Hot

গণ-অভ্যুত্থান কি বেহাত হওয়ার পথে?

বাংলাদেশের রাজনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি ও অন্তর্বতীকালীন সরকারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে। পতিত স্বৈরাচারের সুবিধাভোগীরা ষড়যন্ত্র করছে ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের। অপরদিকে গণঅভ্যুত্থানের ফসল দ্রুত ঘরে তুলতে চায় কোনো কোনো রাজনৈতিক দল। সবশেষ রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর অপসারণ জটিলতা কি তাহলে গণঅভ্যুত্থান বেহাত হওয়ার পথ সুগম করছে? এমন প্রশ্ন এখন জনমনে। বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের তিন মাস গত হয়নি এখনো। এরই মাঝে ডালপালা মেলছে নানাবিধ গুজব। এসব নিয়ে সরব সোশ্যাল মিডিয়া। এছাড়া পাল্টা অভ্যুত্থান, সামরিক শাসন জারির বিষয়টিও আছে আলোচনায়। ভারতে পলাতক হাসিনা ও তার অনুগতরা প্রবাসী সরকার গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে, এমন খবরও চাউর আছে ।

বিপ্লবের পর প্রতিবিপ্লবের একটি সম্ভাবনা থেকেই যায়। বিশ্ব ইতিহাসে প্রতিবিপ্লবের নজির রয়েছে অনেক। ফরাসি বিপ্লব থেকে বাংলাদেশের ‘৭৫ এর নভেম্বরের বিপ্লবের পরও ঘটে প্রতিবিপ্লবের ঘটনা। প্রতিবিপ্লব বরাবরই অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় মূল বিপ্লবের স্থায়ীত্ব ও পরিপূর্ণতার পথে। পরাজিত শক্তিকে সুযোগ করে দেয় পূর্বাস্থানে আসীন হতে। বিপ্লবকারীদের নতুন সমাজ বা রাষ্ট্র গঠন প্রচেষ্টা রুখে দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত শ্রেণি ও তাদের আর্শীবাদপুষ্টরা মরণপণ কামড় দেয় পূর্বাবস্থায় ফিরে আসার জন্য। যার মধ্য দিয়ে পুনরুথানের চেষ্টা চালায় বিপ্লবের বিরুদ্ধচারী পতিত শক্তি। জুলাই-আগস্টের পরিবর্তনের ঘটনায় আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতনকে বিপ্লব না বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে গণঅভ্যুত্থান হিসেবে। সেদিক থেকে প্রতিবিপ্লবের বিষয়টি আমলে নেয়ার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। পতিত স্বৈরাচার ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে চ্যালেঞ্জ করে পাল্টা অভ্যুত্থান করবে সে ধরনের শক্তি, সাহস ও নৈতিক মনোবল নেই তাদের। অন্তর্বতী সরকারের সাময়িক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সামরিক বাহিনী দেশের গণমানুষের বিপক্ষে দাঁড়াবে সে ধরনের সম্ভাবনাও অত্যন্ত ক্ষীণ। 

তবে উড়িয়ে দেয়া যাবে না গণঅভ্যুত্থান বেহাত হওয়ার সম্ভাবনা। গণ অভ্যুত্থান বেহাত হওয়া মানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বতীকালীন সরকারের ক্ষমতা হারানো। ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো মুখিয়ে আছে ক্ষমতা হাতিয়ে নিতে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মূল আকাঙ্ক্ষা ফ্যাসিবাদ মুক্ত, বৈষম্যবিহীন একটি নতুন বাংলাদেশ। যেখানে থাকবে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ন্যায় বিচার ও মানবিক মর্যাদার নিশ্চয়তা। আর এসব নিশ্চিত করতেই তারা উত্থাপন করেছে রাষ্ট্র সংস্কারের দাবি। এই দাবির মূলে রয়েছে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। এজন্য অন্তর্বতীকালীন সরকারকে একটি যৌক্তিক সময় দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছে দেশের মানুষ। জনগণ মনে করে রাষ্ট্র সংস্কার আগে, নির্বাচন পরে। তবে এসময়কালে সরকারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে। নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রীর মূল্য ও সহজ প্রাপ্যতা। বলা যায়, এক্ষেত্রে অন্তর্বতী সরকারের তেমন কোনো সাফল্য নেই। এসব নিয়ে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে সমাজ ও রাষ্ট্রে। আর এই সুযোগটি গ্রহণের অপেক্ষায় রয়েছে কিছু রাজনৈতিক দল। অতি দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে মাঠ গরম করতে চাচ্ছে দলগুলো। সংস্কারকাজ অসম্পূর্ণ রেখে যেকোনো মূল্যে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার হাত বদল হলে গণঅভ্যুত্থান বেহাত হবে। গণঅভ্যুত্থান বেহাত হওয়ার সকল পথ ও সম্ভাবনা রুখে দিতে হবে ছাত্র-জনতাকে। সবধরনের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠে গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করতে হবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারকে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নজিরবিহিন ঘটনা পাঁচ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান। যার মধ্যদিয়ে পতন ঘটেছে ফ্যাসিবাদের। দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন পতিত স্বৈরাচার হাসিনা। তার আগে জুলাইয়ের ৩৬দিনে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে হাসিনা। কেড়ে নিয়েছেন দেড় সহস্রাধিক প্রাণ। এখনো হাসপাতালে বেঁচে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত হাজার হাজার মানুষ। এরই মাঝে ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের সফলতা ও বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিভিন্ন মহল। চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে তারা প্রতিটি  কাজের। বিগত পনের বছর যারা ছিলো আশাহীন, ভাষাহীন তারা বিভিন্ন দাবি দাওয়ার তাৎক্ষণিক সুরাহা চাচ্ছে। মিছিল সমাবেশ করে রাজপথে ভোগান্তি বাড়াচ্ছে সাধারণ মানুষের। সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ কেউ অন্তর্বর্তী সংশ্লিষ্ট সকলেরই তীব্র সমালোচনায় মত্ত। তারা একবারো ভাবছেন না- তাদের এসব সমালোচনা কারো প্রতি ব্যক্তিগত আক্রমণ ফ্যাসিবাদের দোসরদেরকেই উৎসাহিত করছে। 

বিপ্লব বা গণ-অভ্যুত্থান বেহাত হওয়ার নজির বাংলাদেশেও রয়েছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলো দেশের গণমানুষ । কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধের মালিকানা বেহাত হয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধের একক মালিকানা চলে যায় এক ব্যক্তি ও একটি দলের কব্জায়। এ নিয়ে বাংলাদেশের প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী আহমদ ছফা’র লেখা ড. সলিমুল্লাহ খানের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘বেহাত বিপ্লব-১৯৭১।’ গণঅভ্যুত্থান বেহাত হওয়ার সকল পথ ও সম্ভাবনা রুখে দিতে হবে। সবধরনের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠে গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করতে হবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারকে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto