Bangladesh

খুন বেড়েছে তিন কারণে

বগুড়া জেলা সদরের সাবগ্রাম দক্ষিণপাড়ায় নিজ বাড়িতে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে আনোয়ারা বেগম (৫৮) ও তার মেয়ে ছকিনা বেগমকে (৩৫) কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৯টায় দিকে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার রামচন্দ্রপুর এলাকায় তিনজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তারা হলেন- নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি নেতা শতাধিক হত্যা মামলার আসামি হানিফ আলী ওরফে হানেফ, তার শ্যালক লিটন ও কুষ্টিয়ার ইবি থানার পিয়ারপুর গ্রামের রাইসুল ইসলাম রাজু।

একই দিন সন্ধ্যায় হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের পশ্চিম জয়পুর গ্রামে জামায়াতে ইসলামীর মহিলা শাখার এক সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহত মিনারা বেগম উপজেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি ও শ্রমিককল্যাণ ফেডারেশন উপজেলা সভাপতি আবদুল আহাদ ইবনে মালেকের স্ত্রী। তিনি মিরপুর পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। ১ মার্চ রাতে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিণ মির্জানগরে রুমের ভিতর আনাস মিয়া নামে তিন বছরের শিশুকে বঁটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন মা শিরিন বেগম।

এ শুধু কয়েকটা ঘটনার বর্ণনা। সারা দেশে এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতেই সারা দেশে ২৯৪টি খুনোখুনির ঘটনা ঘটেছে। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সারা দেশে খুনের ঘটনা ঘটেছে ৬০ হাজার ৪৮৭টি। সে হিসেবে প্রতি বছর ৪ হাজার ৩২ জন এবং প্রতি মাসে ৩৩৬ জন খুনের শিকার হচ্ছেন। ২০২৪ সালে সারা দেশে হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে ৩ হাজার ৪৩২টি। এর আগের বছর ২০২৩ সালে খুনের ঘটনা ছিল ৩ হাজার ২৩টি। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ১২৬টি। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালে ডিএমপিতে খুনের ঘটনা ঘটেছে ৩৩৯টি। এর আগের বছর ২০২৩ সালে খুনের ঘটনা ছিল ১৬৫টি এবং ২০২২ সালে ছিল ১৭২টি। অপরাধের তথ্য বিশ্লেষণ করে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, সারা দেশে তিন কারণে খুনের ঘটনা বেশি। এর মধ্যে পারিবারিক কলহ, সম্পত্তি-সংক্রান্ত বিরোধ ও পূর্বশত্রুতা অন্যতম। এ ছাড়া যেসব এলাকায় নিম্ন আয় ও ভাসমান মানুষের বসবাস বেশি, সেখানে অপরাধের ঘটনাও বেশি। কিশোর গ্যাং অপরাধ প্রবণতা থেকে পিছিয়ে নেই। তারাও কথায় কথায় হামলা, মারধর, ছুরিকাঘাতে অপরাধের জন্ম দিচ্ছে। পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, খুনের ঘটনাসহ বিভিন্ন অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে পুলিশ আন্তরিকভাবে পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করছে। আইনবিরোধী কোনো কাজে কেউ যেন না জড়ায় সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি মানুষের সঙ্গে মেলবন্ধন তৈরি করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে পুলিশের প্রতিটি সদস্য। এর পরও কেউ যদি অপরাধ করেই ফেলে তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা হচ্ছে। সেটি তদন্ত করে দ্রুততম সময়ে অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। র‌্যাব সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলছেন, যেখানে খুনের ঘটনা ঘটে সেখানে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে যাই। একই সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, মনোমালিন্য, ঝগড়া, মারামারি, পারিবারিক কলহ, রাজনৈতিক, বন্ধুত্বকে কেন্দ্র করে খুনোখুনির ঘটনা ঘটে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত এসব ঘটনায় যারা জড়িত তাদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করা। আগের সংগঠিত কোনো অপরাধের বিচার যদি দ্রুত সময়ে না হয়, তাহলে এ ধরনের অপরাধ বেড়ে যায়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d