ ধারায় সরকারকে সব রকম ক্ষমতা দেওয়া আছে।

সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী কোনো আবেদন যদি একবার নিষ্পত্তি করা হয়, তবে সেই নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্ত পুনর্বিবেচনার আর কোনো সুযোগ এই আইনে থাকে না। তাই ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার উপধারা ১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ ব্যাখ্যা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মতামত পাঠানো হয়েছে। মতামতে বলা হয়েছে, ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে যে দরখাস্ত একবার নিষ্পত্তি করা হয়েছে, সেটা ‘পাস্ট অ্যান্ড ক্লোজড ট্রানজেকশন’, আইনগতভাবে এটা খোলার আর কোনো সুযোগ নেই।

আইনমন্ত্রী আরও বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যে আবেদন এসেছে, তাতে খালেদা জিয়ার স্থায়ী জামিন ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। একজন সাংবাদিক জানতে চান, যদি খালেদা জিয়ার পরিবার তাঁকে বিদেশে পাঠাতে চায়, তাহলে কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, তিনি বারবারই বলছেন, সেটি হলো– তাঁকে ফৌজদারি ৪০১ ধারায় দুটি শর্তযুক্তভাবে যে আদেশবলে সাজা স্থগিত রেখে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, সেটি বাতিল করে তারপর আবার বিবেচনা করার সুযোগ থাকলে তা করা হবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও গতকাল  বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে হলে দেশের প্রচলিত আইন, সংবিধান ও ফৌজদারি কার্যবিধি মেনে আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যেতে হবে। খালেদা জিয়ার বিষয়ে সব সিদ্ধান্ত আইনসম্মতভাবেই হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ইতোমধ্যে তা জানিয়ে দিয়েছেন। বিএনপিকে ইঙ্গিত করে মন্ত্রী বলেন, এর বাইরে চিকিৎসার জন্য তারা যত আন্দোলন-সংগ্রামই করুক, আইনের বাইরে গিয়ে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ নেই।

‘খালেদা জিয়ার সঙ্গে ভয়ংকর তামাশা’

খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদন আইনগতভাবে বিবেচনা না করে রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী বক্তব্য দেওয়ার পর গতকাল গণমাধ্যমে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় এ অভিযোগ করেন তিনি।
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলেন, সরকারের এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আবারও প্রমাণ হলো, দেশে আইনের শাসন নেই। এর মাধ্যমে খালেদা জিয়ার প্রতি এক ভয়ংকর তামাশা করা হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় সুস্পষ্টভাবে বলা আছে, সরকার চাইলেই নির্বাহী আদেশে তাঁকে মুক্তি দিতে পারত এবং বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ করে দিতে পারত।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি

এদিকে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে। গতকাল রোববার রাতে হঠাৎ তাঁর শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি পায়। মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের তাৎক্ষণিক তৎপরতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। এ সময় তাঁর এক্স-রে করানো হয়। একজন চিকিৎসক জানান, খালেদা জিয়াকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে নেওয়ার জন্য সার্বক্ষণিক প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। দুপুরে তাঁর ইসিজি ও ইকো ডায়াগ্রাম করানো হয়। ফুসফুসের পানি অপসারণের জন্য তাঁর ডান পাশে যে ক্যাথেটার লাগানো ছিল, সেটা আপাতত খুলে ফেলেন চিকিৎসকরা।

ওই চিকিৎসক জানান, বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা দুর্বলতার পাশাপাশি লিভার সিরোসিসের অবস্থা গুরুতর। এ বিষয়ে দেশে উন্নত চিকিৎসা নেই। তাঁর লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া বিকল্প নেই। লিভারের পাশাপাশি তাঁর কিডনি জটিলতা ও ডায়াবেটিসের মাত্রাও বাড়ছে। ফলে একটিকে কমাতে গেলে আরেকটিতে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এখন সহনশীল ওষুধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চলছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের শয্যা পাশে রয়েছেন তাঁর ছোট পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান সিঁথি। তিনি গুলশানের বাসা থেকে শাশুড়ির জন্য খাবার রান্না করে নিয়ে যান। ৭৮ বছর বয়সী খালেদা জিয়া কিডনি, ফুসফুস, হৃদরোগ, লিভার জটিলতায় ভুগছেন। গত ৯ আগস্ট রাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড তাঁকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
bacan4d
bacan4d