International

গাজায় আগ্রাসন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা প্রশ্নের মুখে

ইসরায়েলে গত ৭ অক্টোবর হামলার জন্য ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাসের নেতাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ এনেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ। এতে হামাসের ছয় নেতার নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, এর মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। মঙ্গলবার তাদের নাম প্রকাশ করা হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের ‘প্রতীকী পদক্ষেপ’ গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা ব্যাহত করবে।

বুধবার আলজাজিরার প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তাদের মধ্যে গত জুলাইয়ে তেহরানে ইসরায়েলের হামলায় মারা যান ইসমাইল হানিয়া; একই মাসে গাজায় ইসরায়েলের বোমার আঘাতে মারা যান মোহাম্মদ দাইফও। তৃতীয় ব্যক্তি হলেন মারওয়া ইসা। ইসরায়েলের দাবি, তিনি চলতি বছরের মার্চে এক হামলায় নিহত হয়েছেন। বাকি যে তিনজন জীবিত তারা হলেন– হামাসের নতুন প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার; ধারণা করা হয়, তিনি গাজাতে অবস্থান করছেন; খালেদ মাশাল আছেন কাতারের দোহায়, তিনি হামাসের প্রবাসী শাখার নেতৃত্ব দেন; আলী বারাকা নামে আরেক নেতা থাকেন লেবাননে।

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গার্ল্যান্ড এক বিবৃতিতে বলেন, এ আসামিরা ইরানের অস্ত্র, রাজনৈতিক ও অর্থ সহযোগিতা পেয়ে থাকেন; তারা হিজবুল্লাহর সমর্থনও পান। তারা ইসরায়েলকে ধ্বংস করতে হামাসের চেষ্টায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। 

এমন এক সময়ে মার্কিন বিচার বিভাগের এ অভিযোগের প্রসঙ্গটি এলো, যখন হোয়াইট হাউস গাজায় যুদ্ধের শেষ ঘটাতে একটি নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় রয়েছে। বৈরুতে আমেরিকান ইউনিভার্সিটির খ্যাতিমান ফেলো রামি খাউরি বলেন, হামাস নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ চলমান যুদ্ধবিরতি আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকে আঘাত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন শহর থেকে তিনি বলেন, গাজায় ইসরায়েল যা করছে, যুক্তরাষ্ট্র তা আগ্রহের সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্ত ও জোরালোভাবে সমর্থন করছে; যেটিকে জাতিসংঘ বলছে– গণহত্যায় হাততালি দেওয়া।  ফিলিস্তিনের সংগঠনটির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার পদক্ষেপ নেওয়ার ঘটনা এটাও পরিষ্কার করে যে, যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে তার কৃতকর্মের জন্য জবাবদিহি করাতে বেশ আগ্রহী। কিন্তু ইসরায়েলকে তার কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি করাতে আগ্রহী নয়। এ কারণে বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের চোখে যুক্তরাষ্ট্র সৎ মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় নেই। বরং তারা ইসরায়েলের গণহত্যার সঙ্গী হিসেবে পরিচিত।

এ প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরোধিতা ও গাজায় একটি যুদ্ধবিরতির পক্ষে বিক্ষোভ করায় ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে গ্রেপ্তার হয়েছেন বিখ্যাত পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। পুলিশের বরাত দিয়ে দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, বুধবার ইউনিভার্সিটি অব কোপেনহেগেনে এ বিক্ষোভ ডাকা হয়। অন্তত ২০ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় থুনবার্গসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে থুনবার্গের হাতে হ্যান্ডকাফ পরানো ছিল।

এক দিনে আরও ৪২ জন নিহত

ইসরায়েলের হামলায় গতকাল এক দিনে গাজায় আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন; আহত হয়েছেন ১০৭ জন। গত ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত ৪০ হাজার ৮৬১ জন নিহত ও ৯৪ হাজার ৩৯৪ জন আহত হয়েছেন। হতাহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। গাজার শরণার্থী শিবির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল হামলার শিকার হয়েছে। বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না উপত্যকার ৬ লাখ ২৫ হাজার শিশু। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button