খেলাপি ঋণের নতুন রেকর্ড
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনের দিনই ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি বছরের মার্চে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩৬ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা বেড়ে এক লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় ব্যাংক খাতের ‘অর্থনীতির গলার কাঁটা’ খেলাপি ঋণ নিয়ে কোনো কথা বলেননি অর্থমন্ত্রী।
উল্টো ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন তিনি।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ব্যাংক খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। এর ফলে ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলছে।
ঋণ পুনঃ তফসিল, পুনর্গঠন, নতুন ঋণ দিয়ে পুরনো ঋণ নবায়ন, তথ্য গোপন করে খেলাপি না দেখানোসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে ব্যাংকগুলো; তার পরও বাড়ছে খেলাপি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। কিন্তু তিন মাস পর মার্চ শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ পৌঁছেছে ইতিহাসের সর্বোচ্চ এক লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকায়। অর্থাত্ এ খাতের বিতরণ করা ঋণের ১১.১১ শতাংশই খেলাপি হয়ে পড়েছে।
চলতি বছরের মার্চ শেষে মোট বিতরণকৃত ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকায়। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে তিন লাখ ১২ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা, এর মধ্যে ২৭ শতাংশ খেলাপি; বেসরকারি ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ১২ লাখ ২১ হাজার ১১৬ কোটি টাকা, এর মধ্যে ৭.২৮ শতাংশ খেলাপি; বিদেশি ব্যাংকগুলো বিরতণ করেছে ৬৬ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে ৫.২০ শতাংশ খেলাপি এবং বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছিল ৪০ হাজার ৩২ কোটি টাকা, যার ১৩.৮৮ শতাংশই খেলাপি হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুষ্টের পালন শিষ্টের দমন করছে। ভুল পলিসি তৈরির কারণেই বাংলাদেশ ব্যাংক ঘন ঘন সার্কুলার দেয়। ব্যাংক খাত ভঙ্গুর অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে।
এ অবস্থার উন্নতি না হলে প্রবৃদ্ধি বাড়লেও কোনো লাভ হবে না। কারণ ব্যাংক খাত ঠিক না হলে, কর্মসংস্থান না বাড়লে ভোগান্তিতে থাকবে সাধারণ মানুষ।
গত ২৩ মে রাজধানীর লেকশোর হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য সামনে কী আছে’ শীর্ষক এক সেমিনারে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন জানান, গত ১০ বছরে খেলাপি ঋণ ৪২ হাজার ৭২ কোটি টাকা থেকে বেড়ে এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩ কোটি টাকা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকে মধ্যবিত্ত মানুষের জমা অর্থ কমছে। ব্যাংকে সুশাসনে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে স্বাধীনতা না থাকায় এই নেতিবাচক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাংক খাতে তথ্য সরবরাহে বড় ধরনের অভাব রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন গোষ্ঠীর যোগসাজশে যে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা তৈরি হয়েছে, তার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। আর প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার জন্যই তারল্য সংকটে পড়েছে ইসলামী ব্যাংকগুলো।