Bangladesh

খেলাপি ঋণেই শ্বাসরুদ্ধ

ইতিহাসের সর্বোচ্চ পরিমাণ খেলাপি ঋণ রেখে গেছে আওয়ামী লীগ সরকার। বারবার পুনঃতফসিল করে, আদালতের স্থগিতাদেশ ও অবলোপনের পরও ঋণখেলাপের সমস্যার সমাধান হয়নি। খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ছয়টি ব্যাংকেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ বিতরণ করা মোট ঋণের ৫০ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

ঋণখেলাপের তালিকায় দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকও রয়েছে। ৩০ শতাংশের ওপর খেলাপি ঋণ রয়েছে আরও চার ব্যাংকের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৫-১৬ সালের পর নিয়মনীতি উপেক্ষা করে কিছু গোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠানকে নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে এসব ব্যাংক। যারা ঋণখেলাপ করেছে তাদের অনেক সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তাদের অনুকূলে বিভিন্ন সময়ে ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ, অবলোপন ও পুনর্গঠন করা হয়েছে। ফলে অস্তিত্বের সংকটে রয়েছে বেশ কিছু ব্যাংক। এসব ব্যাংকের বিষয়ে এখনই সিদ্ধান্ত না নেওয়া হলে সংকট আরও গভীর হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন মাস শেষে ব্যাংক খাতের মোট ঋণস্থিতি ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। গত মার্চ শেষে ঋণস্থিতি ছিল ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। তখন খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৯ হাজার ৯৬ কোটি টাকা।

ছয়টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বিতরণ করা মোট ঋণের ৫০ শতাংশেরও বেশি। ব্যাংকগুলো হলো সরকারি খাতের বেসিক ও জনতা ব্যাংক এবং বেসরকারি খাতের বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক। ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান নামে একটি বিদেশি ব্যাংকও খেলাপি ঋণের তালিকায় রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, সামনে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বাড়বে। কারণ অনেক ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে, আদালতের স্থগিতাদেশের মধ্যে খেলাপি ঋণের বড় একটা অংশ আছে। এগুলোকে যখন খেলাপি দেখানো হবে, তখন এর পরিমাণ আরও বড় হবে।

প্রতিবেদন বলছে, রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক  ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮ হাজার ২৫৬ কোটি  টাকা, যা ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের ৬৪ শতাংশ। গত জুন পর্যন্ত বেসিক ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের স্থিতি ছিল ১২ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪৮ হাজার কোটি টাকা। জুন পর্যন্ত ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের স্থিতি ছিল ৯১ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ৫২ শতাংশ।

বেসরকারি খাতের বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ৫৬ শতাংশ, আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৭৭ কোটি টকা (৮৮ শতাংশ), পদ্মা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ৮৮১ কোটি টাকা (৮৫ শতাংশ)। ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৩২১ কোটি (৯৬ শতাংশ)।

এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২১ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ৩০ শতাংশের বেশি, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (বিডিবিএল) খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৪৩ কোটি (৪২ শতাংশ), বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা (৩১ শতাংশ) এবং ন্যাশনাল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২০ হাজার ৯২৯ কোটি (৪৯ শতাংশ)।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৩২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। গত মার্চে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসে তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ১৬ হাজার ৬১৩ কোটি টাকা। ওই সময় সরকারি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের হার ছিল প্রায় ২৭ শতাংশ। তারও আগে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ছিল ৬৫ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২১ শতাংশ।

তিন মাসের ব্যবধানে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ৯২১ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গত মার্চের শেষে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৮  হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা বা ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। তিন মাসে তাদের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১১ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে তাদের খেলাপি ঋণ ছিল ৭০ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা।

চলতি বছর জুনের শেষে বিশেষায়িত তিন ব্যাংকে খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় ৫ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২২৯ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ মিশনের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংক খাত সংস্কারে গঠিত টাস্কফোর্সের সদস্য ড. জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ২০১৫-১৬ সালের পর থেকে একটা উদার পথে চলেছি, যারা ঋণখেলাপ করেছে তাদের অনেক সুযোগ দেওয়া হয়েছে। পুনঃতফসিলিকরণ, অবলোপন, পুনর্গঠন করা হয়েছে। আশা করা হয়েছিল, তারা টাকা ফেরত দেবে। কিন্তু এসব মডেল সুফল দেয়নি। বরং অনেকে সেটার সুযোগ নিয়েছে।’ 

তিনি বলেন, ‘ব্যাংক খাতের সংস্কারে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। অনেকগুলো ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলোর একটা ব্যবস্থা হবে। টাস্কফোর্স এসব প্রতিষ্ঠান আগে নিরীক্ষা করবে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল করার চেষ্টা করতে হবে, যদি সেটা সম্ভব হয়। একীভূত করাও যেতে পারে, না হলে বিলুপ্ত করতে হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা চাই না কোনো ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাক। ব্যাংক খাত সংস্কারে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।’ 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d