International

গাজায় আরো ৬ বন্দির লাশ উদ্ধার ডেমোক্র্যাটিকদের সম্মেলনে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ

ইসরাইলকে গণহত্যার সময় দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র : হামাস

যুদ্ধবিরতি আলোচনার কথা বলে ইসরাইলকে গাজায় গণহত্যা চালিয়ে যাওয়ার জন্য সময় দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী এ অভিযোগ করে। এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ঘোষণা দেন, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন। হামাসকেও ওই চুক্তির প্রস্তাব গ্রহণের জানিয়েছেন তিনি। এরপরই যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযোগ করে এমন মন্তব্য করলো হামাস। ব্লিঙ্কেনের প্রস্তাবটিতে নেতানিয়াহুর ইচ্ছেরই প্রতিফলন ঘটেছে উল্লেখ করে একে সেতুবন্ধনের প্রস্তাব বলেছে হামাস।

গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরাইলের নতুন শর্তের বিশদ বিবরণ প্রকাশ করেছে হামাস। সেই সঙ্গে গত ৩১ মে জো বাইডেনের প্রস্তাবিত চুক্তি ও ১১ জুন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সমর্থিত চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে নেতানিয়াহুকে চাপ দেয়ার জন্য বিশ্বকে আহ্বান জানিয়েছে তারা। এর আগে, ইসরাইলি বন্দীদের মুক্তি ও গাজা যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে আলোচনাকে ‘সম্ভবত শেষ’ সুযোগ হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন ব্লিঙ্কেন। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ইসরাইলি হামলায় অন্তত ৩৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে গাজায় গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলি চলমান ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত হয়েছে অন্তত ৪০ হাজার ১৩৯ জন। আহত কমপক্ষে ৯২ হাজার ৭৪৩ জন। হতাহতদের বেশিরভাগই নারী, শিশু ও বেসামরিক নাগরিক।

এদিকে, ইসরাইলি সৈন্যরা গাজা উপত্যকায় খান ইউনিস শহরে একটি অভিযানের সময় ছয় ইসরাইলি জিম্মির লাশ উদ্ধার করেছে। গতকাল ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এবং প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে পৃথক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। আইডিএফ এক বিবৃতিতে বলেছে, উদ্ধারকৃত লাশের মধ্যে রয়েছেনÑ ৭৫ বছর বয়সী অ্যালেক্স ড্যান্সিগ, ৩৫ বছর বয়সী ইয়াগেভ বুচশতাভ, ৭৯ বছর বয়সী চাইম পেরি, ৮০ বছর বয়সি ইয়োরাম মেটজগার, ৫১ বছরের নাদাভ পপলওয়েল এবং ৭৮ বছর বয়সি আব্রাহাম মুন্ডার। তাদের সবার পরিবারকে অবগত করা হয়েছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইসরাইলি সামরিক বাহিনী আরও বলেছে, সেনাবাহিনীর ৯৮ তম ডিভিশন এবং শিন বেট এজেন্সির সদস্যরা খান ইউনিসের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে এই মরদেহগুলো উদ্ধার করে। তবে আরও বিশদ বিবরণ দেয়নি আইডিএফ। প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এদিন ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস যোদ্ধারা। হামাসের হামলায় ইসরাইলে নিহত হয়েছেন ১ হাজার ২০০ জন। পাশাপাশি ইসরাইল থেকে প্রায় ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় নিয়ে যায় হামাস।

এরমধ্যে গত বছরের নভেম্বরে কাতারের মধ্যস্থতায় প্রথমবারের মতো যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় হামাস ও ইসরাইল। এক সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতিতে ইসরাইলি কারাগার থেকে ২৪০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল, যার মধ্যে ৭১ জন মহিলা এবং ১৬৯টি শিশু রয়েছে। বিনিময়ে ২৪ বিদেশিসহ মোট ১০৫ জনকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। ইসরাইলের দাবি হামাসের কাছে এখনো প্রায় ১০৯ জন জিম্মি আটক রয়েছে। তবে এটা এখনো পরিষ্কার নয় যে বাকী জিম্মিদের কতজন এখনো জীবিত রয়েছে।

ডেমোক্র্যাটিকদের সম্মেলনে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ : আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোয় আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে দেশটির ক্ষমতাসীন দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলন। সোমবার রাতে শুরু হওয়া এই সম্মেলনে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বেশ কয়েক হাজার আমন্ত্রিত অতিথিও অংশ নিয়েছেন।

সোমবার সম্মেলন চলাকালে আশেপাশের এলাকায় প্রায় দেড় হাজার মানুষকে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। সম্মেলন শুরুর আগ থেকেই তারা বিভিন্ন স্থানে সমবেত হতে থাকেন। গাজাযুদ্ধে ইসরাইলকে সমর্থন দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন আন্দোলনকারীরা। বিক্ষোভ শেষে পদযাত্রাও করেন তারা। ইসরাইলকে সাহায্য করা বন্ধের পাশাপাশি গাজায় দ্রুত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান বিক্ষোভকারীরা। একইসঙ্গে, ডেমোর্ক্যাটদের জাতীয় সম্মেলন বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন তারা। বৃহস্পতিবার সম্মেলনের শেষ দিনেও বড় বিক্ষোভ করার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

উল্লেখ্য যে, গাজা যুদ্ধের প্রতিবাদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গত কয়েকমাস ধরেই বিক্ষোভ হতে দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ছড়িয়ে পড়া ওই বিক্ষোভ সামাল দিতে গিয়ে কিছু কিছু স্থানে রীতিমত হিমশিম খেতে হয়েছে পুলিশকে। কয়েক জায়গায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষও হয়েছে তাদের। এতে উভয়পক্ষের অনেকে আহত হয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতারের ঘটনাও ঘটেছে, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই শিক্ষক-শিক্ষার্থী।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button