গরমের উত্তাপ নিত্যপণ্যের বাজারে: সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে
রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। যার প্রভাব পড়ছে রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজারেও। এতে সপ্তাহ ব্যবধানে দাম বেড়েছে মাছ- গোশত, সবজিসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ানবাজার, যাত্রাবাড়ি বাজার, শনির আখড়া বাজার ও হাতিরপুল কাঁচা বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। বিক্রেতারা জানান, তীব্র গরমে দাম বেড়েছে প্রায় সব পণ্যেরই। পাশাপাশি বাজারে কমেছে ক্রেতা উপস্থিতি।
ঈদের পর থেকে কাঁচা বাজারে বেশিরভাগ সবজির দাম বাড়তির দিকে। সপ্তাহ শেষে কোনো কোনো সবজি কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মাছ, গোশতের দামও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। তবে ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমেছে।
তীব্র গরমের মধ্যে কাঁচা বাজারে এসে ক্রেতারা হা-হুতাশ করলেও ব্যবসায়ীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি একদিকে হিট অ্যালার্ট জারি এবং অস্বাভাবিক তাপমাত্রার কারণে দাম কমেছে না সবজির। যাত্রাবাড়ি পাইকারী বাজারে সবজি কিনতে আসা মো. বলেন, এখন বাজারে কোনো সবজির দাম ৫০ টাকার নিচে নেই। সবচেয়ে সস্তা সবজি পেঁপে কিনতে হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। আলু কিনতে হচ্ছে ৬০ টাকা দিয়ে। নিত্য পণ্যের দাম বাড়ায় প্রতিনিয়ত ব্যয় বাড়ছে। কিন্তু সে অনুযায়ী আয় বাড়ছে না। সবজি বিক্রেতা আহাদ মিয়া বলেন, ঈদের দুই তিন দিন পর থেকে সবজির দাম বাড়তির দিকে। যে পেঁপে ছিল ২০ টাকা আজ সেটা কেজি ৫০ টাকা হয়েছে। বেগুনের দামও বেড়েছে। লম্বা বেগুন ৮০ টাকা হয়েছে। শসার দাম বেড়ে ৬০ টাকা, বরবটি ৮৯ টাকা, মাঝারি আকারের পাতি লাউ ৮০ টাকা, গোল আলু ৬০ টাকা, টমেটো ৫০ টাকা, ঝিঙ্গা ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পটল ৬০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১০০ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে মাঝারি আকারের প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা দরে। কোথাও কোথাও বড় আকারের লেবু ৬০ টাকা হালিও বিক্রি হতে দেখা গেছে। প্রচ- গরমের কারণে লেবুর চাহিদা বাড়ায় দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। মাছের বাজারও চড়া।এক কেজি বা তার চেয়ে বেশি ওজনের রুই মাছ ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা কেজি, চাষের পাঙ্গাস মাছ ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি, চাষের কৈ ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা, চাষের পাবদা ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি, তেলাপিয়া ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি, সিলভার কার্প মাছ ২০০ থেকে ২২০ টাকা, শিং মাছ ৬৫০ টাকা, গুলশা মাছ ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়।
বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৭০ টাকা, রসুন ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা, আদা ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। রসুন আর আদার দাম যে ৬ মাস আগে উঠেছে তা আর নামার নামগন্ধ নেই। তবে কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। ঈদের আগে ব্রয়লার মুরগি ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও শুক্রবার ২১০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে সোনালিকা মুরগির দাম বেড়েছে। বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ থেকে ৩৯০ টাকা কেজি দরে।
শনির আখড়া বাজারের ব্রয়লার মুরগি বিক্রেতা মোহাম্মদ তৌফিক সিরাজী বলেন, ঈদের আগের চেয়ে ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। আজ ব্রয়লার মুরগি ২১০ থেকে ২২০ এবং সোনালিকা মুরগি ৩৮০ থেকে ৩৯০ কেজি দরে বিক্রি করছি। তবে ডিমের বাজার গত সপ্তাহের মতোই আছে। ফার্মের মুরগির ডিম ১২০ থেকে ১৩০ টাকা ডজন এবং হাঁসের ডিম হালি ৮০ টাকা। আর কোয়েল পাখির ডিম ৫০ টাকা ডজন দরে বিক্রি হচ্ছে। গরুর গোশত কেজি প্রতি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসি ১০৫০ থেকে ১১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়।
এদিন শনির আখড়া বাজারের কয়েক গজ দূরে গোবিন্দপুর কাঁচা বাজারে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী ফাহিমা নাসরিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, রোজার পর আবার জিনিসপত্রের দাম বাড়তে শুরু করেছে। দাম বাড়ায় সীমিত আয় দিয়ে আমাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, এখন মাছ, মাংস থেকে শুরু করে কোনো জিনিসেরই দাম কমে না। দাম কমে শুধু মানুষের!
সবজি বিক্রেতাদের দাবি, তীব্র গরমে ক্ষেতে নষ্ট হচ্ছে সবজি। পাশাপাশি সেচ বাবদ বেড়েছে খরচ। যার প্রভাবে গ্রাম পর্যায়ে সবজির দাম বাড়ায়, রাজধানীর বাজারগুলোতেও বেড়েছে দাম। আর ক্রেতারা বলছেন, বাজার আগে থেকেই চড়া। তার ওপর তীব্র গরমের সুযোগ লুফে নিয়ে আরও দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।