Bangladesh

খেয়াল করেছেন আপনার কেনা অনেক পণ্যই আকারে ছোট হয়ে যাচ্ছে?

বোম্বে সুইটস রিং চিপসের কথাই ধরুন। এক সময় ১০ টাকার প্যাকেটে থাকত ২৫ গ্রাম চিপস। সেই পরিমাণ কমে আসে ২২ গ্রামে, আর এখন তো মাত্র ১৫ গ্রামে। অথচ প্রতি প্যাকেটের দাম একই আছে। সেরকমই, আগে প্রাণ টমেটো সসের ৩ টাকার ছোট স্যাশেতে থাকত ১০ গ্রাম সস। এখন সেখানে থাকে ৮ গ্রাম। আবার আগে ১০ টাকা দামের ডানো মিল্ক পাউডার মিনি প্যাকে থাকত ১৮ গ্রাম, যা এখন মাত্র ১০ গ্রাম।

একটা ট্রিপ শেষ করার পর মগবাজার মোড়ে নিজের রিকশাটা পার্ক করলেন আবুল জসিম। ঘড়িতে সময় তখন বেলা সাড়ে বারোটা। দুপুরের খাবার খেতে আরও ঘণ্টাদেড়েক বাকি জসিমের। কিন্তু এখনই একটু একটু খিদে লাগছে তার। তাই সিদ্ধান্ত নিলেন, ছোট-খাটো কিছু খেয়ে আপাতত খিদে মেটাবেন।

রিকশা রেখে এগিয়ে গেলেন মোড়ের ঠিক পাশেই ফুটপাতে বসা সিঙ্গারা-পুরির দোকানের দিকে। কিন্তু যা দেখতে পেলেন তাতে বেশ অবাকই হলেন : সিঙ্গারার সাইজ কমে গেছে আরও। আগে তিন টাকা দামের ছোট ছোট চারটি সিঙ্গারা খেলেই খিদে মিটে যেত তার। কিন্তু এখন দাম একই থাকলেও, প্রতিটি সিঙ্গারার সাইজ এতটাই ছোট হয়ে গেছে যে, অন্তত ছয়-সাতটি সিঙ্গারা না খেলে পেট জুড়োবে না। অথচ পকেটের অবস্থা যা, তাতে অতগুলো সিঙ্গারা খাওয়াও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। অগত্যা পাঁচটি সিঙ্গারা দিতে বললেন দোকানিকে।

সিঙ্গারা পাওয়ার পর দোকানি মোহাম্মদ আল আমিনকে জিজ্ঞেস করলেন, “কী ভাই!  সিঙ্গারার সাইজ কি রোজই ছোট হয়?”

আল আমিন প্রতিনিয়তই ক্রেতাদের মুখ থেকে এমন প্রশ্ন শুনে অভ্যস্ত। তাই হাসিমুখেই বললেন, “কী আর কমু! বাজারে তো আগুন লাগছে। খুশি থাকেন যে সিঙ্গারার দাম আগেরটাই রাখছি!”

দাম অপরিবর্তিত রাখতে আল আমিনের কৌশলটা চমকপ্রদ। স্বতঃস্ফূর্তভাবেই তিনি জানালেন, মাস ছয়েক আগেও এক কেজি আলু আর এক কেজি আটা দিয়ে ২০-২৫টি সিঙ্গারা বানাতেন তিনি। কিন্তু ইদানীং দ্রব্যমূল্য এতটাই বেড়ে গেছে যে, লাভের মুখ দেখার জন্য সমপরিমাণ কাঁচামাল দিয়ে ৩০-৩৫টি সিঙ্গারা বানাচ্ছেন তিনি।

“গ্যাস সিলিন্ডার, তেল থাইকা শুরু কইরা আলু, পেঁয়াজ– সব কিছুর দামই তো বাড়তি। এমনকি কাগজের দামও এখন ৭০ টাকা কেজি,” আক্ষেপ করে বললেন আল আমিন। “তা-ও সিঙ্গারা-পুরির দাম বাড়াইতেছি না আমরা। মিনি সিঙ্গারা পাঁচ টাকা কইরা কেউ কিনব?”

