International

গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে শঙ্কা, হামলা জোরালো করেছে ইসরাইল

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইসরাইলের মন্ত্রিসভায় যে প্রস্তাব অনুমোদন হওয়ার কথা তা এখনো হয়নি, এতে শঙ্কা বাড়ছে। একই সঙ্গে গাজায় হামলা আরও তীব্র করেছে ইসরাইল। 

বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। 

প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মন্ত্রিসভার ভোট বিলম্বিত করেছেন। হামাস চুক্তিতে শেষ মুহূর্তের পরিবর্তন চাইছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। 

বৃহস্পতিবার এই প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য নির্ধারিত ছিল। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আজ শুক্রবার গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদন হতে পারে। আর চুক্তি কার্যকর হতে পারে আগামী রোববার ১৯ জানুয়ারি। 

এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, অন্যরকম পরিণতি তৈরি হচ্ছে এবং তিনি নিশ্চিত যে, যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা অনুযায়ী রোববার থেকে শুরু হবে।

প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, যদিও ইসরাইলি আলোচকরা কয়েক মাস ধরে আলোচনার পর এ চুক্তিতে সম্মত হয়েছেন, তবে নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা এবং সরকার কর্তৃক অনুমোদিত না হওয়া পর্যন্ত এটি বাস্তবায়ন করা যাবে না।

হামাস জানিয়েছে, তারা চুক্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে বিবিসির কাছে থাকা তথ্যে বোঝা যায়, তারা চুক্তির অধীনে মুক্তি পেতে যাওয়া ফিলিস্তিনি বন্দিদের তালিকায় তাদের কিছু সদস্যকে যুক্ত করার চেষ্টা করছে।

হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, বুধবার একটি চুক্তি ঘোষণার পর গাজায় ইসরাইলি হামলায় ৯০ জনেরও বেশি নিহত হয়েছেন। 

আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির ঘোষণার পর থেকে ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকাজুড়ে আক্রমণ তীব্র করেছে। 

অবরুদ্ধ গাজার চিকিৎসা সূত্রের বরাত দিয়ে ওয়াফা সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, এই হামলায় নিহতের সংখ্যা এখন প্রায় ৯০ জনে দাঁড়িয়েছে। গত দুদিন ধরে উত্তর গাজায় বারবার ইসরাইলি হামলা হয়েছে, জাবালিয়ায় একটি হামলায় কমপক্ষে ২০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার সকালে বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা আগে নেতানিয়াহু হামাসের বিরুদ্ধে শেষ মুহূর্তের ছাড় আদায়ের চেষ্টা করার অভিযোগ করেন। 

তার কার্যালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, হামাস চুক্তির সমস্ত শর্ত গ্রহণ না করা পর্যন্ত মন্ত্রিসভা বৈঠক করবে না।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন বলেছেন, এই ধরনের চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে, এই বিলম্ব আশা করাই যায়। এটা মোটেও অবাক করার মতো কিছু নয়। এটি এত চ্যালেঞ্জিং এবং এত জটিল প্রক্রিয়া যে, আলোচনার মধ্যে আপনি একটি অকার্যকর পরিণতি পেতে পারেন।

ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমরা কথা বলার সময় সেই অকার্যকর পরিণতিটি ঠিক করছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আত্মবিশ্বাসী যে, চুক্তিটি রোববার পরিকল্পনা অনুসারে কার্যকর হবে এবং তারপর যুদ্ধবিরতি বহাল থাকবে।

ইসরাইলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, চুক্তিটি অনুমোদনের জন্য শুক্রবার মন্ত্রিসভার বৈঠক হওয়ার কথা ছিল এবং অভিযোগ করা সমস্যাটির সমাধান হয়ে গেছে। যদিও এটি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি।

ইসরাইলি মন্ত্রীদের বেশিরভাগই এই চুক্তিকে সমর্থন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তবে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গভির বলেছেন, তার ডানপন্থী দল নেতানিয়াহুর সরকার থেকে বেরিয়ে যাবে, যদি এটি অনুমোদিত হয়।

তিনি বলেন, যে চুক্তিটি রূপ নিচ্ছে, তা একটি বেপরোয়া চুক্তি। এটি যুদ্ধের অর্জনগুলো মুছে ফেলব। তবে চুক্তিটি অনুমোদিত হলে তার ওটজমা ইহুদিত (ইহুদি শক্তি) দল সরকারকে উৎখাত করার চেষ্টা করবে না।

এদিকে, হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, দলটি মধ্যস্থতাকারীদের দ্বারা ঘোষিত চুক্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 

চুক্তির শর্তানুযায়ী প্রথম ছয় সপ্তাহে ইসরাইলি কারাগারে ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময়ে ৩৩ জন জিম্মি নারী, শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তির মুক্তি মিলবে। গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার করা হবে। বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে শুরু করবে এবং প্রতিদিন শত শত ত্রাণবাহী লরিকে এই অঞ্চলে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।

দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায়, যার মধ্যে অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি, সম্পূর্ণ ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার এবং টেকসই শান্তি ফিরে আসা; ১৬তম দিনে শুরু হবে। আর তৃতীয় এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে অবশিষ্ট জিম্মিদের মৃতদেহ ফিরিয়ে আনা এবং গাজার পুনর্গঠন অন্তর্ভুক্ত থাকবে; যা কয়েক বছর সময় নিতে পারে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button