গরমের সঙ্গে বেড়েছে লোডশেডিং, গ্রামে ভোগান্তি বেশি
দেশজুড়ে মৃদু তাপপ্রবাহ চলছে। তাপমাত্রা উঠেছে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, আগামী কয়েকদিন তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। অতিরিক্ত গরমে বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে লোডশেডিং। তবে শহরের তুলনায় গ্রামে দুর্ভোগ বেশি। শীতকাল শেষ হতে না হতে এখনই অনেক এলাকায় ৬-৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। রোজায় তীব্র গরমের সঙ্গে বিদ্যুতের ভোগান্তি জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির তথ্যমতে, এখন দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ১৫ হাজার মেগাওয়াট। সর্বোচ্চ উৎপাদন হচ্ছে ১৪ হাজার মেগাওয়াট। যদিও দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৬ হাজার মেগাওয়াট। জ্বালানি সংকটে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। তাই লোডশেডিং করে ঘাটতি সামলাতে হচ্ছে।
বিতরণ কোম্পানিগুলো থেকে জানা যায়, দেশে প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ঘাটতি সবচেয়ে বেশি। এ জন্য গ্রামগঞ্জে লোডশেডিং বেড়েছে বেশি। বিশেষ করে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রংপুরে অপেক্ষাকৃত বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। চট্টগ্রামেও লোডশেডিং বেড়েছে। তুলনামূলক লোডশেডিং কম বরিশাল বিভাগে।
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় মঙ্গলবার রাতেই অন্তত ছয়বার বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা করে। বুধবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৮ ঘণ্টার মধ্যে ৪ ঘণ্টাই ছিল লোডশেডিং। পৌর এলাকার বাসিন্দা রাকিবুল ইসলাম বলেন, গরমের শুরুতেই বিদ্যুৎ ঝামেলা শুরু হয়েছে। লোডশেডিংয়ের কারণে শিশুসন্তানকে নিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
পিডিবির উপজেলা প্রকৌশলী ইমতিয়াজ মামুন বলেন, বর্তমানে এ উপজেলায় চাহিদা আছে সাড়ে ৮ মেগাওয়াট, এর মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে চার মেগাওয়াট। চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ পাওয়ায় এক ঘণ্টা পরপর দুটি করে ফিডার বন্ধ ও চালু রাখা হচ্ছে।
খুলনা বিভাগের ১০ জেলা, বরিশাল বিভাগের ৬ জেলা এবং বৃহত্তর ফরিদপুরের ৫ জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)। এসব এলাকায় গত মঙ্গলবার রাতে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৬৬৬ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে সরবরাহ ছিল ৬০৪ মেগাওয়াট। অর্থাৎ ঘাটতি ছিল ৬২ মেগাওয়াট।
বগুড়ায় চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম ৩০ শতাংশ। ফলে তিন-চার ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, গ্যাস সরবরাহ কম হওয়ায় বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। গ্যাস সরবরাহ কমায় ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট উৎপাদন কম হয়েছে। তবে দুই-এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে দাবি তাঁর।
দেশে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা এখন ১২ হাজার ২২৬ মেগাওয়াট। এ জন্য দৈনিক অন্তত ২৩২ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। তবে সরবরাহ করা হচ্ছে ৮৭-৮৮ কোটি ঘনফুট। এতে গড়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে সাড়ে ৫ হাজার মেগাওয়াট। গ্রীষ্মে পিডিবি অন্তত ১৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের দাবি জানিয়েছে পেট্রোবাংলাকে।
এ ছাড়া তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর সম্মিলিত বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৬ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। খরচ বেশি বলে তেলভিত্তিক কেন্দ্র কম চালানো হয়। গরমে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ ঘাটতি কমাতে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এখন বেশি চালাতে হচ্ছে। এতে পিডিবির খরচ বেড়েছে। তবে এখানেও জ্বালানির সংকট রয়েছে। বেসরকারি খাতের তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো তেল আমদানির জন্য পর্যাপ্ত ডলার পাচ্ছে না। পিডিবির কাছে বড় অঙ্কের বকেয়া পড়েছে তাদের।