বাজার ঘুরে দেখা যায়, ঠিক এমনই অবস্থা প্রায় সব খাদ্যদ্রব্য সহ নিত্য ব্যবহার্য পণ্যের, হোক তা প্যাকেটজাত বা খোলা, ব্র্যান্ডের বা নন-ব্র্যান্ডের।

বোম্বে সুইটস রিং চিপসের কথাই ধরুন। এক সময় ১০ টাকার প্যাকেটে থাকত ২৫ গ্রাম চিপস। সেই পরিমাণ কমে আসে ২২ গ্রামে, আর এখন তো মাত্র ১৫ গ্রামে। অথচ প্রতি প্যাকেটের দাম একই আছে। সেরকমই, আগে প্রাণ টমেটো সসের ৩ টাকার ছোট স্যাশেতে থাকত ১০ গ্রাম সস। এখন সেখানে থাকে ৮ গ্রাম। আবার আগে ১০ টাকা দামের ডানো মিল্ক পাউডার মিনি প্যাকে থাকত ১৮ গ্রাম, যা এখন মাত্র ১০ গ্রাম। এছাড়াও আগে ১০ টাকা দামের রুচি বারবিকিউ চানাচুরের প্যাকেটে থাকত ৩৫ গ্রাম, যা এখন মাত্র ২৫ গ্রাম; এবং আগে ১০ টাকা দামের মিস্টার কুকি বাটার কোকোনাট বিস্কিটে থাকত ৫৫ গ্রাম, যা এখন মাত্র ৩৯ গ্রাম।

এভাবে বাজারের সব বড় বড় ব্র্যান্ডেরই বিভিন্ন পণ্যের পরিমাণ ২০ থেকে ৩০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, অথচ মূল্য রয়েছে আগের মতোই।

স্টেশনারি পণ্যের স্থায়িত্বও কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে অনেক শিক্ষার্থীর। সদ্যই এইচএসসি পরীক্ষায় বসা নাহিয়ান হৃদিতা জানালেন, একটি কলম দিয়ে পুরো একটি পরীক্ষা শেষ করতে পারেননি তিনি একবারও। “মনে হচ্ছিল কলমগুলো খুব দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। বোধহয় আগে একটা কলমে যেটুকু কালি থাকত, এখন তার চেয়ে অনেক কম থাকে,” জানালেন তিনি।

রাজধানীর অনেক রেস্তোরাঁও তাদের প্ল্যাটারের দাম বাড়ানোর বদলে কমিয়ে দিচ্ছে খাবারের পরিমাণ। “আমাদের প্রধান ক্রেতা হলো কলেজ ও ভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। তাদের কাছে তো খুব বেশি টাকা থাকে না। এখন আমরা যদি প্রতিবার দ্রব্যমূল্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খাবারের দামও বাড়িয়ে দিই, তাহলে তো তারা আর আমাদের রেস্তোরাঁয় খেতে আসবে না,” জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খিলগাঁওয়ের এক রেস্তোরাঁর ম্যানেজার।

“তাছাড়া লোকে তো শুধু খাওয়ার জন্যই রেস্তোরাঁয় আসে না। ঢাকা শহরে ঘোরাঘুরির জায়গার অনেক অভাব। তাই অনেকে প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটাতেও আসে রেস্তোরাঁয়। তাই খাবারের পরিমাণ একটু কমালেও মাইন্ড করে না কেউ,” তিনি যোগ করেন।

দাম না বাড়িয়েও দাম বাড়ানো!

এভাবে কোনো পণ্যের পূর্বের দাম অপরিবর্তিত রেখে পণ্যের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়ার চর্চাকে বলা হয় ‘শ্রিংকফ্লেশন’। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বেশ বুদ্ধিদীপ্ত একটি কৌশল মনে করা হয় এটিকে। কারণ আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় দ্রব্যের দাম একই থাকছে। কিন্তু আদতে ওজনের প্রতি এককের দাম ঠিকই বেড়ে যাচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিংয়ের অধ্যাপক ড. নাসরিক আক্তার শ্রিংকফ্লেশনকে ব্যাখ্যা করলেন এক ধরনের মার্কেটিং কৌশল হিসেবে, যেটি বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি ও অর্থনৈতিক মন্দা চলাকালীন ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতা এবং কোম্পানির লাভের মাঝে একটি ভারসাম্য বজায় রাখতে ব্যবহৃত হয়।

“তবে কোনো কোম্পানিই চায় না হুট করে পণ্যের পরিমাণ অনেকখানি কমিয়ে দিতে। তারা ধীরে ধীরে পরিমাণ কমাতে থাকে, যাতে ব্যাপারটা মানুষের নজরে না আসে,” আক্তার বলেন।

জানিয়ে রাখা ভালো, আজকাল অর্থনীতিবিদরা ‘স্ক্রিম্পফ্লেশন’ নামেও একটি পরিভাষা ব্যবহার করছেন। এক্ষেত্রে পণ্যের পরিমাণ না কমানো হলেও, উৎপাদনের ক্ষেত্রে কাঁচামালের গুণগত মান কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যাতে উৎপাদন খরচটাও কমে যায়।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের মার্কেটিং পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, মুদ্রাস্ফীতি চলাকালে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবেই হ্রাস পায়। এরকম ক্ষেত্রে টানাটানির মধ্যে থাকা ক্রেতাদের জন্য শ্রিংকফ্লেশন কৌশলটি বেশ কার্যকর হতে পারে।

“যদি কাঁচামালের দাম বাড়ে, তাহলে একপর্যায়ে পণ্যের দামও বাড়বে। তবে, এই কৌশলটা ব্যবহৃত হয় নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে পণ্যের প্যাকেজিং থেকে শুরু করে আরও অনেক ব্যাপারই নির্ভর করে। মূলত করোনা মহামারির পরপর দেশে এই প্রবণতাটা শুরু হয়েছিল, যখন দেশে কাঁচামালের সংকট থাকায় সবকিছুরই দাম বেড়ে গিয়েছিল,” বলেন কামাল।

ভুক্তভোগী যারা

বরাবরের মতোই, শ্রিংকফ্লেশনের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি পড়ছে মধ্যবিত্ত শ্রেণির উপরেই। সাউথ ব্রিজ স্কুলের শিক্ষক কাশফিয়া কামাল মিথিলা তার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে গিয়ে বলেন, মসলা ও গুঁড়া দুধের মতো প্যাকেটজাত পণ্যে তিনি শ্রিংকফ্লেশনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি অনুভব করেন। তিনি জানান, আগে যেখানে এক প্যাকেট হলুদের গুঁড়া দিয়ে তার পরিবারের সারা মাস চলে যেত।সেখানে এখন সেটি খুব টেনেটুনে মাসের অর্ধেক পর্যন্ত চলে।

“বাংলাদেশিরা খাবারদাবারের ব্যাপারে বরাবরই অনেক শৌখিন। প্রচুর মসলা দিয়ে রান্না করতে ভালোবাসি আমরা,” তিনি বলেন। “তাই শ্রিংকফ্লেশন এসে ইনফ্লেশনের প্রভাবের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমাদের আয় আগের মতোই আছে, কিন্তু আমাদেরকে এইসব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যে আগের চেয়ে দ্বিগুণ খরচ করতে হচ্ছে।”

এদিকে লালবাগে থাকেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা ডালিম আহমেদ। তার মাসিক আয় ৫০ হাজার টাকা। স্ত্রী ও দুই কন্যাকে নিয়ে চার সদস্যের ছোট্ট পরিবার তার। জানালেন, বছর দুই আগেও সাত হাজার টাকা বাজেটে তিনি অনায়াসে প্যাকেটজাত বা বোতলের গ্রোসারি আইটেম, যেমন টুথপেস্ট, সাবান, শ্যাম্পু, মসলা, নুডুলস বা মল্ট ড্রিংক কিনতে পারতেন। কিন্তু এখন শ্রিংকফ্লেশনের প্রভাবে তাকে নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের ব্যবহার কমিয়ে দিতে হচ্ছে।

“বাসা ভাড়া, মেয়েদের স্কুলের বেতন কিংবা সংসার খরচের পরিমাণ প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। সেই তুলনায় আমার বেতন কিন্তু খুব একটা বাড়ছে না। তাই কিছু কিছু জিনিসের ব্যবহার কমাতে আমি বাধ্য। তাই স্ত্রী ও মেয়েদের বলেছি, সাবান, টুথপেস্ট কিংবা নুডুলস, হেলথ ড্রিংকস আগের চেয়ে কম খরচ করতে। কারণ প্রতি ইউনিটে এসব পণ্যের পরিমাণ কমেছে,” যুক্তি দেন তিনি।

বলাইবাহুল্য, কিছু পণ্য কম খরচের প্রবণতা অনেকের স্বাস্থ্যেই ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও পরিচালক ড. খালেদা ইসলাম বলেন, “এই ব্যাপারটা বিশেষভাবে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ কিংবা শিশু ও নারীদের জন্য। কেননা অনেকক্ষেত্রে তাদের প্রয়োজনীয় দ্রব্যগুলোর ব্যবহারেই হয়তো লাগাম টানতে হবে।”

এদিকে সোরবন ইউনিভার্সিটির ইনসিয়াড বিহেভিওরাল ল্যাবের মার্কেটিংয়ের অধ্যাপক পিয়ার চ্যান্ডন বলেন, শ্রিংকফ্লেশনের প্রধান শিকার হবেন সেই জনগোষ্ঠী, যাদের মধ্যে শিক্ষার হার বা গণিতের জ্ঞান কম। তার মতে, প্যাকেটপ্রতি কোনো পণ্যের পরিমাণ কমে গেলেও সেটি এরকম লোকদের নজর এড়িয়ে যাবে। কেননা, পরিমাণ কমের ব্যাপারটি তো প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকে, যা হয়তো তারা কখনো খেয়ালও করে না। অথচ সরাসরি পকেট থেকে বেশি টাকা বের করতে হলে ব্যাপারটি অবশ্যই তাদেরকে ধাক্কা দিত।

“এমনকি খুব উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিরাও তো এই বিষয়টি বুঝতে হিমশিম খায় যে, কেজিপ্রতি পণ্যের ক্ষেত্রে, পরিমাণের সামান্য হ্রাসও, মূল্যের অনেকখানি বৃদ্ধির সমানুপাতিক। উদাহরণস্বরূপ, দাম আগের মতো রেখে কোনো পণ্যের পরিমাণ ৫০ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া মানে হলো প্রতি ইউনিটে ওই পণ্যের দাম দ্বিগুণ হয়ে যাওয়া, কিংবা দাম ১০০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার সমান। আরও সহজভাবে বলা যায়, কোনো পণ্যের পরিমাণ ১০০ শতাংশ হ্রাস পাওয়া ওই পণ্যের দাম ১০০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার চেয়ে অনেক বেশি খারাপ। কারণ একটি পণ্যের পরিমাণ ১০০ শতাংশ কমে গেলে তো আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না!” তিনি ব্যাখ্যা করেন।

প্রতারণা?

তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নের অবকাশ থাকে, শ্রিংকফ্লেশন ক্রেতাদেরকে একভাবে ধোঁকা দেওয়া কি না, বিশেষত যখন ক্রেতারা সরলমনেই আগের দামে একটি পণ্য কিনে ভাবছে, তারা পরিমাণও আগের মতোই পাচ্ছে।

অর্থনীতি বিশ্লেষক, ফিন্যান্স ও বিজনেস স্ট্র্যাটেজিস্ট এবং ফিনপাওয়ার লিডারশিপ ইন্টারন্যাশনালের সিইও সাইফুল হোসেনও এ ব্যাপারে একমত। তিনি বলেন, “ব্যবসায়ীরা এ ধরনের পলিসি গ্রহণ করে তাদের কস্ট অ্যাডজাস্ট করতে। কিন্তু এটিকে ক্রেতাদের সঙ্গে ছলনাও বলা যায়। ব্যবসায়ীরা তো আগের সমানই লাভ করছে, কিন্তু ক্রেতারা পাচ্ছে কম।”

তবে হোসেন শ্রিংকফ্লেশনের একটি ইতিবাচক দিকও দেখতে পান। তার মতে, এতে করে সাধারণ মানুষের ভোগের প্রবণতা কমবে, যার ফলে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে তাদের স্বাস্থ্যে।

তবে তারপরও, কোনো ক্রেতা যদি শ্রিংকফ্লেশনের ফলে মনে করে তাদেরকে ঠকানো হয়েছে, তাহলে কি তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন? এ ব্যাপারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এএইচএম শফিকুজ্জামানের মত হলো, শ্রিংকফ্লেশনের বিষয়টি অনৈতিক হতে পারে, কিন্তু এর মাধ্যমে সরাসরি ক্রেতাদের ঠকানো হয় না।

“এটিকে ধোঁকা দেওয়া বলা যায় না। কারণ কোম্পানিগুলো তো প্যাকেটে ১০০ গ্রাম লিখে বাস্তবে ৮০ গ্রাম বিক্রি করছে না। তারা হ্রাসকৃত পরিমাণটি প্যাকেটে উল্লেখ করেই দিচ্ছে,” শফিকুজ্জামান বলেন।

“তবে হ্যাঁ, কোনো ক্রেতা যদি মনে করেন তার অধিকার খর্ব করা হয়েছে, তাহলে অবশ্যই তিনি আমাদের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। সেক্ষেত্রে আমরা সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে হিয়ারিংয়ের জন্য ডাকব। কিন্তু এটাও মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, আইনত কোম্পানিগুলোকে দোষী সাব্যস্ত করার কোনো সুযোগ নেই,” তিনি যোগ করেন।

তাই সতর্ক হওয়ার দায়ভারটা আসলে ক্রেতাদের উপরেই বর্তায় বলে মনে করেন ভোক্তাদের সচেতনতা বৃদ্ধি ও ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান।

তিনি বলেন, “আমি মনে করি এটা ধোঁকা, ভণ্ডামি। কিন্তু কোম্পানিগুলো যদি প্যাকেটের গায়ে পরিমাণ হ্রাসের কথা জানিয়েই দেয়, তাহলে তাদেরকে তো অভিযুক্ত করা যায় না। সুতরাং  ক্রেতাদেরকেই এসব ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।”

এদিকে মিয়াকো অ্যাপ্লায়েন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে ব্যবসায়ে প্রশাসনের প্রথম ডক্টরেট করা, ড. মোহাম্মদ নাভিদ আহমেদ আরেকটি সম্ভাব্য সমাধানের কথা বলেন।

“আমরা, ক্রেতারা, সাধারণত পরিমাপের নির্দিষ্ট এককগুলো বেশি খেয়াল করি, যেমন ৫০০ গ্রাম, ১ কেজি, ১.৫ কেজি কিংবা আধা লিটার, ১ লিটার, ১.৫ লিটার,” তিনি বলেন।

“কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই সূক্ষ্ম পরিবর্তনগুলো আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়। যেমন ২৩০ গ্রাম যদি ২০০ গ্রাম হয়ে যায়, কিংবা ৩৩০ মিলি যদি ২৮০ মিলি হয়। এই সমস্যাটা সমাধানের ক্ষেত্রে এক ধরনের নীতিমালা প্রণয়ন করা যেতে পারে। যেমন ধরুন, ছোট সাইজের বোতলের ড্রিংকের ওজন সবসময় হবে ২০০ মিলি, মাঝারি সাইজের ওজন হবে ৫০০ মিলি। এভাবে বাজারে একটি স্বচ্ছ প্রতিযোগিতার পথ সুগম করা যাবে, আর শ্রিংকফ্লেশনকে ঘিরে নৈতিকতার প্রশ্নগুলোও আর থাকবে না।”

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
bacan4d
bacan4d