Hot

গণপিটুনি, ৯ মাসে নিহত ১৬৩

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে গণপিটুনি দিয়ে হত্যাকাণ্ড কীভাবে বেড়েছে তা উঠে এসেছে মানবাধিকার সংস্থা আইন সালিশ কেন্দ্রের (আসক) এক         পরিসংখ্যানে। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্যমতে, গণঅভ্যুত্থানের মাস গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন ১৬১ জন। গত বছরের শেষ ৫ মাসে ৯৬ জনকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আর চলতি বছরের প্রথম চার মাসে ৬৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে।

আসকের তথ্যমতে, গণঅভ্যুত্থানের মাস আগস্টেই গণপিটুনিতে নিহত হন ২১ জন। পর্যায়ক্রমে সেপ্টেম্বরে ২৮, অক্টোবরে ১৯, নভেম্বরে ১৪, ডিসেম্বরে ১৪, জানুয়ারিতে ১৬, ফেব্রুয়ারিতে ১১, মার্চে ২০ ও এপ্রিলে ১৮ জন নিহত হন। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গণপিটুনিতে নিহত হন ১২৮ জন। এরমধ্যে গণঅভ্যুত্থানের আগের ৭ মাসে নিহত হন ৩২ জন। আর পরের পাঁচ মাসে গণপিটুনিতে ৯৬ জনের মৃত্যু হয়। অথচ ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরো বছরে গণপিটুনিতে মারা যান মাত্র ৫১ জন। এর আগের বছর ২০২২ সালে মাত্র ৩৬ জন, ২০২১ সালে ২৮ জন ও ২০২০ সালে ৩৫ জন। তথ্যানুযায়ী গত ৯ মাসে শুধুমাত্র গণপিটুনিতে নিহত হওয়াদের মধ্যে শুধুমাত্র ঢাকা বিভাগে গণপিটুনিতে ৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া খুলনা বিভাগে ১৩, রাজশাহীতে ১৬, চট্টগ্রামে ২৪, বরিশালে ১৬, ময়মনসিংহে ৫, সিলেটে ৫ জন। 

অপরাধবিজ্ঞানীরা বলছেন, দেশে যখন সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা চরম পর্যায়ে চলে যায় তখনই গণপিটুনির মতো ঘটনা বেড়ে যায়। এ ছাড়া এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের যখন আইনের আওতায় আনা হয় না তখন এসব ঘটনা আরও বাড়তে থাকে।

গতকাল ঢাকার দারুসসালামের আহম্মদ নগরের হাড্ডিপট্টি এলাকায় পিটিয়ে দুই যুবককে হত্যা করা হয়েছে। এদিন বেলা ১২টার দিকে দুই যুবক ওই এলাকায় যাওয়ার পর স্থানীয়রা ক্ষিপ্ত হয়ে পিটুনি দিলে ঘটনাস্থলেই তারা মারা যান। এর আগের দিন ওই এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান ছিল। একদিন পরেই স্থানীয় কয়েকশ’ মানুষ গণপিটুনি দিয়ে দু’জনকে হত্যা করে। নিহত দু’জনের মধ্যে একজনের নাম তানভীর (২৫) বলে জানা গেছে। অন্যজনের নাম-পরিচয় জানাতে পারেনি পুলিশ। তবে তারা মাদক কারবারি ও ছিনতাইকারী বলে জানিয়েছে পুলিশ। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, দারুসসালাম থানা পুলিশ শুক্রবার আহম্মদ নগরের হাড্ডিপট্টি এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান চালায়। অভিযানে পাঁচ কেজি গাঁজাসহ দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাতে মাদক ব্যবসায়ীদের ধরে নিয়ে আসার পর ওই এলাকায় স্থানীয় মানুষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে গতকাল দুই যুবক হাড্ডিপট্টি এলাকায় গিয়ে স্থানীয়দের শাসাতে থাকেন। তখন স্থানীয় কয়েকশ’ মানুষ ওই দু’জনকে ধাওয়া দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। দারুসসালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিব-উল-হোসেন বলেন, শুক্রবার তানভিরের বাসায় আমরা অভিযান চালিয়েছিলাম। তখন তানভীর পালিয়ে যায়। পরে তার বাসা থেকে পাঁচ কেজি গাঁজা উদ্ধার করি। পরে তানভীরসহ তিনজন আবার ওই এলাকায় চাপাতি নিয়ে হাজির হয়ে মানুষকে শাসাতে থাকে। পরে স্থানীয়রা গণপিটুনি দিয়ে দু’জনকে মেরে ফেলেছে।

২০১৯ সালের ২০শে জুলাই বাড্ডায় গণপিটুনির নির্মম এক ঘটনা পুরো দেশের মানুষকে নাড়া দিয়েছিল। ওইদিন সাড়ে চার বছরের তুবা ও পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া তাসিন আল মাহিরের মা ৪০ বছর বয়সী তাসলিমা বেগম রেনু তুবার ভর্তির বিষয়ে খোঁজখবর নিতে বাড্ডার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। কিন্তু শিশু অপহরণকারী সন্দেহে একদল উন্মত্ত জনতা রেনুকে স্কুলের গেটের সামনে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। মোবাইল ফোন ও সিসিটিভিতে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকশ’ লোকের জমায়েতে কিছু তরুণ তাসলিমাকে লাথি মারছে, আঘাত করছে। অন্যরা ছিলেন নির্বাক দর্শক।

মানবাধিকারকর্মী নুর খান লিটন মানবজমিনকে বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় সাম্প্রতিক সময়ে গণপিটুনি বেড়েছে। কারণ দেশে সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। এটা একটা অনিশ্চিত পথে যাত্রার মতো। এমন পরিস্থিতিতে মানুষ আইন মানছে না। মব সন্ত্রাস তৈরি হওয়াতে মানুষ গণপিটুনিতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে। দুভার্গ্যজনক হলেও সত্য এর বিরুদ্ধে সরকার কার্যত দৃঢ়তার সঙ্গে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে নজির পাওয়া যাচ্ছে না। মুখে মুখে অনেক কথা বলছে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের সন্ত্রাস বন্ধ করার জন্য যেসব পদক্ষেপ নেয়া দরকার সেটি অনুপস্থিত। 
সমাজ ও অপরাধবিজ্ঞানী ড. তৌহিদুল হক মানবজমিনকে বলেন, গণপিটুনিতে মৃত্যু বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে এবং সেটি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হচ্ছে। পাশাপাশি এটাকে নানাভাবে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কেউ যদি পরিকল্পিতভাবে কাউকে হয়রানি, শারীরিক আক্রমণ করতে চায় তবে কোনো একটা অভিযোগ তুলে কিছু লোক একত্রিত হয়ে তাকে যদি মেরেও ফেলে তবে একটা সময় আইনগত সুরাহার বিষয়টি বের করা কঠিন হয়ে পড়ে। তখন সামনে চলে আসে ওরা কারা ছিল, কীভাবে শনাক্ত করা যাবে, সাক্ষী কে দিবে এমন বিষয়। যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গণপিটুনি দিয়ে কাউকে মেরে পার পেয়ে যায় এবং বিচার না হয় তবে এর রেশ বাড়তে থাকে। তিনি বলেন, কেউ অপরাধ করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেটার সমাধান করবে। আরেকটা বিষয় হলো হঠাৎ করে গণপিটুনির ঘটনা ঘটে আবার পরিকল্পিতভাবে ঘটে। হঠাৎ করেই হোক বা পরিকল্পিতভাবে; গণপিটুনির সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d