Bangladesh

খোলা হিসেবে বেশি দামে বিক্রি, বোতলজাত সয়াবিন তেল বাজার থেকে হাওয়া

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ছয় দোকান ঘুরে পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল কিনেছেন আনোয়ার হোসেন। তাও গায়ের দাম ৮১৮ টাকায় পাননি। পরিচিত দোকানি বলে ১২ টাকা বেশি দিয়ে পেয়েছেন। হতাশা প্রকাশ করে ঢাকার তেজতুরি বাজারের এ বাসিন্দা বলেন, যেখানেই যাই, তেল নাই। থাকলেও সংকটের অজুহাতে ২০ টাকা বেশি চাচ্ছেন। কপাল ভালো, পরিচিত দোকানি থেকে নিতে পেরেছি।

আনোয়ারের মতো গতকাল বৃহস্পতিবার অনেকেই বাজারে গিয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাননি। পেলেও দামে ভড়কে যাচ্ছেন। কারওয়ান বাজার, মহাখালী কাঁচাবাজার, তেজগাঁও কলোনি বাজার ঘুরে বেশির ভাগ দোকানে বোতলজাত ভোজ্যতেল পাওয়া যায়নি। দু-এক দোকানে পাঁচ লিটারের বোতল থাকলেও খুব সীমিত। এক বা দুই লিটারের বোতল একেবারেই নেই। অনেকেই লুকিয়ে রেখে পরিচিত ক্রেতাকে দিয়ে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি নিচ্ছেন। এরই ধাক্কায় বেড়ে গেছে খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম। ফলে দোকানিরা বাড়তি দর পেতে বোতল থেকে ঢেলে খোলা সয়াবিন হিসেবে বিক্রি করছেন।

সপ্তাহ ব্যবধানে খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েল লিটারে পাঁচ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে খোলা পাম অয়েল ১৬০-১৬২ এবং সয়াবিন ১৭০-১৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বোতলজাত সয়াবিন ১৬৭ টাকা লিটার। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোম্পানি ও ডিলার তেল সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। পাঁচ কার্টন চেয়ে মিলছে একটি। তেল কেনার জন্য আটা-ময়দার বস্তা কেনার শর্তজুড়ে দিচ্ছেন। অবশ্য ডিলারদের ভাষ্য, অনেক কোম্পানি উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। যারা উৎপাদনে আছে, বিশ্ববাজারে দর বাড়ার কারণে তারাও সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে।

আমদানিকারক ও বাজারজাতকারীরা বলছেন, বিশ্ববাজারের হিসাবে লিটারে ১২-১৩ টাকা বাড়ার কথা। সরকার দুই দফায় শুল্ককর কমানোর কারণে স্থানীয় পর্যায়ে দর বাড়ানো হয়নি। আগের দরে বিক্রি করে মিলারদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। ফলে চাহিদার তুলনায় আমদানি কমেছে ২০ শতাংশের মতো। এ পরিস্থিতিতে মিলাররা বর্তমান উৎপাদন খরচ বিবেচনায় যৌক্তিকভাব দাম সমন্বয় করার দাবি জানিয়েছেন।

সরকারকে সতর্ক করে আমদানিকারকরা বলছেন, রমজানের আগেই তেলের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। এখনই পদক্ষেপ না নিলে সামাল দেওয়া কঠিন হবে। এ ক্ষেত্রে আমদানি বাড়ানোর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

ভোক্তা-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এগুলো ব্যবসায়ীদের খোঁড়া যুক্তি। বর্তমানে যে তেল বিক্রি হচ্ছে, তা আমদানি হয়েছে তিন থেকে চার মাস আগে। তখন বিশ্ববাজারে দর কম ছিল। এখন বিশ্ববাজার বাড়লেও সে তেল আমদানি করে পরিশোধনের পর বাজারে আসতে অন্তত দুই মাস লাগবে।
ভোজ্যতেলের সরবরাহ বৃদ্ধি ও দাম স্বাভাবিক রাখতে অন্তর্বর্তী সরকার গত ১৭ অক্টোবর অপরিশোধিত সয়াবিন তেল, পরিশোধিত পাম অয়েল ও সয়াবিন বীজ– তিনটি পণ্য আমদানিতে ভ্যাট ১৫ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করে। ১৯ নভেম্বর স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে আরও ৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতি দিয়ে শুধু আমদানিতে ৫ শতাংশ রেখেছে। এ পদক্ষেপে বোতলজাত এবং খোলা– উভয় তেল লিটারে ১০-১২ টাকা দাম কমার কথা। কিন্তু বাজারে উল্টো চিত্র। দাম চড়েছে। আবার টাকা দিয়েও মিলছে না তেল।

ট্যারিফ কমিশনের তথ্যমতে, দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা ২২ লাখ টন। স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয় দুই লাখ টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমদানি হয় ২৩ লাখ টন। এনবিআরের তথ্য, গত অক্টোবর ও নভেম্বরে অপরিশোধিত সয়াবিন এবং পাম অয়েল আমদানি হয়েছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার টন। গত বছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ৪ লাখ ৬০ হাজার টন। অর্থাৎ আমদানি ২০ শতাংশের মতো কমেছে।

কারওয়ান বাজারের পুষ্টি ব্র্যান্ডের ডিলার সিদ্দিক এন্টারপ্রাইজের মালিক সিদ্দিকুর রহমান সমকালকে বলেন, এস আলমের তেল সরবরাহ বন্ধ। অন্যান্য কোম্পানিও সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। বাজারে সংকট তৈরি হয়েছে। তা ছাড়া কোম্পানিগুলো প্রতি কার্টনে তাদের তিন টাকা করে প্রণোদনা বন্ধ করে দিয়েছে। এসব কারণে দাম বেড়ে গেছে। এর পরও আমরা সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি।

তবে ডিলারের দাবি উড়িয়ে আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, আগের তুলনায় তারা সরবরাহ বাড়িয়েছেন। বিশ্ববাজারে দাম, বন্দরে আসার পর খরচ– সবকিছু নখদর্পণে রেখে ডিলাররা ঠিকই বুঝতে পারেন কখন দাম বাড়বে, কখন কমবে এবং সেভাবেই কোম্পানির সরবরাহ করা তেল মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন। ডিলারদের নিয়ন্ত্রণ এখন অনেক কঠিন হয়ে পড়ছে। আগে যে ডিলার দৈনিক ১০০ কার্টন নিতেন, এখন নিচ্ছেন ১২০। তিনি কি পুরোটা বাজারে সরবরাহ করছেন? মনে হয় না।

বসুন্ধরা মাল্টি ফুড অ্যান্ড প্রডাক্টের বিভাগীয় প্রধান (বিক্রয় ও বিপণন) রেদোয়ানুর রহমান সমকালকে বলেন, বাজারে তাদের তেল সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে। এলসি খোলাসহ নানা কারণে তাদের ২২ হাজার টন তেলের শিপমেন্ট বাতিল করতে হয়েছে। এ জন্য আমদানি কমেছে।

টি কে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আথহার তাসলিম বলেন, সরকার শুল্ককর যা কমিয়েছে, তার চেয়ে বিশ্ববাজারে দর বেড়েছে বেশি। কোম্পানিগুলো লোকসানের ঝুঁকিতে থাকলেও সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে। গত মাসের তুলনায় চলতি মাসে সরবরাহ বাড়িয়েছে। সংকট হওয়ার কথা নয়।

ক্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, এখন যেসব তেল বিক্রি হচ্ছে, সেগুলো চার-পাঁচ মাস আগে আমদানি করা। অথচ বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে দেশে বাড়ানোর পাঁয়তারা করা হচ্ছে।

তেলের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। সূত্র জানায়, বৈঠকে কোম্পানিগুলো স্থানীয় পর্যায়ে দাম বাড়ানোর দাবি জানায়। পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আগামী সপ্তাহে ভোজ্যতেল উৎপাদনের মিল পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেয়। উৎপাদন, মজুত, আন্তর্জাতিক দর– সবকিছু পর্যালোচনা করে সরকার দাম নির্ধারণ করবে বলে জানানো হয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor