Bangladesh

খালেদা-তারেকের ১১৭ মামলা

চেয়ারপারসনের ৩৭ ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ৮০ মামলা ঝুলছে এখনো

এখনো মিথ্যা ও গায়েবি মামলার খড়গ ঝুলছে বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মাথার ওপর। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রয়েছে ৩৭টি মামলা। রাষ্ট্রপতির নির্দেশে কারামুক্তি মিললেও মামলা প্রত্যাহার বা শেষ হয়নি একটিও। অন্যদিকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রয়েছে ৮০টি মামলা। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যেভাবে ছিল সেভাবেই রয়েছে সব মিথ্যা মামলা। দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল- ৫ আগস্টের গণ অভ্যুত্থানের পর বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ নেতা-কর্মীরা সব মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তি পাবেন। এক মাসের মধ্যেই দলের সব নেতা-কর্মীর সর্বস্তরের মিথ্যা ও গায়েবি মামলা প্রত্যাহার করা হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায় আড়াই মাস হলেও এখনো পর্যন্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের কোনো নেতা-কর্মীর একটি মামলাও প্রত্যাহারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সারা দেশে ৬০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে (প্রায়) ৪ লাখ মামলার খড়গ পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলের মতোই স্থির হয়ে আছে। এতে ভীষণ ক্ষুব্ধ সারা দেশের বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন এ প্রসঙ্গে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মামলা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। এ নিয়ে আমরা আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দসহ সিনিয়র আইনজীবীরা কয়েক দফা বৈঠক করেছি। কীভাবে কী প্রক্রিয়ায় এ মিথ্যা ও গায়েবি মামলাগুলো দ্রুত শেষ করা যায় তার কৌশল নিয়ে আলোচনা করেছি। প্রতিটি মামলাই দায়ের করা হয়েছে প্রচ- রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত। এগুলো সবই সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট মামলা। কোথাও কোনো ঘটনা ঘটেনি, অথচ দেওয়া হয়েছে নাশকতার মামলা। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দেওয়া হয়েছে দুর্নীতির মামলা। অথচ এসবের সঙ্গে তাঁর বিন্দুমাত্র কোনো সম্পর্ক নেই। আর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দেওয়া হয়েছে অসংখ্য মিথ্যা মামলা। অথচ তিনি দেশে নেই আজ এক যুগেরও বেশি সময়। খুব শিগগিরই আমরা (সিনিয়র আইনজীবীরা) আবারও বসব এবং এ নিয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ের আলোচনা করব। আশা করি খুব শিগগিরই মামলা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়াটা আমরা শুরু করতে পারব ইনশা- আল্লাহ।’ বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক এবং বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মামলাগুলো পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের আমলে যে অবস্থায় ছিল এখনো সেভাবেই রয়ে গেছে। পাশপাশি বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের (প্রায়) ৬০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ৪ লাখ মামলাও সেই একই তিমিরে রয়ে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত এসব মামলা প্রত্যাহারের কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না।’

‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কেন এখনো দেশে ফিরছেন না ?’-এ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘তাঁর দেশে ফিরতে কোনো বাধা নেই। তবে তিনি দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি এবং দেশের সংবিধানের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাশীল। তিনি চান- যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া (আন্ডার সিআরপিসি) মেনেই তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলার জামিন ও প্রত্যাহার কার্যক্রম সম্পন্ন হোক। তাছাড়া দল ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সর্বশেষ কর্মীর শেষ মামলাটি প্রত্যাহারের আগ পর্যন্ত তাঁর নিজের মামলা প্রত্যাহার হোক এটাও তিনি চান না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন। তবে এটাও ঠিক যে- শুধু দলীয় নেতা-কর্মীরাই নন, তারেক রহমানের আগমনের অপেক্ষায় রয়েছেন দেশের লাখো-কোটি সাধারণ মানুষ। অতএব সময় হলে তিনি অবশ্যই দেশে ফিরে আসবেন।’     

জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৭টি ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এখনো ৮০টির মতো মামলা ঝুলছে। প্রক্রিয়াগত ধীরগতির কারণে এখনো মামলাগুলোর নিষ্পত্তি হচ্ছে না। আর মামলার আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন ব্যতীত তারেক রহমান দেশে ফিরবেন না। এজন্য বিএনপির নীতিনির্ধারক মহলের সদস্যরা অব্যাহত তাগিদ দিচ্ছেন। দল ও অঙ্গ-সংগঠনের পক্ষ থেকে আন্দোলনের হুমকিও অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দুজনেই দলীয় নেতা-কর্মীদের এ বিষয়ে ধৈর্য ধরে শান্ত থাকতে বলেছেন। তবে দলের এই দুই শীর্ষনেতাও চান সারা দেশে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ৬০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে যে (প্রায়) ৪ লাখ মিথ্যা ও গায়েবি মামলা স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ আমলে দায়ের করা হয়েছে- সেগুলো আর কালবিলম্ব না করে অন্তর্বর্তী সরকার যেন প্রত্যাহার করে নেয়।

এ বিষয়ে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মেজর অব. হাফিজউদ্দিন আহমদ বীরবীক্রম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা তরতাজা খুনের মামলার আসামি হয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জামিন ও মুক্তি পেয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি গণ অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী এম এ মান্নান ও সাবের হোসেন চৌধুরীর জামিন ও মুক্তির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতির এমন দুর্ভাগ্য যে তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মামলা প্রত্যাহার হয় না। কোটি মানুষের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মাথার ওপর মিথ্যা মামলাগুলো খড়গ হয়ে ঝুলছে। সারা দেশের অর্ধ কোটিরও বেশি বিএনপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে দায়ের করা লাখ লাখ গায়েবি মিথ্যা মামলায় এখনো তাদের আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। এগুলো কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।

একই বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এসব মামলা একসঙ্গে প্রত্যাহার করে নেওয়া উচিত। কারণ এ লোকগুলো তো এসব মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় টানা ১৫/১৬ বছর ধরে সাফার করেছে। এরপর তো আর এক দিনও তাদের এসব মামলায় সাফার করার কথা নয়। এ সময়ে একটা দিনও অনেক বেশি কষ্ট মনে হচ্ছে এখন। এত লড়াইয়ের মধ্যে, এত জুলুম-নির্যাতনের মধ্যেই এসব মিথ্যা মামলা দিয়েছে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এখনো মামলাগুলো চলমান রয়েছে। এটা হতে পারে না। এটা মেনে নেওয়া যায় না। এ অবস্থায় যদি একটা দিনও বেশি দেরি করা হয়- তাহলে তাদের প্রতি চরম অবিচার করা হবে। কারণ তাদের এই ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং বিশেষ অবদানের ফলেই কিন্তু আজ ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। আর তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি নিজের জীবন বিপন্ন করেও স্বৈরাচারের সঙ্গে আপস করেননি। মৃত্যুর দুয়ার থেকে বারবার ফিরে এসেছেন তিনি। সাড়ে ছয় বছর মিথ্যা মামলার সাজানো রায়ে কারাবরণ করেছেন। এখনো তিনি মারাত্মকভাবে অসুস্থ। অন্যদিকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে আজ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে দেশে আসতে দেওয়া হয়নি। মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিয়ে তাঁকে বিদেশে নির্বাসনে থাকতে বাধ্য করা হয়েছে। সেখানে থেকেই দিনরাত পরিশ্রম করে তিনি দলকে শক্তিশালী ও সুসংহত করেছেন। সব রাজনৈতিক দলসহ সমগ্র জাতিকে তিনি ঐক্যবদ্ধ করেছেন। হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে যার ফসল আজ বাংলাদেশের মানুষ পেতে শুরু করেছে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলাগুলোই এখনো পর্যন্ত বহাল রাখা হয়েছে। এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কিছু হতে পারে না।                  

বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যত মামলা : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে প্রায় ৮০টি মিথ্যা মামলা রয়েছে। ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাঁর বিরুদ্ধে এসব মামলা দেওয়া হয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সাজানো রায়ে পরিকল্পিতভাবে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলাগুলোর মধ্যে ৫টির বিচার শেষে সাজা ঘোষণা করা হয়েছে। আর কিছু মামলা স্থগিত অবস্থায় রয়েছে। লন্ডনে অবস্থান করায় আদালত তাঁকে পলাতক হিসেবে দেখিয়ে এসব রায় দিয়েছেন।

বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের দাবি, রাজনৈতিকভাবে এসব মিথ্যা মামলায় তারেক রহমানকে জড়ানো হয়েছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ১৭টি মামলা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, অর্থ পাচার মামলা ও সারা দেশব্যাপী মানহানির মামলাসহ প্রায় ৮০টি মামলা দেওয়া হয়। তার মধ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সমাবেশ চলার সময় গ্রেনেড হামলায় হতাহতের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা প্রক্রিয়ার শেষ দিকে তাঁকে নতুন করে জড়িয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের রায় দেওয়া হয়।     

২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তাঁর বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এ মামলায় অভিযোগ ছিল, এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে পাওয়া ২ কোটি ১০ লাখ টাকার বেশি অর্থ ট্রাস্টের কাজে ব্যবহার করা হয়নি। বরং সেই টাকা নিজেদের হিসাবে জমা রাখার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে।

এ মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদন্ড দেন বিচারিক আদালত। একই সঙ্গে তারেক রহমানসহ অন্য পাঁচ আসামিকে ১০ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়। হাই কোর্ট পরে খালেদা জিয়ার কারাদন্ড বাড়িয়ে ১০ বছর করেন।

এ মামলায় বেগম খালেদা জিয়া দুই বছর কারাভোগ করেন। ২০২০ সালে শর্তসাপেক্ষে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর রাষ্ট্রপতির আদেশে খালেদা জিয়ার দন্ড মওকুফ করে দেওয়া হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে। 

এ মামলায় তারেক রহমানকে ২০০৮ সালের ৭ মার্চ গ্রেপ্তার করা হয়। ২০০৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার্থে লন্ডন চলে যান তিনি।

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের মামলায় কারাদন্ড : ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তারেক রহমান, তাঁর স্ত্রী জোবাইদা রহমান ও জোবাইদা রহমানের মা সৈয়দা ইকবাল বানুর বিরুদ্ধে মামলাটি করেছিল দুদক। ২০২৩ সালের ২ আগস্ট এ মামলায় তারেক রহমানকে ৯ বছরের এবং তাঁর স্ত্রী জোবাইদা রহমানকে তিন বছরের কারাদন্ড দেন ঢাকার একটি আদালত।

অর্থ পাচার মামলা : ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর সিঙ্গাপুরে অর্থ পাচারের একটি মামলায় ঢাকার একটি আদালত তারেক রহমানকে খালাস দেন। ওই মামলায় তারেক রহমানের বন্ধু ও ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে সাত বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়। বিচারিক আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করে দুদক। ২০১৬ সালে বিচারিক আদালতের খালাসের রায় বাতিল করে তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদন্ড দেন হাই কোর্ট। পাশাপাশি তাকে ২০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়।

মানহানির মামলায় দন্ড : ২০১৪ সালে লন্ডনে এক সমাবেশে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘রাজাকার’ ও ‘পাকবন্ধু’ উল্লেখ করেছেন বলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অবমাননাকর কটূক্তির অভিযোগ এনে নড়াইলের আদালতে মানহানির মামলা করেন শাহজাহান বিশ্বাস নামের এক কথিত মুক্তিযোদ্ধা। ওই মামলায় ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তারেক রহমানকে দুই বছরের কারাদন্ড দেন নড়াইলের আদালত।

অন্যদিকে, শুধু ঢাকার আদালতেই মানহানির অভিযোগে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ১০টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তা ছাড়া একই অভিযোগে সে সময় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সারা দেশে অসংখ্য মামলা করা হয়।

রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা : তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলাও রয়েছে। ২০১৫ সালের ৮ জানুয়ারি তেজগাঁও থানায় করা রাষ্ট্রদ্রোহের একটি মামলায় তারেক রহমান ও একুশে টেলিভিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুস সালামের বিরুদ্ধে যোগসাজশ করে মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়। এ মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে।

নোয়াখালীতেও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে আরেকটি মামলা আছে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে। ওই মামলাতেও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।

এ ছাড়া ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলাও রয়েছে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে। ২০২০ সালের ২ জানুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকির অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা করেন তথাকথিত ‘জননেত্রী পরিষদের সভাপতি’ এ বি সিদ্দিকী।

এখন পর্যন্ত সরকারের উদ্যোগ কতদূর : সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সময় রাজনৈতিক কারণে হওয়া ‘হয়রানিমূলক মামলা’ প্রত্যাহারের লক্ষ্যে গত সেপ্টেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে দুটি কমিটি গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। এর মধ্যে একটি জেলা পর্যায়ের কমিটি এবং অন্যটি মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কমিটি। এ নিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক ‘হয়রানিমূলক মামলা’ প্রত্যাহারের জন্য আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে জেলা পর্যায়ের কমিটির সভাপতি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করতে হবে। জেলা কমিটি সুপারিশ দেবার পর সেগুলো পরীক্ষানিরীক্ষা করা হবে এবং প্রত্যাহারযোগ্য মামলা চিহ্নিত করা হবে। এরপর তালিকা তৈরি করে মামলা প্রত্যাহারের কার্যক্রম গ্রহণ করবে মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কমিটি।

জেলা পর্যায়ের কমিটির কার্যপরিধি সম্পর্কে বলা হয়েছে, মামলা প্রত্যাহারের আবেদনের সঙ্গে এজাহার ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিযোগের সত্যায়িত কপি দাখিল করতে হবে।

আবেদন পাবার সাত কর্মদিবসের মধ্যে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবেদনটি জেলার পাবলিক প্রসিকিউটরের (ক্ষেত্রবিশেষে মেট্রোপলিটন পাবলিক প্রসিকিউটর) কাছে মতামতের জন্য পাঠাবেন। এরপর ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে পাবলিক প্রসিকিউটর (ক্ষেত্রবিশেষে মেট্রোপলিটন পাবলিক প্রসিকিউটর) তাঁর মতামত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর পাঠাবেন। পাবলিক প্রসিকিউটরের মতামত সংগ্রহ করে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবেদনটি সাত কার্যদিবসের মধ্যে জেলা কমিটির সভায় উপস্থাপন করবেন।

জেলা কমিটির কাছ থেকে সুপারিশ পাবার পর মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কমিটি সেগুলো পরীক্ষানিরীক্ষা করবে। প্রত্যাহারযোগ্য মামলা চিহ্নিত করে তালিকা প্রস্তুত করবে এবং মামলা প্রত্যাহারের কার্যক্রম গ্রহণ করবে।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যত মামলা বিচারাধীন : সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুটি মামলায় দন্ডিত হয়ে বর্তমানে নির্বাহী আদেশে জামিনে রয়েছেন। রায় ঘোষণা হওয়া এ দুটি মামলা বাদে তাঁর বিরুদ্ধে বর্তমানে মোট মামলা রয়েছে ৩৫টি। সবগুলো মামলাতেই এখন তিনি জামিনে আছেন।

১৩টি মামলা হয়েছে ২০০৭ এবং ২০০৮ সালে জরুরি অবস্থার সময়ে অর্থাৎ ১/১১ পরবর্তী প্রেক্ষাপটে। বাকিগুলো দায়ের করা হয় পরবর্তী বিভিন্ন সময়। মামলাগুলোর মধ্যে পাঁচটি দুর্নীতি মামলা, চারটি মানহানির মামলা ও একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা রয়েছে। বাকি মামলাগুলো হয়েছে হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার অভিযোগে। সেসব মামলাগুলোর বর্তমান অবস্থা তুলে ধরা হলো :

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা : ট্রাস্টের নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০০৮ সালে ৩ জুলাই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত করেন বিচারিক আদালত। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আইনজীবী হাই কোর্টে আপিল করলে তা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর কারাদন্ড দেন হাই কোর্ট।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা : প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে বেগম জিয়ার অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে ২০১১ সালের ৮ আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর রায় ঘোষণা করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান। এ রায়ে বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদন্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

বাকি তিনজন আসামির একই শাস্তি দেওয়া হয় মামলাটিতে। তারা হলেন- বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, তৎকালীন ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান এবং হারিছ চৌধুরীর একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না।

