Bangladesh

খেলাপি ঋণের তথ্যে সন্দেহ, খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় আইএমএফের অসন্তোষ

ঋণ কর্মসূচির আওতায় দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার শর্ত দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তারপরও আশঙ্কাজনক হারে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে ঢাকায় সফররত সংস্থাটির প্রতিনিধি দল। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত খেলাপি ঋণের চেয়ে প্রকৃত খেলাপি আরও বেশি বলে জানিয়েছে তারা।

বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করার পর আইএমএফ চলতি বছরের প্রথমার্ধে যেসব শর্ত দিয়েছিল, তা বাস্তবায়ন এবং দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ঢাকায় এসেছে সংস্থাটির এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে একটি মিশন। তারা গতকাল রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক ও রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, গত এপ্রিল-জুন সময়ে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৪ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। এই খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতের বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ১১ শতাংশ।

এতে আরও বলা হয়, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে গত জুন পর্যন্ত ২ লাখ ৯৭ হাজার ৭৫১ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ৭৪ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা। সে হিসেবে খেলাপির হার ২৫ শতাংশের কিছুটা বেশি। এ সময়ে দেশের বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৩৯ হাজার ১১৬ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৩ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। খেলাপির হার ৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

ঋণ কর্মসূচির আওতায় আইএমএফকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০২৬ সালের ডিসেম্বর নাগাদ রাষ্ট্র খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশে এবং বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে।

বৈঠকে জানানো হয়, খেলাপি ঋণ কমাতে এরই মধ্যে আইএমএফের পরামর্শ এবং নিজস্বভাবে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে খেলাপির ওপর নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যাংকে সুশাসন ফেরাতে ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধন করা হয়েছে। অন্যান্য আইন সংশোধনের প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের তালিকা তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে সব খেলাপির জন্য নতুন ঋণ অনুমোদন বন্ধ এবং বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও ভাবা হচ্ছে।

আইএমএফ প্রতিনিধি দলের কর্মকর্তারা জানান, সরকারি ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ২৫ শতাংশের বেশি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার লক্ষ্য অর্জনে সবার প্রতি যথাযথ আইন প্রণয়নের তাগিদ দিয়েছে মিশন। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক যে হিসাব দেয়, তার তুলনায় প্রকৃত খেলাপি বেশি বলে মনে করে আইএমএফ। তাদের হিসাবে খেলাপি ঋণ হবে ৩ লাখ কোটি টাকার বেশি। আইএমএফ পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন করা ঋণ এবং সন্দেহজনক ঋণ ও আদালতের আদেশে খেলাপি স্থগিতাদেশ থাকা ঋণকেও খেলাপি দেখানোর পক্ষে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে হিসাব দিচ্ছে, তা প্রকৃত তথ্য নয়। কারণ, প্রকৃত খেলাপি ঋণ আরও অনেক বেশি। মামলার কারণে অনেক ঋণকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। আবার অবলোপন করা ঋণও খেলাপির হিসাবে নেই। এ দুই ঋণকে বিবেচনায় নিলে প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় দাম নির্ধারণে বাড়তি সময় প্রয়োজন

জ্বালানি সচিব নুরুল আলমের সঙ্গেও গতকাল বৈঠক করেছে প্রতিনিধি দল। বৈঠকে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় দাম নির্ধারণ পদ্ধতি, জ্বালানি খাতে ভর্তুকি এবং এলএনজি আমদানি নিয়ে আলোচনা হয়। মিশনকে জানানো হয়েছে, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি কার্যকর করতে আরও তিন থেকে চার মাস বাড়তি লাগবে।

সূত্র জানায়, বিপিসি একটি ফর্মুলা তৈরি করে জ্বালানি বিভাগকে দিয়েছে। লভ্যাংশ, উন্নয়ন তহবিলসহ কয়েকটি খাত মিলে জ্বালানি তেলে প্রায় ১০ শতাংশ মুনাফা ধরে দাম হিসাব করেছে বিপিসি। তিন মাস অথবা এক মাস পর পর দাম নির্ধারণ করা হবে। প্রস্তাবটি জ্বালানি বিভাগ পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখছে। একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এখন এ ফর্মুলা কার্যকর করলে জ্বালানি তেলের দাম লিটারে ১০ থেকে ১৫ টাকা বাড়বে।

সামনে নির্বাচন, তাই সরকার এখন জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির মতো অজনপ্রিয় কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। তাই স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি কার্যকরের জন্য আরও সময় নেওয়া হচ্ছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ পেট্রোলিয়াম পণ্যের ক্ষেত্রে একটি স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি চালু করার শর্ত রয়েছে আইএমএফের।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক

রপ্তানি হওয়া পণ্যের বিপরীতে যে পরিমাণ আয় দেশে আসার কথা, তার পুরোটা আসছে না। এসব অর্থ কেন আসছে না, তা জানতে চেয়েছে ঢাকা সফররত আইএমএফ মিশন। গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে আইএমএফ কর্মকর্তারা জানান, তাদের কাছে তথ্য রয়েছে, রপ্তানির অনেক অর্থ যথাসময়ে দেশে আসে না। রপ্তানির এ অর্থ প্রত্যাবাসনে সরকারের কোনো উদ্যোগ আছে কিনা, সে বিষয়ে জানতে চান তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, পণ্য জাহাজীকরণ শেষে রপ্তানির নথিপত্র আমদানিকারকের ব্যাংকে পাঠানোর পরের দিন থেকে সর্বোচ্চ ১২০ দিনের মধ্যে মূল্য দেশে নিয়ে আসতে হয়। ১২০ দিনের নির্ধারিত মেয়াদ পেরোনোর পরও দেশে আসেনি– এমন অর্থের পরিমাণ প্রায় ১৫০ কোটি ডলার।

এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মিশনকে জানিয়েছে, রপ্তানির অর্থ যথাসময়ে প্রত্যাবাসনে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে ইতোমধ্যে একজন অতিরিক্ত সচিবের সভাপতিত্বে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d