International

গাজায় নির্বিচার শিশু হত্যা, সালমাহর ঈদ আসবে না, হুরও আর হাঁটতে শিখবে না

কয়েক দিন পরেই প্রথম জন্মদিন ছিল ফুটফুটে শিশু বানান আল–সালোউতের। আরেক শিশু হুর আল–সালোউতের বয়স এক বছর হয়েছে। কবে সে গুটি গুটি পায়ে হাঁটা শুরু করবে, সে অপেক্ষায় ছিলেন মা-বাবা। আর ঈদ কবে আসবে, কী কেনাকাটা করবে—তা নিয়ে ছোট্ট সালমাহ এসলিয়েহ যেন আরও চঞ্চল হয়ে উঠেছিল।

সালমাহের ঈদ আর আসবে না। হুর আল–সালোউতের প্রথম হাঁটা, আধো আধো বুলিতে কথা শোনার অপেক্ষা শেষ হবে না কোনো দিন। ইসরায়েলের নির্মম হামলা মা-বাবার কোল থেকে কেড়ে নিয়েছে ফিলিস্তিনের গাজার এই শিশুদের। শুধু এই তিনজন নয়, ১৭ মাস ধরে চলা ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় ফিলিস্তিনের উপত্যকাটিতে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ১৮ হাজার শিশু।

গাজায় গত ১৯ জানুয়ারি শুরু হয়েছিল যুদ্ধবিরতি। এরপর সেখানকার শিশুদের দুর্দশা কিছুটা কমেছিল। তবে গত মঙ্গলবার ভোররাতে (সাহ্‌রির আগে) গাজায় আবার নৃশংস হামলা শুরু করে ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, এই হামলায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ৫৯১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে শিশু ২০০। যদিও বার্তা সংস্থা এএফপি প্রথম দুই দিনে ৯৭০ জনের নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছিল।

গাজায় ইসরায়েলের নতুন করে এই হামলাকে ‘বর্বর ও বেআইনি’ বলেছে জাতিসংঘের ফিলিস্তিন মিশন।

নতুন করে হামলা শুরু করার পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মঙ্গলবার বলেছিলেন, গাজায় নৃশংসতা ‘কেবল শুরু’ হয়েছে। বাস্তবেও তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। বিগত তিন দিনে নিহতের পাশাপাশি আহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪২ জন। সব আহত ব্যক্তিকে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে গাজায় এখনো টিকে থাকা হাসপাতালগুলো। অনেকেই মারা যাচ্ছেন চিকিৎসার অভাবে।

গাজায় হাসপাতালগুলোর দুর্দশার এমনই এক চিত্র দেখা গেছে উপত্যাকটির উত্তরে ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালে। গতকাল হাসপাতালের পরিচালক মারওয়ান আল-সুলতান আল-জাজিরাকে বলেন, সেখানে ওষুধ, অক্সিজেন, জ্বালানি ও অন্যান্য জরুরি পণ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বুধবার রাতে হাসপাতালটিতে আহত ৮২ জনকে আনা হয়। এ ছাড়া মৃত অবস্থায় আনা হয় ৪৩ জনকে। তবে ভেন্টিলেটরসহ জীবন বাঁচানোর জন্য জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জামের বেশির ভাগই নষ্ট। সেগুলো ব্যবহারের উপায় নেই।

গাজায় ইসরায়েলের নতুন করে এই হামলাকে ‘বর্বর ও বেআইনি’ বলেছে জাতিসংঘের ফিলিস্তিন মিশন। গতকাল এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, নতুন করে ইসরায়েলের এই হামলা বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জরুরিভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে ‘পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থতা’ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের গ্রহণযোগ্যতা যেটুকু আছে, তা-ও ক্ষুণ্ন করবে।

কনভারসেশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, হামলা শুরুর পর থেকে গাজায় আনুমানিক ৮৫ হাজার টন বোমা ফেলা হয়েছে। এতে সরাসরি আঘাত পেয়ে, ভবনের ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়ে, আগুন লেগে এবং বিষাক্ত গ্যাস নিশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করে ফিলিস্তিনিদের মৃত্যু হয়েছে।

‘তারা চিকিৎসক ও শিক্ষক হতে চেয়েছিল’

নিহত ফিলিস্তিনিদের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। গতকাল গাজার একটি হাসপাতালের সামনে

নিহত ফিলিস্তিনিদের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। গতকাল গাজার একটি হাসপাতালের সামনে

নতুন করে ইসরায়েলের হামলা শুরুর দিন গত মঙ্গলবার তিন সন্তান—হাসান, মোহাম্মদ ও আজিজকে হারান গাজার বাসিন্দা কারাম তাফিক। তাদের বয়স যথাক্রমে ৯, ৮ ও ৫ বছর। কারাম যখন বিবিসিকে তিন সন্তানের কথা বলছিলেন, তখন তাঁর চোখ দিয়ে পানি ঝরছিল। তিনি বলেন, ‘তারা চারপাশে খেলাধুলা করে বেড়াত। আনন্দ করত। সবচেয়ে বড় কথা, তারা আমার টুকটুকে (তিন চাকার যান) করে ঘুরতে ভালোবাসত। আমার সন্তানেরা চিকিৎসক ও শিক্ষক হতে চেয়েছিল।’

গাজার এমনই আরেক অভাগা বাবা আলা আবু হিহাল। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে নাসের হাসপাতালে কাফনে মোড়া ছোট্ট সন্তান মোহাম্মদের মরদেহ হাতে নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। কাফনের কাপড়ের ভেতরে নিষ্পাপ মোহাম্মদের চেহারা একঝলক দেখা যাচ্ছিল। পাশেই পড়ে ছিল আবু হিহালের স্ত্রীর মরদেহ। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘মাত্র দুই বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়েছে। মারা যাওয়ার সময় তাঁর (স্ত্রী) গর্ভে সাত মাসের সন্তান ছিল।’

নাসের হাসপাতালের স্বেচ্ছাসেবক চিকিৎসক মরগান ম্যাকমোনাগলের সঙ্গে কথা হয় বিবিসির। মঙ্গলবার হামলার শুরু থেকে পরদিন মধ্যরাত পর্যন্ত টানা কাজ করেছেন তিনি। ম্যাকমোনাগলের হিসাবে, এই সময়টাতে হাসপাতালে যত হতাহত ফিলিস্তিনি এসেছেন, তাঁদের মধ্যে আনুমানিক ৪০ শতাংশই শিশু।

গাজায় এভাবে শিশু হত্যা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সরব হয়েছেন জাতিসংঘের কর্মকর্তারা। গত জানুয়ারিতে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার এক সপ্তাহ পর জাতিসংঘের মানবাধিকার-প্রধান টম ফ্লেচার নিরাপত্তা পরিষদে বলেছিলেন, গাজায় একটি প্রজন্ম মানসিক আঘাতে জর্জরিত হয়ে পড়েছে। শিশুদের হত্যা করা হয়েছে। তাদের অনেকে অনাহারে কিংবা ঠান্ডায় জমে মারা গেছে। কিছু শিশু প্রথম শ্বাস নেওয়ার আগেই মারা গেছে।

জাতিসংঘের শিশু তহবিল–ইউনিসেফ জানায়, উত্তর গাজার দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের ৩১ শতাংশ তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। সেখানে অপুষ্টির কারণে শিশুমৃত্যু ব্যাপকভাবে বেড়েছে।

অপুষ্টিতে ভুগছে শিশুরা

গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরু হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে হামলা চালানোর পর শুরু হয় ইসরায়েলিদের হত্যাযজ্ঞ। সেদিন থেকে উপত্যকাটিতে ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৪৯ হাজার ৬১৭ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম দ্য কনভারসেশনের তথ্যমতে, শিশুদের বেশির ভাগই নিহত হয়েছে ইসরায়েলের সরাসরি হামলায়।

কনভারসেশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, হামলা শুরুর পর থেকে গাজায় আনুমানিক ৮৫ হাজার টন বোমা ফেলা হয়েছে। এতে সরাসরি আঘাত পেয়ে, ভবনের ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়ে, আগুন লেগে এবং বিষাক্ত গ্যাস নিশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করে ফিলিস্তিনিদের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ড্রোন হামলা ও স্নাইপারের গুলিতে শিশুদের নিহত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর ২ মার্চ থেকে গাজায় ত্রাণ সরবরাহের পথ বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল। এরপর ১৫ মার্চ এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের শিশু তহবিল–ইউনিসেফ জানায়, উত্তর গাজার দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের ৩১ শতাংশ তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। সেখানে অপুষ্টির কারণে শিশুমৃত্যু ব্যাপকভাবে বেড়েছে।

এ ছাড়া ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজায় ব্যাপক হারে সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী ফ্রন্টিয়ার্স-এর গত বছরের এপ্রিলের তথ্য অনুযায়ী, গাজার ৯০ শতাংশের বেশি শিশু সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়েছে। শিশুমৃত্যুর আরেকটি বড় কারণ, শীতের মধ্যে ফিলিস্তিনিদের বারবার বাস্তুচ্যুত হওয়া।

গত বছরের শেষ দিকে ওয়ার চাইল্ড অ্যালায়েন্স ও গাজাভিত্তিক কমিউনিটি ট্রেনিং সেন্টার ফর ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টের একটি প্রতিবেদনে গাজায় ইসরায়েলি আক্রমণের ফলে শিশুদের ওপর যে মারাত্মক মানসিক আঘাত নেমে এসেছে, সে বিষয়টি তুলে ধরা হয়। সংকটাপন্ন শিশুদের পরিচর্যাকারী পাঁচ শতাধিক ব্যক্তির ওপর সমীক্ষা চালিয়ে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই পরিস্থিতিতে ৯৬ শতাংশ শিশু মনে করেছে, তাদের মৃত্যু অত্যাসন্ন।

গাজায় শিশুদের প্রাণহানি নিয়ে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনডব্লিউআরএর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেছিলেন, এই যুদ্ধটা শিশুদের বিরুদ্ধে। এই যুদ্ধটা তাদের শৈশব ও ভবিষ্যতের বিরুদ্ধে।

আবারও স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল

কয়েক মাসের আলোচনার পর মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। চুক্তি অনুযায়ী প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি ১ মার্চ শেষ হয়েছে। এরপর আলোচনা করেও যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি ইসরায়েল ও হামাস। তবে ২ মার্চ যুদ্ধবিরতির মেয়াদ সাময়িকভাবে বাড়ানোর বিষয়ে অনুমোদন দেয় ইসরায়েলের সরকার। সে অনুযায়ী পবিত্র রমজান ও ইহুদিদের ‘পাসওভার’ উৎসব (মিসরে ইহুদিদের দাসত্ব থেকে মুক্তি উদ্‌যাপন) উপলক্ষে আগামী ২০ এপ্রিল পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি চলার কথা ছিল।

সেই যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে আকাশপথে হামলা শুরুর পাশাপাশি বুধবার থেকে উত্তর গাজায় স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। বিষয়টি নিশ্চিত করে গতকাল ইসরায়েলের মুখপাত্র অ্যাভিচে আদরিয়ে এক বিবৃতিতে বলেন, গাজার দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলকে যুক্ত করা সালাহউদ্দিন সড়ক দিয়ে চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সেখানে ‘সীমিত আকারে স্থল অভিযান’ শুরু করা হয়েছে।

উত্তর থেকে দক্ষিণে যেতে চাওয়া এই ফিলিস্তিনিরা মূলত ইসরায়েলের নতুন করে হামলার মুখে আবার ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছেন। মাস দুয়েক আগেই যুদ্ধবিরতির শুরুতে তাঁরা উত্তরে নিজেদের ঠিকানায় ফিরেছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানিয়েছেন, সালাহউদ্দিন সড়ক দিয়ে ফিলিস্তিনিরা গাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় তাঁদের ওপর গুলি চালিয়েছেন ইসরায়েলি সেনারা।

এদিকে গতকাল দক্ষিণ গাজা থেকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে রকেট ছুড়েছে হামাস। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজা থেকে ইসরায়েলে গুশ দান ও হাশফেলা এলাকায় তিনটি রকেট ছোড়া হয়। এর মধ্যে একটি আকাশে থাকতেই ধ্বংস করা হয়েছে। আর দুটি রকেট উন্মুক্ত স্থানে পড়েছে।

শিশুদের রক্ষায় যুদ্ধবিরতি পুনর্বহাল করতে হবে

ইসরায়েলের এই নৃশংসতা বন্ধে ‘নৈতিক’ ও ‘আইনগত’ দায়িত্ব পালনের জন্য বিশ্বসম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে গাজাবিষয়ক আরব-ইসলামিক এক্সট্রাঅর্ডিনারি সামিটের মন্ত্রিপর্যায়ের কমিটি। গতকাল এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়ে তারা বলেছে, বেসামরিক লোকজন বসবাস করেন এমন এলাকায় সরাসরি বোমা হামলা আঞ্চলিকভাবে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার হুমকি বাড়াবে। আগ্রাসন বন্ধে বিশ্বসম্প্রদায়কে ইসরায়েলের ওপর চাপ দেওয়ার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

যুদ্ধ নতুন করে শুরু হওয়ায় গাজায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত শিশুরা আবার নতুন করে সহিংসতার মুখে পড়েছে বলে উল্লেখ করেছে ইউনিসেফ। এক বিবৃতিতে সংস্থাটির প্রধান ক্যাথরিন রাসেল বলেছেন, গাজার শিশুদের রক্ষার জন্য যুদ্ধবিরতি অবিলম্বে পুনর্বহাল করতে হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d