নাইকো দুর্নীতি মামলা : কানাডার জ্বালানি কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের চুক্তি করে রাষ্ট্রের প্রায় ১০,০০০ কোটি টাকা ক্ষতি করার অভিযোগে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় এ মামলা দায়ের করে দুদক। ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক।

বর্তমানে মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯-এ বিচারাধীন। গত বছরের (২০২৩) ১৯ মার্চ মামলায় অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু করেন সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান। এরপর গত ২৩ মে মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। প্রথম দিন মামলার বাদী দুদকের সাবেক সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম সাক্ষ্য দেন। তবে এ মামলায় অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে আবেদন করেছেন বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। মামলাটি উচ্চ আদালতে শুনানির জন্য থাকায় আপাতত সাক্ষ্য গ্রহণ হচ্ছে না।

গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা : ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী চারদলীয় জোট সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তাঁর ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় এ মামলা করেন। মামলার পরদিন খালেদা জিয়া ও কোকোকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পরের বছরের ১৩ মে খালেদা জিয়াসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গ্যাটকোকে ঢাকার কমলাপুর আইসিডি ও চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পাইয়ে দিয়ে রাষ্ট্রের ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৬ টাকার ক্ষতি করেছেন। এ মামলাটি বর্তমানে অভিযোগ গঠন শুনানির পর্যায়ে রয়েছে।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতি মামলা : দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে কয়লা উত্তোলন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণে ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়ম এবং রাষ্ট্রের ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা ক্ষতি ও আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় এ মামলা দায়ের করা হয়। ওই বছর ৫ অক্টোবর  বেগম খালেদা জিয়াসহ ১৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। বর্তমানে মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-২ এ অভিযোগ গঠন শুনানির পর্যায়ে রয়েছে।

রাজধানীর দারুস সালাম থানায় ১১টি মামলা : রাজধানীর গাবতলী বালুর মাঠ ও মিরপুর মাজার রোডসংলগ্ন এলাকায় ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত যানবাহন ভাঙচুর, পুলিশের কাজে বাধাদানসহ নাশকতার অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দারুস সালাম থানায় ১১টি মামলা হয়। ঢাকার বকশীবাজারে বিশেষ জজ আদালতে মামলাগুলো বিচারের জন্য উঠলেও হাই কোর্টের আদেশের ফলে এর কার্যক্রম বর্তমানে স্থগিত রয়েছে।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় ৪টি মামলা : ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে পেট্রলবোমা দিয়ে চারজনের গায়ে অগ্নিসংযোগ, হত্যা, ও হতাহতের ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট চারটি মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলাগুলোও হাই কোর্টের আদেশে স্থগিত হয়ে আছে।

কুমিল্লায় ৩টি মামলা : ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামের হায়দারপুল এলাকায় একটি কাভার্ড ভ্যানে অগ্নিসংযোগ ও আশপাশের বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরে এ ঘটনায় ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি চৌদ্দগ্রাম থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি, বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে একটি এবং একটি হত্যা মামলা হয়। তিনটি মামলাই অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ।

বিএনপি-জামায়াতসহ ২০-দলীয় জোটের ডাকা লাগাতার হরতাল-অবরোধ চলাকালে ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যাত্রীবাহী নৈশকোচে দুর্বৃত্তদের নিক্ষেপ করা পেট্রলবোমায় ৮ যাত্রী পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির ৫৫ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়। চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই নুরুজ্জামান বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় ৫৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা : একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির অভিযোগে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী। ঢাকার বকশীবাজারে বিশেষ জজ আদালতে চলমান এ মামলাটির কার্যক্রমও হাই কোর্টের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে।

মানহানির তিন মামলা : শ্রমিক দিবসে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে ‘মিথ্যা’ বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মানহানি মামলা দায়ের করা হয়। ঢাকার বিচারিক আদালতে বাংলাদেশ জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী এ মামলাটি দায়ের করেন, যা বর্তমানে পুলিশের প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

এ ছাড়া সজীব ওয়াজেদ জয়ের অ্যাকাউন্টে ৩০ কোটি ডলার রয়েছে বলে বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে ২০১৬ সালের ৩ মে ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ সংগঠনের মুরাদনগর উপজেলা কমিটির সভাপতি শরিফুল আলম চৌধুরী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ১ কোটি টাকার মানহানির মামলা দায়ের করেন। মামলায় খালেদা জিয়ার বক্তব্যকে মিথ্যা বলে উল্লেখ করা হয়। কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষমাণ।

এদিকে ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে বেগম খালেদা জিয়া বিতর্কিত বক্তব্য দিয়েছেন অভিযোগ করে তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মানহানির একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলটি অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য রয়েছে।

নড়াইলে মানহানির মামলা : ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে নড়াইলে একটি মামলা হয়। মামলাটির ঘটনা ঢাকায়। ওইদিন বেগম খালেদা জিয়া এক অনুষ্ঠানে স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা এবং বঙ্গবন্ধুর নাম উল্লেখ না করে বক্তব্য রাখেন। এ বক্তব্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে নড়াইলের কালিয়ার চাপাইল গ্রামের রায়হান ফারুকী ইমাম বাদী হয়ে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করেন। ২০১৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর নড়াইলের জেলা জজ আদালতে তিনি এ মামলা দায়ের করেন। এ মামলাটিতেও পুলিশের প্রতিবেদন জমা পড়েছে।

পঞ্চগড়ে নাশকতার মামলা : পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলা ও নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগে বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে হুকুমের আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। ২০১৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি মামলাটি দায়ের করেন বোদা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সেলিম সোহাগ। গুলশানে বোমা হামলার অভিযোগে মামলা : নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের মিছিলে ২০১৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন হামলার ঘটনায়  বেগম খালেদা জিয়াকে প্রধান আসামি করে ১৪ জনের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করেন সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতা ইসমাইল হোসেন। ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি পুলিশের প্রতিবেদন দাখিলের অপেক্ষায় রয়েছে।

৪২ জনকে হত্যার অভিযোগে মামলা : ২০-দলীয় জোটের আন্দোলনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে মারা যাওয়া ৪২ জনকে হত্যার অভিযোগ এনে ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়াসহ দলটির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। বাংলাদেশ জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে পুলিশের প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের নিয়ে কটাক্ষ, বঙ্গবন্ধুর অবদান প্রশ্নবিদ্ধ করার অভিযোগে মামলা : ২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদান এবং শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়ার অভিযোগে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন জজ কোর্টে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি চার্জ শুনানির জন্য রয়েছে।

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও জাতিগত বিভেদ সৃষ্টির অভিযোগে দুই মামলা : ২০১৪ সালের ১০ অক্টোবর বেগম খালেদা জিয়ার এক বক্তব্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও জাতিগত বিভেদ সৃষ্টির অভিযোগ ওঠে। পরে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ বিষয়ে মামলা দায়ের করা হয়। এটি চার্জ শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

‘মিথ্যা’ জন্মদিন পালনের অভিযোগে মামলা : ১৫ আগস্ট বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালনকে ভুয়া অভিযোগ করে ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী জহিরুল ইসলাম ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটিতে পুলিশের প্রতিবেদন আমলে নিয়েছেন আদালত। এ মামলায় অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য আগামী ৫ মার্চ দিন ধার্য রয়েছে।

বাংলাদেশের মানচিত্র, জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগে মামলা : বাংলাদেশের মানচিত্র, জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার অভিযোগে ২০১৬ সালের নভেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি এখন চার্জ শুনানি তথা অভিযোগ গঠন শুনানির পর্যায়ে রয়েছে।

ঋণখেলাপি মামলা : সোনালী ব্যাংক বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ও ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে মামলা করে। আরাফাত রহমান কোকো মারা যাওয়ার পর ওই মামলায় খালেদা জিয়াকে পক্ষ করা হয়। ২০১৩ সালের ২ অক্টোবর ৪৫ কোটি ৫৯ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৫ টাকা ঋণখেলাপির অভিযোগ তুলে ঢাকার অর্থঋণ আদালতে এ মামলাটি করেন সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার প্রথম অর্থঋণ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ফাতেমা ফেরদৌস এ মামলার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। মামলাটি উচ্চ আদালতের আদেশে স্থগিত রয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor