‘গাজায় কোনো শৈশব নেই’, নিহত শিশুর সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি
তখন গাজায় যুদ্ধ সবে শুরু হয়েছে। ৯ বছরের খালেদ জৌদেহ অকল্পনীয়ভাবে ক্ষতির মুখে পড়ে। তার মা-বাবা, বড় ভাই, ছোট্ট বোনসহ স্বজনরা নিজ বাড়িতে ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত হন। পরবর্তী মাসগুলোতে খালেদ সাহসে বুক বাঁধার চেষ্টা করেছে। তার চাচা মোহাম্মদ ফারিস তাকে আশ্রয় দেন। খালেদ এখন ৭ বছরের তামেরের দেখভালের সামর্থ্য রাখে। তামেরও তার মতো। গত ২২ অক্টোবর বিমান হামলায় পরিবারের সব সদস্য নিহত হওয়ার পর তামের একা বেঁচে আছে। ওই হামলায় তার পা ও পিঠের হাড় ভেঙে যাওয়ায় প্রায়ই যন্ত্রণায় কাতরায়, কান্না করে।
শনিবার দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এভাবেই গাজার শিশুদের জীবনে নেমে আসা দুর্বিষহ কষ্টের চিত্র তুলে ধরা হয়। মোহাম্মদ ফারিস মার্কিন সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, কান্না করলে খালেদ সব সময়ই ছোট্ট তামেরকে সান্ত্বনা দেয়। সে বলে, ‘মা ও বাবা বেহেশতে আছেন। তারা শুনলে কষ্ট পাবেন, তুমি তাদের জন্য কাঁদছো।’ যখন রাতভর ইসরায়েলের নির্মম বিমান হামলা শুরু হয়, তখন খালেদ প্রায়ই কাঁপতে থাকে; দৌড়ে চাচার কাছে ছুটে যায়।
ছোট্ট এ দুই ভাগ্যাহতের স্বপ্ন সময়ের জীবন ও আতঙ্কের মধ্যে বসবাস ইসরায়েলের আরেকটি হামলায় শেষ হয়ে যায়। গত ৯ জানুয়ারি তাদের বাড়িতে ওই হামলা হয়। এদিন খালেদ, তামের ছাড়াও তাদের দুই বছর বয়সের চাচাতো ভাই ও আরও তিন স্বজন নিহত হন।
এ আখ্যানের মধ্য দিয়ে গাজায় ১০ মাসের যুদ্ধ কীভাবে শিশুদের জীবনে অস্বাভাবিক পরিণতি নিয়ে এসেছে, তারই এক করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে। গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার জেরে ইসরায়েল ঘনবসতিপূর্ণ গাজায় যে পাল্টা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, তা এ শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ বোমা হামলা। আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেসামরিক লোকজনকে সুরক্ষা দেওয়া ইসরায়েলের দায়িত্ব। যদি হামাস বেসামরিক লোকজনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে, সে ক্ষেত্রেও এমনটা করতে হবে।
কার্যত গাজার শিশুরা নানাভাবে ভোগান্তিতে পড়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, যুদ্ধে যে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, তার মধ্যে আনুমানিক ১৫ হাজার জন ১৮ বছরের কম বয়সী। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, আরও অন্তত ১৯ হাজার শিশু এতিম হয়েছে। প্রায় ১০ লাখ শিশু বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সংস্থাটির মুখপাত্র জনাথন ক্রিক্স বলেন, শিশুদের জন্য গাজা এখন বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর স্থান।
গাজায় অধিকাংশ শিশুর বাস ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে, যেখানে গাদাগাদি করে বহু লোকের বসবাস। এসব স্থানে বিশুদ্ধ পানি ও সুষ্ঠু পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই। হাজার হাজার শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে এবং অনাহারে মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে। পোলিওসহ নানা ভয়ংকর রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে গত শুক্রবার পোলিওর টিকা দেওয়ার জন্য আবারও যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।
ইউনিসেফ মুখপাত্র ক্রিক্স কয়েক মাস আগে গাজায় ভ্রমণ করেন। তিনি বলেন, তিনি কদাচিৎ কোনো শিশুকে হাসতে দেখেছেন। অধিকাংশ সময়েই তিনি দেখেন, শিশুরা তাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের কাজে সহায়তা করছে; তারা খাবার ও পানি সংগ্রহের চেষ্টা করছে। তিনি পাঁচ বছরের এক শিশুকে পানির জগ নিয়ে যেতে দেখেছেন।
যুদ্ধবিরতি অতিসন্নিকটে– বলছেন বাইডেন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে একটি যুদ্ধবিরতি সন্নিকটে পৌঁছেছেন তারা। তিনি বলেন, একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর বিষয়ে তিনি ‘আশাবাদী’। তেহরানে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার জেরে ইসরায়েলে ইরানের হামলার হুমকির মধ্যে তিনি এ তথ্য জানালেন। ইরান বলেছে, কেবল একটি যুদ্ধবিরতিই পারে ইসরায়েলে হামলা স্থগিত করতে।